ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

রাজশাহীতে প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোরকে স্মরণ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০২১
রাজশাহীতে প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোরকে স্মরণ

রাজশাহী: বাংলা গানের কিংবদন্তি শিল্পী এন্ড্রু কিশোরের প্রয়াণ দিবস মঙ্গলবার (০৬ জুলাই)। ১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বরে রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

বাংলা সিনেমার প্লেব্যাক সম্রাট গত বছরের ৬ জুলাই সন্ধ্যায় ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে রাজশাহীতে বোনের বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন।  

১৫ জুলাই রাজশাহী সার্কিট হাউস সংলগ্ন খ্রিস্টান কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সুরের জাদুতে সংগীতপ্রেমীদের মাতিয়ে রেখে না ফেরার দেশে চলে যান তিনি। প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাভরে তাকে স্মরণ করা হচ্ছে।

করোনা পরিস্থিতির কারণে আজ তেমন বড় কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই। তবে এন্ড্রু কিশোরের প্রতিষ্ঠিত রাজশাহীর ওস্তাদ আব্দুল আজিজ বাচ্চু স্মৃতি সংসদ ও পারিবারিকভাবে প্রার্থনাসহ বিভিন্নভাবে স্মরণ করা হচ্ছে বাংলাদেশের এই প্লেব্যাক সম্রাটকে।

প্রয়াত কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোরের প্রথম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার সকালে মহানগরীর অলোকার মোড়ে ও শিরোইল এলাকায় খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়।

এন্ড্রু কিশোর প্রতিষ্ঠিত ওস্তাদ আব্দুল আজিজ বাচ্চু স্মৃতি সংসদের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অসহায় মানুষের মাঝে এই খাদ্যসামগ্রী ও মাস্ক বিতরণ করা হয়।

এতে এন্ড্রু কিশোরের স্ত্রী লিপিকা এন্ড্রু ও তার কন্যা সজ্ঞা এন্ড্রুসহ শিল্পীর পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন। বিকেল রাজশাহী সিটি চার্চে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বল্প পরিসরে প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। এছাড়া রাতে ভার্চ্যুয়াল স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে।

এন্ড্রু কিশোরের বাবা ক্ষীতিশ চন্দ্র বাড়ৈ এবং মাতা মিনু বাড়ৈ রাজশাহী মহানগরীর বুলনপুর মিশন গার্লস হাই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। মায়ের কাছেই তার পড়াশোনার হাতেখড়ি।

তার মা ছিলেন সংগীত অনুরাগী, তার প্রিয় শিল্পী ছিলেন কিশোর কুমার। প্রিয় শিল্পীর নামানুসারে সন্তানের নাম রাখেন কিশোর। মায়ের স্বপ্নপূরণ করতেই সংগীতাঙ্গনে পা রাখেন এন্ড্রু কিশোর। আব্দুল আজিজ বাচ্চুর অধীনে প্রাথমিকভাবে সংগীতে পাঠ গ্রহণ শুরু করেন এন্ড্রু কিশোর। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর নজরুল সংগীত, রবীন্দ্র সংগীত, আধুনিক, লোকসংগীত ও দেশাত্মবোধক গানের শিল্পী হিসেবে রাজশাহী বেতারে তালিকাভুক্ত হন।

এন্ড্রু কিশোর প্লেব্যাক শুরু করেন ১৯৭৭ সালে আলম খান সুরারোপিত ‘মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রের ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে।

তার রেকর্ডকৃত দ্বিতীয় গান বাদল রহমান পরিচালিত ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’ চলচ্চিত্রের ‘ধুম ধাড়াক্কা’। তবে এ জে মিন্টু পরিচালিত ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘প্রতিজ্ঞা’ চলচ্চিত্রের ‘এক চোর যায় চলে’ গানটি গেয়ে শ্রোতাপ্রিয়তা লাভ করেন। ‘বড় ভালো লোক ছিল’ (১৯৮২) চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন এন্ড্রু কিশোর। মহিউদ্দিন পরিচালিত এই চলচ্চিত্রে সৈয়দ শামসুল হকের লেখা ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’ গানটিতে কণ্ঠ দেন তিনি। এ গানের জন্য শ্রেষ্ঠ পুরুষ কণ্ঠশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান এই প্লেব্যাক সম্রাট।

১৯৮৪ সালে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের কথা ও সুরে ‘নয়নের আলো’ চলচ্চিত্রের তিনটি গানে কণ্ঠ দেন। গানগুলো হলো—‘আমার সারা দেহ খেওগো মাটি’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন’ ও ‘আমার বুকের মধ্যে খানে’। এমন অসংখ্য চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন এই শিল্পী, যা এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। বাংলা গানের কিংবদন্তি এই সংগীতশিল্পী তাই ‘প্লেব্যাক সম্রাট’ নামে পরিচিত। বাংলা চলচ্চিত্রের গানে তাকে বলা যেতে পারে এক মহাসমুদ্র। ১৫ হাজারেরও বেশি গান কণ্ঠে ধারণ করা এই কিংবদন্তি শিল্পী বেঁচে না থাকলেও শ্রোতাদের মণিকোঠায় জীবন্ত হয়ে আছেন আজও।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০২১
এসএস/জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।