ঢাকা, সোমবার, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৯ জুলাই ২০২৪, ২২ মহররম ১৪৪৬

বিনোদন

লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে সিনেমা ‘মাটি’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৮
লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে সিনেমা ‘মাটি’ মাটি সিনেমার পোস্টার

কলকাতা: চলতি বছর বাংলা ভাগের একাত্তর বছর। ঐতিহাসিক এই ট্র্যাজেডি আজও দুই বাংলা বহন করে চলেছে। আর সেই ট্র্যাজেডিকে স্মরণ করে লেখিকা লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে সিনেমা ‘মাটি’। 

শুক্রবার (১৩ জুলাই) সিনেমাটি মুক্তি পায়। তার আগে বৃহস্পতিবার (১২ জুলাই) অতিথি ও সেলিব্রেটিদের নিয়ে কলকাতার এক হলে দেখানো হয় প্রিমিয়ার শো।


 
সিনেমার গল্পে দেখা যাবে, মেঘলার জন্ম কলকাতাতে। কলকাতার কলেজে দেশভাগ নিয়ে গবেষণা করেন মেঘলা। তিনি ছিন্নমূল পরিবারের মেয়ে। মন থেকে মেনে নিতে পারেন না দুই বাংলার ভাগ। মেঘলা মনে করেন দেশ ভাগের বিষয় শুধু বইয়ের পাতায় আবদ্ধ নয়, ইতিহাসের পরতে পরতে থাকে, তাকে খুঁজে বের করে নিতে হয়।
 
মেঘলার আদি বাড়ি বাংলাদেশে। জমিদার চৌধুরী পরিবারের মেয়ে মেঘলা। ৭১-এর আগে গোটা পরিবার কলকাতায় চলে এলেও আসেনি ঠাকুমা কুমোদিনী। ভিটে ছেড়ে এক পা’ও তিনি নড়েননি। এটাই তার মাটি, এটাই তার দেশ। এরপর তার মৃত্যু হয়। মেঘলা কোনোদিন বাংলাদেশে যাননি। হঠাৎ সুযোগ এলো। যে ভিটেতে তার বাপ-ঠাকুরদার জন্ম সেই গ্রামে ঠাকুরদার অন্তরঙ্গ বন্ধুপ্রতীম তাজউদ্দিনের মেয়ে জিম্মি পড়াশুনা করেন বিশ্ব ভারতীতে। তার হাত ধরে মেঘলা পান কুমোদিনীর ডায়েরি। এই ডায়েরি হয়ে ওঠে তার প্রাণ, তার গাইডবুক। জিম্মি হয়ে ওঠেন ভালো বন্ধু। সেই বন্ধুর বিয়েতে ভিটেমাটি দেখতে বাংলাদেশে আসেন মেঘলা।

প্রিমিয়ার শো’তে পাওলি দম
ভিটে দেখার তাগিদে স্বামী পরিবার ছেড়ে একাই প্লেনে রওনা দেন মেঘলা। এখানে তাকে রিসিভ করতে আসেন জামির। বিমানবন্দর থেকে গ্রামে আসার আগ পর্যন্ত জামির ঘুরে দেখান ঢাকা। শহীদ বেদীতে মেঘলা গাড়ি দাঁড় করান, ফুল দেন।

ইছামতী পার হয়ে মেঘলা আসেন তার গ্রামে। জিম্মির গায়ে হলুদ শেষে বসতভিটা দেখতে যান তিনি। ছাদে নিয়ে গিয়ে জিম্মি দেখান তাকে পূর্ব-পুরুষের বসতভিটা। দু’চোখে জল গড়িয়ে পড়ে তার। মেঘলা জানতে চান এখন কারা থাকে এখানে। জিম্মি জানান ‘তোকে যে আনতে গিয়েছিল সেই জামির থাকে এখানে। ’
 
এখান থেকেই শুরু হয় ক্লাইম্যাক্স। মেঘলা জানতে পারেন জামিরের ঠাকুরদাই তার ঠাকুমা কুমোদিনীকে খুন করে ভিটেটা দখল করেছিলেন। মনে মনে রাগ, ঘৃণা জন্মায় জামিরের উপর। সে রাগ একসময় জামিরের উপর উগরেও দেন তিনি।
 
জামির বাংলাদেশি। থাকতেন বিদেশে। পেশায় ডাক্তার। বউ-বাচ্চা ছেড়ে চলে আসেন বাংলাদেশে। তার চিন্তা কিছু করতে হবে দেশের জন্য। জামিরের বাবা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। এক সময় মেঘলার ঠাকুমা চৌধুরী পরিবারের জমিদার গিন্নী হয়ে গ্রামের যেসব সামাজিক কাজ করতেন আজ তা করেন জামির ও তার মা।  

জামির তাকে ঘুরে দেখান তাদের বসতবাড়ি, দুর্গা মন্দির। আজও সেই মন্দিরে গ্রামের মানুষেরা পূজা করে। করেছেন কুমোদিনীর নামে হাসপাতাল, মেয়েদের স্কুল। মেঘলা বুঝতে পারেন বিক্ষিপ্ত ঘটনার শিকার ঠাকুমা। আজও ঠাকুমার নামে চলছে সবকিছু।
 
জামিরের আম্মা মেঘলাকে কুমোদিনীর গল্প শোনান। তিনি জানান, তার আসল ভিটেমাটি কলকাতায় রাজাবাজারে। দেশ ভাগের যন্ত্রণা তাকেও কুড়ে কুড়ে খায়।  

মেঘলা বুঝতে পারেন অপ্রিয় কিন্তু বাস্তব ঘটনা দুই পারের মানুষকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। তা দিয়ে একটা দেশ, গোটা দেশের মানুষ, সেখানের আকাশ-বাতাসকে বিচার করা ঠিক নয়। তবে এখানেই শেষ নয়, চলতে থাকে একটার পর একটা ক্লাইমেক্স। যাওয়ার দিন মেঘলাকে ছাড়তে আসেন জামির। উপহার হিসেবে তুলে দেন বাংলাদেশের মাটি। মেঘলার চোখ আবেগে ছলছল করে। মেঘলার ইচ্ছা নেই ফেরার। তবু তাকে ফিরতে হয়-এ দেশ এখন আর তার নয়।
 
সিনেমাটির বেশিরভাগ শুটিং হয়েছে বাংলাদেশে। জামিরের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অসমীয় অভিনেতা আদিল হোসেন ও মেঘলার ভূমিকায় পাওলি দম। এছাড়া আছেন অপরাজিতা আঢ্য, মোনামি ঘোষ প্রমুখ।  

মাটি পরিচালনা করছেন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়, সঙ্গে ছিলেন অপর পরিচালক শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রযোজনা করেছে ম্যাজিক মোমেন্টস মোসান পিকচারস প্রাইভেট লিমিটেড। সুর দিয়েছেন দেবজ্যোতি মিশ্র।  

লীনা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, এটা কোনো বায়োপিক নয়। অনেকদিন আগে আমার লেখা গল্প। সবার উপরে যে মানবধর্ম সেটাই দেখানোর চেষ্টা করেছি এই সিনেমার মাধ্যমে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, ১৩ জুলাই, ২০১৮
ভিএস/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।