গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা অজস্র কালজয়ী গানের মধ্যে অন্যতম ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’। একটি দেশাত্ববোধক ও জাগরণমূলক গান এটি।
তৎকালীন সাড়ে সাত কোটি বাঙালির বঞ্চনা-দুর্দশা আর স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষাকে ছন্দময় করে গানটি রচনা করেছিলেন তিনি। গানটি মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালিকে উদ্বুদ্ধ করেছিল।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সূচনা সংগীত হিসেবে নিয়মিত প্রচার করা হতো ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ গানটি।
১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশে ঢাকা থেকে সম্প্রচার শুরু করে বাংলাদেশ বেতার, যা রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধা ও দেশবাসীর মনোবলকে উদ্দীপ্ত করতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছিল।
যুদ্ধের সময়ে প্রতিদিন মানুষ অধীর আগ্রহে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান শোনার জন্য অপেক্ষা করত। সেই সময়ে ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ গানটি সূচনা সঙ্গীত হিসাবে প্রচারিত হতো।
‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ কালজয়ী এই গানের সৃষ্টির কথা: ১৯৭০ সালে চলচ্চিত্র প্রযোজক আবুল খায়ের ছয় দফার আন্দোলনের ওপর ভিত্তি করে ‘জয় বাংলা’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করার উদ্যোগ নেন। চলচ্চিত্রের জন্য চিত্রপরিচালক ফকরুল আলম চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য তৈরি করেন এবং চলচ্চিত্রটির জন্য গান লেখার দায়িত্ব পান গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার।
১৯৭০ সালের মার্চের দিকে ফার্মগেটের রেকর্ডিং স্টুডিওতে গাজী মাজহারুল আনোয়ার ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ গানটি লেখা শুরু করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন আনোয়ার পারভেজ, তিনি গানটি সুর করেন। শাহনাজ বেগম ও আব্দুল জব্বার গানটিতে কণ্ঠ দেন।
চলচ্চিত্রটি সে বছর সেন্সরে জমা পড়লেও তৎকালীন পাকিস্তান সরকার চলচ্চিত্রটির মুক্তি আটকে দিলে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭২ সালের ২৬ জানুয়ারি মুক্তি পায় চলচ্চিত্রটি।
তবে চলচ্চিত্রটি মুক্তির আগেই পরিচালক সালাউদ্দিনের মালিকানাধীন ‘ঢাকা রেকর্ড’ চলচ্চিত্রটির গান ও সংলাপ প্রকাশ করে। সেই সময় ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ গানটি জনপ্রিয় হয়।
প্রসঙ্গত, বিবিসির জরিপে ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাংলা গান’ হিসেবে ২০টি গানের মধ্যে এই গানটি ১৩তম স্থান পায়।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২২
এনএটি