ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

খানজাহান আলীর মাজার সংলগ্ন দিঘির কুমিরের চিকিৎসা শুরু

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৬ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০২১
খানজাহান আলীর মাজার সংলগ্ন দিঘির কুমিরের চিকিৎসা শুরু

বাগেরহাট: বাগেরহাটে ঐতিহ্যবাহী খান জাহান আলীর (রহ.) মাজার সংলগ্ন দিঘির অসুস্থ কুমির মাদ্রাজের চিকিৎসা শুরু হয়েছে।  

বুধবার (৭ জুলাই) দুপুরে বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. লুৎফর রহমানের তত্ত্বাবধায়নে দিঘির শানবাঁধানো ঘাটে (পূর্ব পাশের ঘাট) এ চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়।

এর আগে সুন্দরবন পূর্ববন বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবিরের পরামর্শে স্থানীয়দের সহায়তায় দিঘি থেকে কুমিরটিকে ওপরে ওঠানো হয়। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. লুৎফর রহমান এবং করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবীর কুমিরটিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন।  

কুমিরটিকে সুস্থ করতে তাৎক্ষণিকভাবে বেশ কিছু ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। পর্যবেক্ষণের জন্য কুমিরটিকে আগামী ১০ দিন দিঘি সংলগ্ন একটি বাড়িতে রাখা হবে।

কুমিরকে ওপরে ওঠানোর কাজে সাহসী ভূমিকা পালনকারী স্থানীয় বাসিন্দা জামাল ফকির বলেন, কুমিরটি বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ। ডিসি সাহেবের নির্দেশনায় আমরা কয়েকজন মিলে খুব সতর্কভাবে কুমিরটিকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ওপরে উঠিয়েছি। এসময় করমজলের কুমির বিশেষজ্ঞ আজাদ ভাই আমাদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।

সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবীর বলেন, কুমিরটিকে ওপরে ওঠানোর পরে আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি। কুমিরটির চোয়ালে যে ক্ষত ছিল, সেটি এখন নেই। তবে কুমিরটি একটি চোখে মোটেও দেখতে পাচ্ছে না। অন্য চোখটিতেও ঝাপসা দেখছে। তাই জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে ১০ দিন পর্যবেক্ষণে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, কুমিরটি দেখে আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এটির বয়স অন্তত ৪০ থেকে ৫০ বছর। যার ফলে এটির ওজন অনেক বেড়ে গেছে। যা ৮০০ থেকে ৯০০ কেজির মত হবে। অপ্রয়োজনীয় চর্বি কমানোর জন্য কুমিরটিকে পরিমিত খাবার দেওয়া প্রয়োজন।

বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. লুৎফর রহমান বলেন, কুমিরটিকে ওপরে ওঠানোর পরে আমরা তাৎক্ষণিক কিছু ওষুধ প্রয়োগ করেছি। কুমিরটি এখন মোটামুটি সুস্থ রয়েছে। তবে কুমিরটির চোখ বেশ ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখব। প্রাণীটিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে।

খানজাহান আলীর (রহ.) মাজারের প্রধান খাদেম ফকির শের আলী বলেন, মিঠা পানির কুমির খানজাহান আলীর মাজার সংলগ্ন দিঘিসহ বাগেরহাটের একটি ঐতিহ্য। বেশ কিছুদিন ধরে কুমিরটি অসুস্থ। আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয়, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। আজ কুমিরটির চিকিৎসা শুরু হয়েছে। আশা করি, কুমিরটি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে।

তিনি আরো বলেন, স্থানীয় কিছু লোভী প্রকৃতির মানুষ কুমির তাদের ঘাটে রাখতে চায়। দর্শনার্থীদের কুমির দেখিয়ে অর্থ উপার্জনই তাদের উদ্দেশ্য। এর জন্য তারা কুমিরকে বিভিন্ন অস্বাস্থ্যকর খাবার দিয়ে থাকেন। বিষয়টি নজরে এনে কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

এর আগে ১২ জুন কুমিরটি অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়। পরে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কুমিরটিকে দেখতে এলেও পানিতে থাকার কারণে চিকিৎসা দিতে পারেননি। সবার চেষ্টায় ওপরে ওঠানোর পরে কুমিরের চিকিৎসা শুরু করেছে প্রাণিসম্পদ দপ্তর।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০২১
এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।