ঢাকা, বুধবার, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

চা বাগানে ‘নগদা’ শব্দটি ঘিরেই সম্মিলিত সমৃদ্ধি

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০২৪
চা বাগানে ‘নগদা’ শব্দটি ঘিরেই সম্মিলিত সমৃদ্ধি চায়ের কুঁড়িগুলো চয়ন করছেন এক চা শ্রমিক। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: ছোট্ট শব্দ ‘নগদা’! কিন্তু এর ভেতরেই রয়েছে চা বাগানের সম্মিলিত উদ্যোগ আর সমৃদ্ধি। প্রতিটি ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’ ঘিরে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা।

ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এবং শ্রমিকদের মাঝে এ যেন দারুণ এক সমন্বয়ের সেতুবন্ধন।

চা বাগানে এখন চলছে চা উৎপাদনের ভরা মৌসুম। অনেকে একটা ‘পিক সিজন’ বলে থাকেন। ঘন-মৃদু বৃষ্টির ফোটাগুলো গায়ে মেখে সমতল ভূমি কিংবা টিলার ওপরের চা গাছগুলো দ্বিগুণভাবে পাতা ছাড়ছে। খুব দ্রুতই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হচ্ছে দুটি পাতা একটি কুঁড়ি।

ফলে স্বাভাবিকভাবেই তখন প্রয়োজন পড়ছে বেশি বেশি করে পাতা উত্তোলন করার। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চা গাছের নতুন নতুন পাতাগুলো উত্তোলন করা না হলে চা পাতার মান খারাপ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তাই চা পাতার মান ভালো রাখতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাতা উত্তোলন অত্যাবশ্যক।

এই প্রয়োজনটুকু থেকেই এসেছে ‘নগদা’। চা শ্রমিকরা এই শব্দেই কার্যক্রমে যুক্ত হয়ে দলগতভাবে উপার্জন করে থাকেন দৈনিক বাড়তি টাকা। নিয়ম মোতাবেক একজন চা শ্রমিক দৈনিক ২৪ কেজি পাতা উত্তোলন করলেই তাকে ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সায় মজুরি দেওয়া হয়। ২৪ কেজির বেশি যত কেজি পাতা উত্তোলন করা হবে কেজি প্রতি আরো বাড়তি অর্থ তাকে প্রদান করা হবে।

চা বাগানে সাধারণ নারী শ্রমিকরাই পাতা চয়ন বা পাতা উত্তোলন করে থাকেন। কিন্তু ‘নগদা’ নাম কার্যক্রমে নারী অপেক্ষা পুরুষ শ্রমিকরাই বেশি যুক্ত হয়ে পড়েন। ফলে তারা নারী শ্রমিকদের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে চা পাতা উত্তোলন করতে সম্মত হন তারা।  

বর্তমানে চা বাগানের ভরা উৎপাদন মৌসুমকে টার্গেট করে এবং চা শ্রমিকদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে প্রতি বছরের মতো এবারও কোনো না কোনো চা বাগানে ‘নগদা’ নামক কার্যক্রমটি চালু করা হয়েছে। ফলে পুরুষ শ্রমিকরা মনের আনন্দে চা গাছের পাতা উত্তোলন করছেন।  

এ বিষয়ে চা শ্রমিক সীতারাম হাজরা বলেন, নগদাতে আমাদের খুব লাভ হয় বাবু। বেশি বেশি করে পাতা তুলে বাড়তি কিছু টাকা উপার্জন করতে পারি। নগদা ছাড়া অন্য সময় তো আমাদের পুরুষদের পাতা তুলতে দেওয়া হয় না। শুধু নগদাতেই আমরা পাতা তোলার সুযোগ পাই।  

আরেক শ্রমিক রামপ্রসাদ রবিদাস বলেন, দুর্গাপূজার আগে বেশি বেশি করে নগদা দেওয়া হয়। আমরা এই সময়টার জন্য অপেক্ষায় থাকি।

ফিনলে চা কোম্পানির সহকারী ব্যবস্থাপক গৌতম দেব বাংলানিউজকে বলেন, এটা হলো ‘ক্যাশ প্লাকিং’ (নগদ অর্থে পাতা উত্তোলন)। শ্রমিকরা এই শব্দটিকে ‘নগদা’ বলে। ক্রপ (পণ্য) যখন বেশি হয়ে যায় এবং প্লাকিং রাউন্ড (পাতা উত্তোলনের বৃত্ত) যদি পিছিয়ে যায় তখন নগদ টাকায় তাৎক্ষণিক শ্রমিকদের কাজের সুযোগ করে দেওয়া হয়। যাতে করে দ্রুত বেড়ে ওঠা কুঁড়িগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ম্যানুফেকচারিং (প্রক্রিয়াজাতকরণ) এর আওতায় চলে আসতে পারে।

ক্যাশ প্লাকিঙে ২৪ কেজি পাতা উত্তোলনে আমরা শ্রমিকদের ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা মজুরি দিয়ে থাকি। ২৪ কেজির বেশি যত তুলবে তার ওপর ভিত্তি করে বাড়তি টাকা সে পেতে থাকবে। আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে ৩/৪ দিন চা বাগান বন্ধ থাকে, তাই ‘ক্যাশ প্লাকিং’ এর মাধ্যমে প্লাকিং রাউন্ডটাকে শর্ট (ছোট) করে নিয়ে আসা হয়। চায়ের পাতাগুলো যাতে খারাপ না হয়।

ক্যাশ প্লাকিংয়ে একেকজন পুরুষ শ্রমিক ১৫০ কেজি থেকে ২০০ কেজি পর্যন্ত পাতা উত্তোলন করে থাকেন বলে জানান গৌতম দেব।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০২৪
বিবিবি/আরএ                                  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।