শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার হলেন টেলিভিশন নির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ডের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ১ সেপ্টেম্বর তার ৮১তম জন্মদিন উদযাপন করেছে সংগঠনটি।
এদিন ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিকভাবে শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ারকে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করা হয়। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান, পথনাটক পরিষদ, অভিনয় শিল্পী সংঘ, ডিরেক্টরস গিল্ড, চিলড্রেন ফিল্ম সোসাইটি, বাংলাদেশ থিয়েটার, সংলাপ গ্রুপ থিয়েটার, টেলিভিশন নাট্যকার সংঘ, আরটিভি প্রভৃতি সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তার সহধর্মিনী মেরী মনোয়ার, কন্যা নন্দিনী মনোয়ার, নাট্যজন মামুনুর রশীদ, চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেন, আতাউর রহমান, নওয়াজিশ আলী খান, সাইদুল আনাম টুটুল, ডিরেক্টরস গিল্ডের নব-নির্বাচিত সভাপতি গাজী রাকায়েত ও সাধারন সম্পাদক এস এ হক অলিক, চয়নিকা চৌধুরী, নাট্যকার সংঘের সভাপতি মেজবাহউদ্দিন সুমন, নাট্যনির্মাতা অনিমেষ আইচসহ আরও অনেকে। অনুষ্ঠানে গুণী এই শিল্পীর সঙ্গে কাটানো স্মৃতি ও অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেন অতিথিরা।
নাট্যজন মামুনুর রশীদ বলেন, ‘সাতদশক ধরে একসঙ্গে আছি। কতো যে স্মৃতি আছে, সেসব বলে এক অনুষ্ঠানে শেষ করা যাবে না। অনেকদিন কেটে যাবে সেসব মধুর স্মৃতিচারণ করতে। তার সঙ্গে যাদের কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তারা জানেন তিনি কতোটা ভালো মাপের মানুষ, কতটা ভালো মাপের একজন শিক্ষক। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন মুস্তাফা মনোয়ার। ’
ডিরেক্টর গিল্ডের সাধারন সম্পাদক এস এ হক অলিক বলেন, ‘মুস্তাফা মনোয়ার, যিনি এমন একজন মানুষ তাকে নিয়ে করা যায় না কোন বিশ্লেষণ। তিনি বাংলাদেশের সংস্কৃতির পাশাপাশি নাটককে করেছেন সমৃদ্ধ। যতোদিন বেঁচে থাকবেন সুস্থ থাকুক ভালো থাকুক। ’
অনুষ্ঠানটির আহ্বায়ক সাইদুল আনাম টুটুল বলেন, “আমি তার নির্দেশনার ‘রক্তকরবী’র সেই ছোট ছেলে। আমি তার কাছ থেকে নাটক তৈরি, সিনেমা তৈরি সব কিছু শিখেছি। তিনি কখনো চোখে আঙুল দিয়ে শেখাতেন না। তিনি শেখাতেন কাজের মাধ্যমে। বুদ্ধি দিয়ে, যুক্তি দিয়ে। ’
চলচ্চিত্র পরিচালক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘এই মহান মানুষটির সবসময় সৃষ্টি উন্মাদনা কাজ করে। আমার কাছে মুস্তাফা মনোয়ারকে সব সময় রবি ঠাকুরের গান ও অবনী ঠাকুরের ছবির মতো লাগে। ১৯৭৪ সালের আগে ঈদে কখনো নাটক দেখানো হতো না। তিনি প্রথম ঈদে দর্শকদের নাটক দেখানোর পরিকল্পনা করেন। ভালো থাকুন, একশো বছর বেঁচে থাকুন। ’
নওয়াজিশ আলী খান বলেন, ‘মুস্তাফা মনোয়ার, যিনি আমাদের শিক্ষক, যিনি আমাদের গাইড, যিনি আমাদের বন্ধু, যিনি আমাদের ভাই। যিনি আমাদের জীবনে এত সম্পর্কে জড়িয়ে আছেন তাকে নিয়ে কি আর বলবো! সত্যি কথা হচ্ছে, তাকে এই প্রজন্মের অনেক দরকার। তিনি বেঁচে থাকুক শতবর্ষ। ’
ডিরেক্টরস গিল্ডের নব-নির্বাচিত সভাপতি গাজী রাকায়েত মুস্তাফা মনোয়ারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘মুস্তাফা মনোয়ার স্যার যদি ডিরেক্টরদের একটি সংগঠন দরকার কথাটা না বলতেন তাহলে আজকের এই ডিরেক্টরস গিল্ড গঠন করা সম্ভব হতো না। এই দেশের জন্য এই দেশের মানুষের জন্য তার অবদান অপরিসীম। আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ। ’
পরিচালক অনিমেষ আইচ বলেন, ‘কিছু কিছু মানুষের দিকে তাকালে বলে দিতে হয় না মানুষটি কে, কি তার পরিচয়। মুস্তাফা মনোয়ার এমনি একজন ব্যক্তি, তার পদচারনা যেদিকে হবে সেদিকেই আলো ছড়াবে। দেশের প্রত্যেকটি মানুষের উচিত এই গুণী শিল্পীকে সম্মান জানানো। ’
নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নীপা বলেন, ‘আক্ষরিক অর্থে তিনি আমার গুরু। আমি যখন নাচতে পারতাম না, শুধু বসে বসে নাচ দেখতাম নিজের কাছে খুব খারাপ লাগতো। তখন তিনি আমাকে ডেকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘তুমি আজ অন্যদের নাচ দেখছো। এমন সময় আসবে তুমি নাচবে বাকিরা সকলে বসে দেখবে। ’ তার এই একটি কথায় আজ আমি শিল্পী হতে পেরেছি। ভালো থাকুন স্যার। ’
ডিরেক্টরস গিল্ডের আয়োজনে এই অনুষ্ঠানের শেষ অংশে জন্মদিনের কেক কেটে তাকে সম্মান জানান উপস্থিত সকলে। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আলী ইমাম।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৬
টিএস/এসও