ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

যৌথ জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

‘কিংবদন্তি সুরকার’ কমল দাশগুপ্তের অবিস্মরণীয় অবদান আমরা ভুলে যাচ্ছি 

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২১
‘কিংবদন্তি সুরকার’ কমল দাশগুপ্তের অবিস্মরণীয় অবদান আমরা ভুলে যাচ্ছি  কমল দাশগুপ্ত ও ফিরোজা বেগম

মৌলভীবাজার: গানই প্রাণ। নিভৃত মনের সুস্থতার ওষুধ।

সঙ্গীত সুধায় যারা মত্ত থাকেন তারা অপেক্ষাকৃত মননশীল মানুষ। সৃজনশীল মানুষের রূপরেখায় অনেকটা বিনির্মিত। একটি গানের ৩ জন স্রষ্টা থাকেন। গীতিকার, সুরকার এবং শিল্পী।

কোনো গান যদি সর্বজনবিদিত বা জনপ্রিয় হয় তাহলে ৩ জনেই সমান সাফল্য নিহিত। কারো অবদানই ছোট নয়। কিন্তু আমরা অনেক সঙ্গীতপ্রেমীদের চিরঅকৃতজ্ঞের মতো শুধু শিল্পীর নামটাই স্মরণে রাখি। গীতিকার এবং সুরকারকে অনায়সে ভুলে যাই। এটি নীতিগতভাবে কখনো সঙ্গত নয়। অন্তত নিজের পছন্দের তালিকার প্রিয় গানগুলোর ক্ষেত্রে।  যারা পুরনো দিনের গান পছন্দ করেন তারা এবং গানের পেছনের খোঁজ-খবর রাখেন তারাও আজ কিংবদন্তিতুল্য কালজয়ী সুরকার কমল দাশগুপ্তকে ভুলে গেছেন।  

তিনি ছিলেন ৪০ এবং ৫০ এর দশকের বাংলা গানের জগতের অত্যন্ত জনপ্রিয় সুরকার। বাংলা গানের সুরের আকাশে তিনি তখন নীল ধ্রুবতারা। তার মতো গানের এত সুরের বৈচিত্র্য সংযোজন করা তৎকালীন সময়ে খুব কম সুরকারের পক্ষেই সম্ভব হয়েছিল। উনাকে শুধু সুরকার বললে উনার গৌরবময় অবদানকে ছোট করে দেখা হবে, উনি সঙ্গীতের সফল সংগঠন। একটি গান লেখার উৎসাহ দান থেকে শুরু রেকর্ডিং পর্যন্ত তারই হাত ধরে সু-সম্পন্ন হয়েছে।  তিনি দিনের পর দিন একেক জন শিল্পীদের দিয়ে গান তোলাতেন, অজস্রবার করার পর তারপরই রেকর্ড করতেন। মাইক্রোফোনের ব্যবহারও তিনি শিল্পীদের দেখিয়ে দিতেন। শিল্পী একেকটি গানে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহারে নতুনত্ব এনে তিনি প্রতিটি গানকে কালজয়ী করেছেন।  

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কমল দাশগুপ্তের প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে তাকে দিয়ে অসংখ্য গান সুরারোপ করিয়েছিলেন। কমল দাশগুপ্ত ছিলেন নজরুলগীতির অন্যতম সুরকার। তিনিই আমাদের উপমহাদের প্রখ্যাত সুর সাধক। সঙ্গীত জগতের প্রবাদপুরুষ।  

কমল দাশগুপ্তের সংস্পর্শে এসে একেক শিল্পী তারকায় সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন। প্রতিটি গানই এককটি রত্ন হয়ে উঠেছিল। সেসব গান গান আজ আমাদের মুখে মুখে। আমরা গুণগুণ করে গেয়ে উঠি। কিন্তু কখনোই মনে করি না, এই গানের প্রাণদাতা কে? 

কমল দাশগুপ্ত অসংখ্য, অজস্র গানে সুর দিয়ে গানটিকে জনপ্রিয় করেছেন। সেগুলো ভেতর থেকে বাছাইকৃত পছন্দের ১৫টি গানের তালিকা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
 
১) আমি যার নূপুরের ছন্দ (নজরুলগীতি)
 
২) এমনি বরষা ছিল সেদিন (গীতিকার- প্রণব রায়, শিল্পী- মাধুরী চট্টোপাধ্যায় / ফিরোজা বেগম)

৩) আমি বনফুল গো (নজরুলগীতি)

৪) মনে পড়ে আজ সে কোন জনমে (নজরুলগীতি)

৫) ওরে নীল যমুনার জল (নজরুলগীতি)

৬) তুমি হাতখানি যবে রাখো মোর হাতের ’পরে (নজরুলগীতি)

৭) কতদিন দেখিনি তোমায় (গীতিকার- প্রণব রায়, শিল্পী- মান্না দে) 

৮) পৃথিবী আমারে চায় (গীতিকার- মোহিনী চৌধুরী, শিল্পী- সত্য চৌধুরী/ অনুপ ঘোষাল)

৯) আমি দূরন্ত বৈশাখী ঝড় (গীতিকার- মোহিনী চৌধুরী, শিল্পী- জগন্ময় মিত্র) 

১০) কতদিন দেখিনি তোমায় (গীতিকার- প্রণব রায়, শিল্পী- কমল দাশগুপ্ত / ফিরোজা বেগম / মান্না দে)

১১) মেনেছি গো হার মেনেছি (গীতিকার- সুবোধ পুরকায়েস্থ, শিল্পী- জগন্ময় মিত্র / মান্না দে)

১২) সেদিন নিশীথে বরিষণ শেষে (গীতিকার- সুবোধ পুরকায়েস্থ, শিল্পী- হেমন্ত মুখোপাধ্যায়)

১৩) দুটি পাখি দুটি তীরে (গীতিকার- গিরিন চক্রবর্তী, শিল্পী- তালাত মাহমুদ)

১৪) ঘুমের ছায়া চাদের চোখে (গীতিকার- প্রণব রায়, শিল্পী- তালাত মাহমুদ)

১৫) এই কীগো শেষ দান (গীতিকার- প্রণব রায়, শিল্পী- ফিরোজা বেগম / অনুপ ঘোষাল)

কমল দাশগুপ্তের সুর করা গানগুলোর বয়স প্রায় ৮০/৮৫ বছর। এতদিন পরও কেন তার গান গানও আজো সমান জনপ্রিয়? কেন তার গানগুলো আজও আমাদের মনে ঘুরে ফিরে আসে? কী সেই জাদু রয়েছে তার প্রতিটি গানে?

আজ ২৮ জুলাই আমাদের বাংলাগানের প্রবাদপুরুষ কমল দাশগুপ্তের জন্মদিন। একইসঙ্গে উনার স্ত্রী নজরুলগীতির কিংবদন্তিতূল্য শিল্পী ফিরোজা বেগমেরও জন্মদিন। দুজনেই আজ অবর্তমান। কিন্তু তাদের প্রতিটি অনবদ্য সৃষ্টি আমাদের হৃদয়ে চিরকাল সুরের অশেষ সুধা ছড়াবে।   

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫২ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২১
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।