খ্যাতনামা গীতিকার ও সুরকার হাসান মতিউর রহমান সম্প্রতি হিরো আলমকে দিয়ে দুটি গান করিয়েছেন। নিজের কথা ও সুরে এই গানের রেকর্ডিং সম্পন্ন করেছেন।
তবে হিরো আলমকে নিয়ে হাসান মতিউর রহমানের এই উদ্যোগকে সহজভাবে নেননি দেশের অনেক কণ্ঠশিল্পী, গীতিকার, সুরকার ও ভক্তরা। সমালোচনার মুখে সেই স্ট্যাটাসটি সরিয়ে নেন হাসান মতিউর রহমান।
এবার সেই বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা দিলেন নন্দিত এই গীতিকার ও সুরকার। তার ভাষ্য, ‘গত দু'দিন যাবৎ একটি বিষয় নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে। যা আমাকে খুবই বিব্রত করেছে। আমি খুবই মর্মাহত। আমি কেন হিরো আলমের গান করব! আমি কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে নয়। চেয়েছি গান যখন গাইতে চায়, চেষ্টা করে দেখি শিখিয়ে ভালো কিছু আদায় করা যায় কিনা। ’
হিরো আলমের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সেদিন গানের গাইড ভয়েস নিয়ে সবার সামনে আমি তাকে বলে দিয়েছি, একজন তবলা বাদক রেখে একজন গানের শিক্ষকের কাছে মন দিয়ে দুই মাস শিখতে হবে। তা না হলে কিন্তু গান হবে না। ছেলেটা কিন্তু খুব নরম। সবাইকে সম্মান দিয়ে কথা বলে। বলল, ‘ওস্তাদ আমি শিখব। আপনি চিন্তা করবেন না। ’ এরপর আমি নিজেই ছবিসহ পোস্ট দেই সরল মনে। ’’
পোস্টটি সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে হাসান মতিউর রহমান বলেন, ‘ভেবেছিলাম, সবাই ভালোভাবে নেবে এবং এ রকম একটি দুঃসাহসিক কাজের জন্য আমাকে উৎসাহিত করবেন। কিন্তু দেখা গেল অনেকেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। সঙ্গে সঙ্গে সবাইকে সম্মান জানিয়ে আমার আইডি থেকে পোস্টটি ডিলিট করে দেই। পরে আমাকে অসম্মান করার জন্য স্ক্রিনশট রেখে ছড়িয়ে দেয়। স্টুডিওতে গোপনে কেউ মোবাইলে ধারণ করে ছেড়ে দেয়। ’
বিষয়টি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হিরো আলমের সঙ্গে যারা এসেছিল হয় তারা, না হয় যে কেউ খারাপ উদ্দেশ্যে ভিডিও করে আমাদেরকে সবার কাছে হেয় করেছে। রেকডিংয়ের সময় আমরা একটু মজা করেই থাকি। তবে তা কখনো কেউ জানতে পারে না। একান্তই গোপন। ’
এই গীতিকার আরো বলেন, ‘যাই হোক আমি বুঝতে পেরেছি, দেশের গান পিপাসুরা আমাকে কত ভালোবাসেন। যারা মন্দ বলেছেন, তারা ভালোবাসেন বলেই বলেছেন। আমি সবকিছু মাথা পেতে নিচ্ছি। বিশ্বাস রাখবেন আমার ওপর। এমন কিছু করব না যাতে আমার জন্য সংগীতের কোনো ক্ষতি হয়। জীবন কাটিয়েছি গান নিয়ে। পেছনে গেছে অনেকদিন। সামনে আর কতদিন কাজ করতে পারব আল্লাহ জানেন। তবে যতদিন আছি আমি আপনাদের সঙ্গেই থাকব ইনশাআল্লাহ। ’
হিরো আলমকে নিয়ে কাজ করার বিষয়ে হাসান মতিউর রহমান আরো বলেন, ‘যারা আমার এই সিদ্ধান্তে কষ্ট পেয়েছেন, তারা আমাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি আপনাদেরই ভাই-বন্ধু-আংকেল। সব সময় পাশে ছিলাম, পাশে থাকব। আমি খারাপ কিছু করব না, করতে পারি না। চলার পথে সবাই বন্ধু নয়, কিছু বৈরি মানুষও থাকে। কিছু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষও থাকে। খুবই দুঃখজনক। তারাও সুযোগ পেয়ে তৎপর হয়ে ওঠে স্বার্থ উদ্ধারে। কাউকে যদি অজান্তে দুঃখ দিয়ে থাকি, মনে রাখবেন না। সব ভুলে যাবেন। ’
সবশেষে বিষয়টিকে অনিচ্ছাকৃত ভুল উল্লেখ করে এই গীতিকার বলেন, ‘সত্যি এটা অনিচ্ছাকৃত ভুল। একটি আবেদন, মন্দকে দূরে তাড়িয়ে না দিয়ে আসুন সে যাতে ভালো হয় সে চেষ্টা করি। কার ভেতরে কি আছে কেউ জানি না। আমরা সবাই এমন একটি জায়গা থেকেই উঠে এসেছি। মায়ের পেট থেকে কেউ শিখে আসিনি। বহু বাধা পেরিয়ে এখানে এসেছি। সুযোগ পেয়ে আমরা কি চলছি না! অনুরোধ রইল, আপনি না পারলে করবেন না। যারা পারে তাদের কিছু করতে দিয়েন। আল্লাহ সবাইকে এক রকম মেধা দিয়ে পাঠান না। ’
অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন গীতিকার ও সুরকার হাসান মতিউর রহমান। তার লেখা জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত, বঙ্গবন্ধু মরে নাই’, ‘আমি বন্দী কারাগারে’, ‘কলমে নাই কালি’, ‘আমার লাইন হইয়া যায় আঁকাবাঁকা’সহ আরো অনেক।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২২ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২২
এনএটি