কলকাতা থেকে: নেতাজী ইনডোর স্টেডিয়ামে পাঁচদিনের ‘বাংলাদেশ বিজয় উৎসব’ চলছে মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) থেকে। এ খবর দুই বাংলাতেই জানাজানি হয়ে গেছে।
স্টেডিয়ামের মূল ফটকের ওপর তাকালেই চোখে পড়বে মুক্তিযুদ্ধের চেনা উল্লাস, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মতো বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল কয়েকটি স্থিরচিত্রের কোলাজ। ভেতরে এগোলে দেখা যাবে মাঝারি আকারের দুই-তিনটি ব্যানার। সেগুলোতে উৎসবের লোগো আর জাতির পিতার ছবি। মূল স্টেডিয়ামের ভেতরে ডান দিকটাতে বাংলাদেশের ঐতিহ্য- রাজশাহীর সিল্ক, টাঙ্গাইলের তাঁত, ঢাকাই জামদানি, আর কতো কি!
উৎসবের বিশাল মঞ্চ বসানো হয়েছে স্টেডিয়ামের এক কোণে। সামনে সারি সারি চেয়ার। মাথা তুলে চারপাশে দৃষ্টি ঘোরালে দেখা যায় দর্শকদের বসার আসন। এটাই কলকাতার একমাত্র ইনডোর স্টেডিয়াম। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর নামে এই স্টেডিয়ামের নামকরণ হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকেই উৎসর্গ করেছিলেন ‘তাসের দেশ’ নৃত্যনাট্যটি। স্টেডিয়াম থেকে বেরিয়ে ডানে গেলে আরেক স্টেডিয়াম-ইডেন গার্ডেন্স। সৌরভ গাঙ্গুলি কতো মহাকাব্যই না রচনা করেছেন এখানে।
দুই স্টেডিয়ামের পাশেই আকাশবাণী ভবন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পশ্চিমবঙ্গের ‘অল ইন্ডিয়া রেডিওকেই বলা হয় আকাশবাণী। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পক্ষে ভূমিকা রেখেছিলো রেডিওটি। এখানে প্রচার হতো বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন রেডিও অনুষ্ঠান। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রেরণা জোগানোর ক্ষেত্রে এর অবদানও কম ছিলো না।
আকাশবাণী ভবনের সামনে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের মূর্তি রাখা। সেটা দেখে এগিয়ে গেলে ঢুকে পড়বেন ভারতীয় সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত এলাকায়। এখানকার চারপাশে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে কোনো দোতলা বাড়ি-ঘরও নেই। মোহামেডান ক্লাব, ইস্ট বেঙ্গল ক্লাব, প্রেসক্লাব আছে। সবটাতেই টিনের কিংবা কাঠের ছাদ। এখানে নিয়মটাই এমন। মাথার ওপর ইট-পাথর রাখা যাবে না।
এই সামরিক বাহিনী ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বন্ধুর মতো পাশে দাঁড়িয়েছিলো। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদরদের বিরুদ্ধে। বৃথা যায়নি তাদের লড়াই। বাংলাদেশ তাই স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। শুধু ভারতীয় সামরিক বাহিনী নয়, পশ্চিমবঙ্গের সব বাংলা ভাষাভাষী মানুষ এই স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে যে আত্মত্যাগ রয়েছে, তাকে শ্রদ্ধা জানায়। বিজয় দিবসের প্রাক্কালে এসব বোঝা যায় বাংলাদেশ বিজয় উৎসবে তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখে। ধন্যবাদ রইলো পশ্চিমবঙ্গের প্রতি।
কলকাতা সময়: ০৮৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৫
জেএইচ/আরআই
**কলকাতায় শুরু হলো বাংলাদেশ বিজয় উৎসব
** ‘মমতার অন্তরের একদিকে পশ্চিমবঙ্গ অন্যদিকে বাংলাদেশ’