ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

ঈদেও খরা খুলনার সিনেমা হলে!

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৮
ঈদেও খরা খুলনার সিনেমা হলে! খুলনার সিনেমা হলগুলোতে নেই আগের আমেজ/ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: একসময় ঈদের এক মাস আগে থেকেই খুলনার সিনেমা হলগুলো নতুন ছবির পোস্টারে ছেয়ে যেত। বাদ্য বাজিয়ে কান ঝালাপালা করে চলতো প্রচার-প্রচারণা। বিশেষ করে নতুন ছবি বিভিন্ন গান-সংলাপ বাজিয়ে মানুষজনকে আকৃষ্ট করা হতো। আর ঈদের ছুটির দিনগুলোয় টিকিটের জন্য হলের সামনে দেখা যেত দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শকের দীর্ঘ লাইন।

কিন্তু এসব এখন অতীত হতে চলেছে, হাল সময়ে হলগুলোর সামনে গেলে স্মৃতিকাতর হওয়া ছাড়া যেন কিছুই পাওয়া যায় না।

যেমনটি হতে হয়েছে শনিবার (২৫ আগস্ট) খুলনার সবথেকে নামকরা সিনেমা হল ‘শঙ্খ’ সিনেমা হলের সামনে গিয়ে।

সেসময় হলটিতে দুপুরের শো চলছিলো।

অভিজাত এ সিনেমা হলের ম্যানেজার রেজাউল করীম বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের সিনেমার সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খানের ‘ক্যাপ্টেন খান’ ছবিটি ঈদের দিন থেকে হলে চালানো হয়েছে। কিন্তু তাতেও দর্শক সমাগম বেশি বাড়েনি। গত বছরও এর চেয়ে বেশি দর্শক হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

তিনি বলেন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রীত প্রেক্ষাগৃহ হওয়ায় তুলনামূলক আমরা কিছু দর্শক পেয়েছি। কিন্তু অন্য হলগুলোতে তাও হয়নি।

টিকিটের মূল্য কত জানতে চাইলে তিনি বলেন, শ্রেণিভেদে ৬০, ৮০ ও ১২০ টাকা। শো চলে দুপুর ১২টা, সাড়ে ৩টা, সাড়ে ৬টা ও রাত ৯টা ২০মিনিটে।

শঙ্খ সিনেমা হল/ছবি: বাংলানিউজম্যানেজার জানান, আগের মতো দর্শক না আসায় খুলনার সিনেমা হলগুলো লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এতে ২০টি সিনেমা হলের মধ্যে ১৪টিই বন্ধ হয়ে গেছে। সচল থাকা শঙ্খ, সঙ্গীতা, সোসাইটি, চিত্রালী, জনতা ও লিবার্টি হলের প্রদর্শনী চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। ফলে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে খুলনার বিনোদনের ক্ষেত্র।
আরো পড়ুন>>
** 
ছন্দে ফিরেছে টালিগঞ্জের স্টুডিওপাড়া

চালু থাকা হলগুলোর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, , দর্শক খরায় চালু সিনেমা হলের আয় দিয়ে বিদ্যুৎ বিল ও কর্মচারীদের বেতন পরিশোধও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই লোকসান গুনতে হচ্ছে। এভাবে আর বেশি দিন চললে বাকি হলগুলো টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।

শঙ্খ ছাড়াও বেশ কয়েকটি সিনেমা হল ঘুরে দেখা যায়, হলগুলোতে দর্শক সংখ্যা খুবই কম। যারা আছেন তাদের মধ্যে বড় অংশই হচ্ছে তরুণ-তরুণী। বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী।
খুলনার সিনেমা হল/ছবি: বাংলানিউজ
মহানগরীর খালিশপুরের চিত্রালী সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে আসা দিঘলিয়া উপজেলার পথের বাজার এলাকার মিজান বাংলানিউজকে জানান, শাকিব খান আমার প্রিয় নায়ক। তাই তার ক্যাপ্টেন খান বড় পর্দায় দেখতে এসেছি।

সঙ্গে থাকা তরুণীর অভিব্যক্তি- ঈদের সময় হলে সিনেমা দেখার মজাই আলাদা। ঘোরাঘুরিও হয় সিনেমা দেখাও হয়।

জানা যায়, খুলনার বিভিন্ন উপজেলাসহ মহানগরীতে অন্তত ২০টি সিনেমা হল ছিল। এর মধ্যে মহানগরীর শঙ্খ, সঙ্গীতা, সোসাইটি, চিত্রালী, জনতা, ঝিনুক, পিকচার প্যালেস, উল্লাসিনী, বৈকালী, স্টার, লিবার্টি, মিনাক্ষ্মী, ডুমুরিয়া উপজেলায় নাগমা (বর্তমান শঙ্খমহল), চুকনগরের হিরামণ, তালা উপজেলার ফাল্গুনী, রূপসার উপজেলার রূপ সাগর, পাইকগাছার বাসুরী, কপিলমুনির সোহাগ, সেনহাটির রূপসা ও ফুলতলার শাপলা।

এসব সিনেমা হলের মধ্যে ঝিনুক, উল্লাসিনী, বৈকালী, স্টার, লিবার্টি, মিনাক্ষ্মী, ডুমুরিয়া উপজেলায় শঙ্খমহল, চুকনগরের হিরামণ, তালার ফাল্গুনী, রূপসার উপজেলার রূপ সাগর, পাইকগাছার বাসুরী, কপিলমুনির সোহাগ, সেনহাটির রূপসা ও ফুলতলার শাপলা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। অস্তিত্ব হারিয়েছে স্টার ও বৈকালী সিনেমা হল দু’টি। বর্তমানে নগরীতে শুধুমাত্র শঙ্খ, সঙ্গীতা, সোসাইটি,লিবার্টি,  চিত্রালী ও জনতা- এ ছয়টি হল চালু রয়েছে। চালু থাকা ওইসব হলগুলোরও কার্যক্রম চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।

বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমা হলের মালিকরা বলেন, আমরা ইচ্ছে করে হল বন্ধ করিনি। কিন্তু আগের মতো ভালো মানের ছবি না থাকায় হলে দর্শক আসেন না। এতে লোকসানে পড়ে হল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি।

খুলনার অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠন আব্বাস উদ্দিন একাডেমির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বাচ্চু বাংলানিউজকে বলেন, অবাধ আকাশ-সংস্কৃতি ও ভালো মানের সিনেমা তৈরি না হওয়া হলের দর্শক কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। এছাড়া হলের পরিবেশে অব্যবস্থাপনা, পাইরেসি, অশ্লীলতার কারণেও দর্শক সিনেমা হলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।

তিনি দর্শক ফিরিয়ে আনতে ভালো মানের ছবি ও আধুনিকতম চলচ্চিত্র হল (সিনেপ্লেক্স) তৈরির দাবি জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫ , ২০১৮
এমআরএম/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।