ঢাকা, শনিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

মেঘনায় গিয়ে খরচ তুলতে হিমশিম খাচ্ছেন জেলেরা

মো. নিজাম উদ্দিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৯ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০২৩
মেঘনায় গিয়ে খরচ তুলতে হিমশিম খাচ্ছেন জেলেরা

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার নবীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা আলমগীর মাঝি তার ট্রলারে ছয়জন জেলে নিয়ে মেঘনায় মাছ শিকার করেন।  

সোমবার (৫ জুন) দিনভর মেঘনায় জাল ফেলে তিনি যে মাছ পেয়েছেন, সেগুলো ঘাটে বিক্রি করেছেন দুই হাজার টাকায়।

কিন্তু ট্রলারের জ্বালানি খরচ হয়েছে তিন হাজার টাকার মতো। ফলে এদিন তার এক হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। ছয়জন জেলে কোনো পারিশ্রমিকও পাননি।

মেঘনায় মাছের অকাল থাকায় জেলেদের এখন জ্বালানি খরচও উঠছে না।  

আলমগীর মাঝি বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিন আশায় আশায় নদীতে যাই। মাঝে মধ্যে বড় ইলিশ ধরা পড়লে বেশি দামে বিক্রি হয়। তখন আমাদের খরচ ওঠে, লাভও হয়। তবে মাছ কম থাকায় লোকসানও দিতে হয়। নদীতে না গেলে জেলেরা অন্য ট্রলারে বা অন্য কাজে চলে যাবেন। তাই লাভ লোকসান যাই হোক, ট্রলার নিয়ে মাছ শিকারে যেতেই হয়।  

নবীগঞ্জ এলাকার জেলে ফয়সাল বলেন, নদীতে মাছ কম। তাই এ মৌসুমে এখনো মাছ শিকারে যাইনি। ভরা বর্ষায় মাছ ধরা পড়তে পারে। তখন মাছ শিকারে নদীতে যাব। এখন অন্য পেশায় আছি।  

লক্ষ্মীপুরের প্রায় ৫০ হাজারের বেশি জেলে মেঘনা নদীতে মাছ শিকারে নিয়োজিত। তবে নদীতে ইলিশসহ অন্য মাছের দেখা না মেলায় অনেক জেলে আপাতত মাছ শিকার বন্ধ রেখেছেন।  

জেলেরা জানান, নদীতে মাছ কম থাকায় মাছ ধরার ট্রলারের জ্বালানি খরচও উঠছে না। এতে অনেকেই ট্রলার নিয়ে নদীতে যাচ্ছেন না।  

তারা বলছেন, নদীতে পানির গভীরতা কমে গেছে। এছাড়া ডুবোচর এবং নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে নিষিদ্ধ টংজাল বসানোর কারণে সাগরের ইলিশ নদীতে ঢুকতে বাধা পাচ্ছে। তাই এ সময়টাতে নদীতে মাছের উপস্থিতি কম।  

এদিকে নদীতে মাছ কম ধরা পড়ায় মাছঘাট এবং হাটগুলোতে তেমন ইলিশ নেই।  

সোমবার (৫ জুন) সন্ধ্যায় নবীগঞ্জ এলাকার কাটুরিয়া মাছঘাটে গিয়ে মাছের তেমন একটা দেখা মেলেনি।  

সেখানকার আড়তদার এবং ব্যবসায়ীরা বলেন, মাছ ধরা পড়লে ঘাট জমজমাট থাকত। জেলেদের জালে সামান্য কিছু মাছ ধরা পড়ছে। বড় ইলিশ হলে দাম ভালো পাওয়া যায়। এতে জেলেদের কিছুটা পোষায়। তবে অনেক জেলে এখন নদীতে যাচ্ছেন না। তাই ঘাটে মাছ কম।  

জেলে এমদাদ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, তাদের ট্রলারে ১১ জন জেলে মাছ শিকার ধরেন। মাছ শিকারে গেলে মাঝে মধ্যে ট্রলারের খরচও ওঠে না। ইলিশের পরিমাণ কম হওয়ায় চড়া দামে বিক্রি করা হয়।

জেলে জসিম উদ্দিন মাঝি বাংলানিউজকে বলেন, ইলিশ গভীর পানিতে পাওয়া যায়। এছাড়া নদীতে অতিরিক্ত জোয়ারের পানি হলে সাগর থেকে মাছ নদীতে চলে আসে। নদীতে এখনো পানি কম। বৃষ্টি নেই, বর্ষাও শুরু হয়নি। এ মৌসুমে এখনো নদীতে অতিরিক্ত জোয়ারের পানি দেখা যায়নি। দুই মাসের (মার্চ-এপ্রিল) জাটকা অভিযান শেষে ৩৫ দিনের বেশি পার হলেও জেলেরা আশানুরূপ ইলিশ পাচ্ছেন না। এজন্য অনেক জেলে এখনো মাছ শিকারে নামেননি।  

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম জানান, নদীতে নাব্য সংকট রয়েছে। সেই সঙ্গে বৃষ্টিও হচ্ছে না। ফলে জেলেদের জালে মাছের দেখা মিলছে না তেমন। বৃষ্টি হলে এবং তাপমাত্রা সহনশীল হলে ইলিশ ধরা পড়তে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৩ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০২৩
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।