ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

ভিউ দিয়ে নাটকের মান নির্ণয় করা যৌক্তিক নয়: সোহেল আরমান

রাবেল আহমেদ, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২১
ভিউ দিয়ে নাটকের মান নির্ণয় করা যৌক্তিক নয়: সোহেল আরমান নির্মাতা সোহেল আরমান

বর্তমান সময়ের আলোচিত নির্মাতা সোহেল আরমান ১৯৯২ সালে ‘সবুজের হলুদ ব্যাধি’ নাটক রচনার মধ্য দিয়ে শোবিজে পা রাখেন। বর্তমানে তিনি চলচ্চিত্র ও নাট্য পরিচালক, চিত্রনাট্যকার এবং গীতিকবি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

অভিনয়েও তিনি সপ্রতিভ। অসংখ্য দর্শকনন্দিত নাটক রচনা ও পরিচালনা করেছেন তিনি। তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র 'এইতো প্রেম'। সোহেল আরমান প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক আমজাদ হোসেনের ছোট ছেলে। সম্প্রতি তিনি তার ব্যস্ততা ও নাটকের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন বাংলানিউজের সঙ্গে। পাঠকদের জন্য এর চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।  

বাংলানিউজ: এবারের ঈদে আপনার নির্মিত নাটকগুলো থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
সোহেল আরমান: গেল ঈদে আমার নির্মিত ‘অন্য এক প্রেম’, ‘না হবে না কিছুতেই’ এবং ‘ভালোবাসা প্রমাণিত’ এই তিনটি নাটক টেলিভিশনে প্রচার হয়। তিনটি নাটক থেকেই দর্শকদের ভালো মন্তব্য পাচ্ছি। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে নাটক ‘অন্য এক প্রেম’।  
বাংলানিউজ: বেশ লম্বা সময় ধরে আপনি মিডিয়ায় আছেন। বর্তমান সময়ের নাটক নিয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কি?
সোহেল আরমান: খুব অল্প বয়সে মিডিয়ায় আসায় একটা দীর্ঘ সময় এ জগতে পার করছি। আমি বিভিন্ন ফরমেটের চেঞ্জগুলো দেখেছি। একটা সময় শুধু বিটিভির জন্য নাটক নির্মাণ হতো। তখন নাটকের গল্প, নির্মাণ ছিল একরকম। আর এখন অনেক চ্যানেল এবং অনলাইন প্লাটফর্মের জন্য প্রচুর কাজ হচ্ছে। সেইসঙ্গে বর্তমান সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাট্যকাররা নাটকের গল্প, নির্মাণেও অনেক পরিবর্তন এনেছেন। ভালো গল্পের পাশাপাশি মন্দ গল্পের নাটকও হচ্ছে অনেক। তবে আমি মনে করি ভালো গল্পের নাটক সবসময়ই দর্শকের কাছে সমাদৃত হয়।
বাংলানিউজ: এইয়ে আপনি অনলাইন প্লাটফর্মের কথা বললেন সেখানে বিশেষ করে ইউটিউবে অনেক সময় সাধারণ মানের গল্পের নাটকও বেশি ভিউ হচ্ছে। বিষয়টা কিভাবে দেখেন? 
সোহেল আরমান: এরকমটা হচ্ছে। তবে ভিউ দিয়ে কখনো নাটকের মান নির্ণয় করা যৌক্তিক নয়। ভালো মানের নাটকের সঙ্গে দর্শকের ভিউ সবসময় যে ক্যারি করবে বিষয়টা এমন নয়। আমি একটা জিনিস বিশ্বাস করি নাটক যদি ভালো হয় তাহলে ভিউয়ের বাইরেও আলোচনায় আসবে। আর এখন দর্শকের মধ্যে কিন্তু অনেক স্বাধীনতা। দর্শকরা সহজেই এক চ্যানেল থেকে অন্য চ্যানেলে যেতে পারছেন। ঠিক তেমনি ইউটিউবেও দর্শকরা কোন নাটকটি দেখবেন, নাকি দেখবেন না, তা তাদের ওপর নির্ভর করছে। তবে দর্শকের রুচি সৃষ্টির ব্যাপারে আমরা যারা শিল্প নির্মাণ করি তাদের অনেক বড় ভূমিকা রাখতে হবে।  

বাংলানিউজ: অনেক নির্মাতাই বলেন ভালো নাটক নির্মাণে পৃষ্ঠপোষকতা ও বাজেটের স্বল্পতা রয়েছে। আপনার মতামত কী? 
সোহেল আরমান: ভালো কিছু নির্মাণে অবশ্যই পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন রয়েছে। আর বাজেট সবসময়ই নির্ভর করবে গল্পের ওপরে। বাজেট কত বেশি হলে একটা ভালো কাজ হবে বিষয়টা কিন্তু তেমন নয়। গল্পের কারণে কিছু নাটক জনপ্রিয় হয়ে যায়। তাই নাটক নির্মাণে মিনিমাম একটা বাজেট করা যেতে পারে, যেটা হলে বর্তমান ক্যামেরা, শিল্পী, কলাকুশলী, সম্পাদনা, কালার গ্রেডিং সবকিছুর একটা সুষম বণ্টন করা যায়।
বাংলানিউজ: টেলিভিশন নাকি ইউটিউব, কোথায় বেশি দর্শক সাড়া পান?
সোহেল আরমান: টেলিভিশনে প্রচার হওয়ার পর কিন্তু দর্শকের প্রতিক্রিয়া সেভাবে বুঝ যায় না। আর ইউটিউবে কতজন দেখছেন সেটা সহজেই বুঝা যাচ্ছে। সেইসঙ্গে দর্শকরা ভালোলাগ-মন্দলাগা মন্তব্য করে জানাতে পারছেন। সেই হিসেবে ইউটিউবেই বেশি সাড়া পাচ্ছি। তবে টেলিভিশনের একটা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। কিছু কিছু টেলিভিশন সবসময় ভালো মানের নাটক প্রচার করে। তারা সেন্সরের মাধ্যমে নাটক নির্বাচন করে। অর্থাৎ টেলিভিশনে প্রচারের পর নাটক ইউটিউবে এলে দর্শকের আস্থা থাকে। তবে একটা বিষয় আমি বলতে চাই, বাংলাদেশের নাটকের একটা বড় বাজার ইউটিউবে তৈরি হয়েছে।  

বাংলানিউজ: আপনার কি মনে হয় বাংলাদেশের নাটকের দর্শক বেড়েছে?
সোহেল আরমান: অবশ্যই। ইউটিউবের কল্যাণে এখন শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিদেশে বিশেষ করে কলকাতায়ও বাংলাদেশের নাটকের অনেক দর্শক তৈরি হয়েছে। কলকাতা থেকে এদেশের নাটকের প্রচুর প্রশংসা আসছে। আমরা যারা শিল্পকর্ম করি তারা যদি সবাই সবাইকে সহযোগিতা করি, অন্যের কাজকে মূল্যায়ন করি তাহলে এদেশের নাটক আরও সমৃদ্ধ হবে এবং দেশ-বিদেশ সুনাম অর্জন করবে।

বাংলানিউজ: আপনার কাজের বিশেষত্ব কী? যে কারণে দর্শক দেখবে?
সোহেল আরমান: আমার ২৮ বছরের কাজগুলো যদি দেখেন তাহলে দেখবেন আমার দেশের সহজ-সরল, পারিবারিক গল্পগুলো তুলে আনার চেষ্টা করেছি। আমি গল্পগুলো কল্পনা করে নির্মাণ করি। তবে যেহেতু আমি বাস্তবের একজন মানুষ তাই আমার কল্পনাতেও বাস্তবের যৌক্তিকতা চলে আসে। এরমধ্যে কোনোটা হয়তো দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে যাচ্ছে আবার কোনোটা হয়তো সেভাবে দর্শকরা নিচ্ছেন না। আর একটা নাটক দিয়ে সর্ব মহলের দর্শকের মন ভরানো কঠিন। তবে কোনো নাটক যদি বেশিরভাগ দর্শকের ভালো লাগে তাহলে সেটা নিঃসন্দেহে সফল কাজ। নাটক দেখে দর্শকরা বিভিন্ন মন্তব্য করেন। এক্ষেত্রে আমি দর্শকের গঠনমূলক সমালোচনা খুব পজিটিভভাবে নেই এবং পরবর্তী কাজে সেগুলো মাথায় রাখি।

বাংলানিউজ: আপনি অনেক শিল্পীকে নিয়ে কাজ করেছেন। বর্তমান সময়ের শিল্পীদের কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা কেমন?
সোহেল আরমান: আমি মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে কৃতজ্ঞ। যেসব শিল্পীদের নিয়ে কাজ করেছি তাদের সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাবে আমি ভীষণ আনন্দিত। শুধু শিল্পী নয় আমার টিমের সব কলাকুশলীদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য তাদের অবদান অনেক অনেক বেশি। যেমন আমি ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানাবো অপূর্বকে। ‘অন্য এক প্রেম’ এবার যে আলোচনায় এসেছে, নাটকটি নির্মাণে অপূর্বর উৎসাহ ও অবদান অনেক।  
বাংলানিউজ: করোনার এই সময়ে কিভাবে কাজ করছেন?
সোহেল আরমান: করোনার এই দুর্বিষহ সময়ে দর্শকদের আনন্দ দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। এজন্য নাটকের শিল্পী-কলাকুশলীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, কষ্ট করে কাজ করছেন। সরকারে দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুধুমাত্র দর্শকদের আনন্দিত করতে আমাদের সবার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
বাংলানিউজ: আপনার উল্লেখযোগ্য কয়েকটা কাজের নাম বলুন।
সোহেল আরমান: আমার প্রথম নাটকটাই (সবুজের হলুদ ব্যাধি) উল্লেখযোগ্য ছিল। বিটিভিতে প্রচারিত সেই সময়ে নাটকটি বেশ আলোচিত হয়। এছাড়া নাটক ‘তিন পুরুষ’, কৃষ্ণপক্ষ, বিবর্ণ প্রজাপতি, নগরেঅনাগরিক, দু:খ তোমায় ছুটি, গ্রহণকাল পেরিয়ে, আমার হৃদয় তোমার, অবশেষে বৃষ্টি, অন্য এক প্রেম উল্লেখযোগ্য। আমার লেখা কিছু গান হলো- ক্রিকেটের থিম সং ‘বেশ বেশ বেশ শাবাশ বাংলাদেশ’ এছাড়া হাবিবের টিউন এবং কম্পোজ ‘আমি তোমার মনের ভিতর একবার ঘুরে আসতে চাই’, ‘তুমি আমার ঘুম তবু তোমায় নিয়ে স্বপ্ন দেখি না’, ‘হৃদয়ে আমার বাংলাদেশ’, ‘তুমি ছাড়া কে আছে হৃদয়ে, ‘বহু দিন পর’,  ‘যাক না উড়ে’, ‘তোমায় আমি জোছনা দিব’ উল্লেখযোগ্য।  

বাংলানিউজ: আপনি একজন চলচ্চিত্র ও নাট্য পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, গীতিকার এবং অভিনেতা। এগুলোর মধ্যে কোনটিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
সোহেল আরমান: লেখালেখি এবং নির্মাণ এই দু’টোতে আমি বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। তবে আমি মহান আল্লাহতায়ালার কাছে কৃতজ্ঞ যে, আমি যখন যে বিষয়টা নিয়ে কাজ করেছি, তখন সেটাতে দর্শকের বেশ সাড়া পেয়েছি। দর্শকরা আমার কাজগুলো গ্রহণ করেছে। দেশে প্রথম মিউজিক ভিডিওর ধারণাটাও ছিল আমার এবং সেখানেও আমি সফল।   
বাংলানিউজ: একজন সোহেল আরমান হয়ে ওঠার পেছনে কার অবদান বেশি?
সোহেল আরমান: আমার পরিবার, আমার বন্ধু-বান্ধব, আমার শিক্ষক, সাংবাদিক, মিডিয়া অঙ্গনের অনেকেই সহযোগিতা করছেন, বিটিভিসহ সব স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল পর্যায়ক্রমে আমি সবার কাছে ঋণী। আমার কাজগুলোকে যদি এদেশের মানুষ, দর্শক গ্রহণ না করতো তাহলে আমি হয়তো সোহেল আরমান হয়ে উঠতে পারতাম না। তাই দর্শকদের কাছেও আমি ঋণী। তবে একজন ব্যক্তির কথা বললে তিনি আমার বাবা প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেন। নির্মাণের ক্ষেত্রে বাবাই আমার আদর্শ, বাবাই আমার সবচেয়ে বড় শিক্ষক।
বাংলানিউজ: বাংলানিউজকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
সোহেল আরমান: আপনাকেও ধন্যবাদ। সেইসঙ্গে বাংলা নাটকের সব দর্শক ও বাংলানিউজের সব পাঠকদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২১
এমআরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।