উঁচু পথ পৌঁছেছে রেলওয়ে কলোনিতে। লাল বিল্ডিংগুলোতে যেন মিশে আছে ঐতিহ্য।
সারি সারি চটপটির দোকান; অনেকে আসেন, স্বাদ নেন টক-ঝাল-মিষ্টির। দু-চারটা চায়ের দোকানও আছে। এর মধ্যেও একটা দোকান আলাদা। স্বাদের চেয়েও বেশি সাজসজ্জায়। বাঁশের খণ্ড জুড়ে জুড়ে বানানো একটা টং। উপরে খড়কুঁটোর ছাদ। চারপাশে ফুটিয়ে তোলা সৌন্দর্যের মুগ্ধতা।
সামনে ঝুলছে একটা অদ্ভূত মেন্যু কার্ড, লেখা ‘প্রণয়োপাখ্যান’ চা। চট্টগ্রামে সিআরবিতেই অবসরে মানুষের গন্তব্য হয় বেশি। হই-হুল্লোড়, ভিড়, গান-আড্ডার ভেতরও জানতে ইচ্ছে হলো ‘প্রণয়োপাখ্যানের’ গল্প। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের তিন বন্ধু জহিরুল ইসলাম, ফরিদ ও দেলোয়ারের ভাবনায় এসেছে এমন ব্যতিক্রমী টং।
বাঁশের টংয়ের সামনে সাজানো বই। রবীন্দ্রনাথের ‘গল্পগুচ্ছ’ থেকে হুমায়ূন আহমেদের ‘দেয়াল’ হয়ে যে সংগ্রহ পৌঁছেছে এ যুগের সাদাত হোসেনের ‘আরশিনগর’ অবধি। দোকানের নাম ‘কুঞ্জ’ও লেখা বেশ বড় করে। কীভাবে এলো এমন ব্যতিক্রমী ভাবনা?
প্রশ্নের জবাবে ‘কুঞ্জ’র অন্যতম মালিক দেলোয়ার বলছিলেন, ‘এটা আসলে আমাদের স্বপ্নের প্রজেক্ট। করোনার সময় সবারই অলস সময় কাটতো। এরপর চিন্তা করলাম প্রোডাক্টিভ কিছু করি। সামনে এটাকে বেইস করে যেন বড় কিছু করতে পারি। এরপর তিন বন্ধু মিলে এই চা বিক্রি শুরু করলাম। ’
গুগলে সার্চ করলে ‘কুঞ্জ’ শব্দের একটি অর্থ আসে ‘লতাগৃহ’। তাদের ভাবনায় কী ছিল?
তিনি বলছিলেন ‘প্রকৃতি প্রেম’। তিন বন্ধুই পড়েন চট্টগ্রাম সিটি কলেজে। জহির ইংরেজি আর বাকি দুজন অর্থনীতিতে। তিনজনের জন্যই কমন ‘প্রকৃতি’, সেটিকে ঘিরেই নিজেদের স্বপ্নকে বড় করেন তারা।
কিন্তু এভাবে বাঁশের দোকান করার ভাবনা কীভাবে এলো? ‘কুঞ্জ’র মালিকরা বলছিলেন, ‘আমরা তিনজনই প্রকৃতি পছন্দ করি। আমাদের একজন বাঁশের কাজ খুব ভালো পারতো। মানে বাঁশ দিয়ে এটা-ওটা বানানো। ভাবলাম এটাকেই কাজে লাগাই। প্রায় এক মাস সময় লেগেছে এই দোকান বানাতে। ’
বাংলাদেশের মানুষ চা পছন্দ করেন, ব্যাপারটি নতুন নয়। কীভাবে নতুনত্ব আনা যায় এরপরও? এমন ভাবনা থেকেই এসেছে প্রণয়োপাখ্যান, মিশে আছে ঐতিহ্যও। ওই গল্প শোনাতে শোনাতে তারা বলছিলেন স্বপ্নের কথাও।
তিনি বলেন,‘আমাদের এখানে চার ধরনের চা পাওয়া যায়, এর মধ্যে একটা হলো প্রণয়োপাখ্যান; এটা আমাদের স্পেশাল। যারা প্রকৃত চা ভালোবাসে, রঙটা একটু কড়া, দুধটা একটু ঘন; এর সঙ্গে চিন্তা করলাম বেলা বিস্কুট চট্টগ্রামের ঐতিহ্য। ’
কথা বলতে থাকেন তিনি, ‘যেহেতু বাইরের জেলা থেকে অনেকে আসে। আমরা চিন্তা করে দেখলাম, তাদের কাছে চট্টগ্রামকে পৌঁছে দিতে হবে। আর যেহেতু এই চা আমাদের স্পেশালও। আমরা চায়ের সঙ্গে একটা করে টা তথা বেলা বিস্কুট দেওয়া শুরু করলাম। ’
স্বপ্ন অবশ্য এখানেই থামিয়ে রাখতে চান না তিন তরুণ। সামনে আরও বড় পরিসরে আনতে চান, করতে চান প্রকৃতির ছোঁয়ার রেস্তোরাঁও। তারা জানান, ‘হালিশহরে আমাদের একটা শাখা হবে শিগগিরই। সামনে প্রকৃতিতে ঘেরা একটা বড় রেস্তোরাঁ করার ইচ্ছে আছে। জানি না কতটুকু করতে পারব, তবে স্বপ্ন তো দেখি। ’
বিকেল চারটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত খোলা থাকে তিন বন্ধুর স্বপ্নের ‘কুঞ্জ’। পরীক্ষা কিংবা একাডেমিক ব্যস্ততায় বন্ধও রাখতে হয়। ‘কুঞ্জ’ কতটুকু ডালপালা ছড়াবে? বলতে পারেন না তিন বন্ধু। তবে তারা স্বপ্ন দেখতে চান। চা বিক্রি করতে কোনো দ্বিধা করেন না। প্রায়ই তো বলা হয় এমন- পৃথিবী এগিয়ে যেতে স্বপ্নবাজদের সফল হওয়া ভীষণ প্রয়োজন!
বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২২
এমএইচবি/এসএএইচ