ময়মনসিংহ থেকে ফিরে: হিম শীতল বাতাস বইছে। দিগন্ত বিস্তৃত মাঠের মতো, ব্রহ্মপুত্র নদের পাড় থেকে যেটুকু চোখ যায়, কেবলই বিশালতা।
এদিকে ডাঙায় (পাড়ে) মনোরম সময়। কারণ এটাই যে, ব্রহ্মপুত্র পাড়ে এক কাপ কফি হাতে আপনি!
নিজেকে এমন খানিকটা কল্পনায় ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চাইলে ময়মনসিংহ শহরের ব্রহ্মপুত্র নদ তীর ঘুরে আসতে হবে। বাংলানিউজ টিম সম্প্রতি এক শীতের সন্ধ্যায় সেখানে সমাবেত হয়।
ব্রহ্মপুত্র নদ তীরে কফি হাতে আড্ডা, বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে ঘুরে বেড়ানোর বাসনা তৈরি করে।
এই ব্রহ্মপুত্র নদ তীরে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে মানুষের কাছে তুলে জন্য এস এম তাকের হায়দার গড়ে তুলেছেন ‘হিমু আড্ডা রেস্টুরেন্ট’। ২০১৩ সালের ১ মার্চ যাত্রা শুরু হয় এই রেস্টুরেন্টের। মূলত কলকাতার কফি হাউসের আদলে তিনি এ প্রতিষ্ঠানটিকে গড়ে তুলেছেন। ভাবেনও সেভাবে।
বিস্তারিত কথা হলো, তার সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমার একটি স্বপ্নের বহিঃপ্রকাশ এই হিমু আড্ডা রেস্টুরেন্ট। আপাতত দ্বিতল হলেও তৃতীয় তলার কাজ শুরু করতে চাই অচিরেই। এরপর নিচে কফি হাউস। দোতালায় বই পড়ার ব্যবস্থা সঙ্গে পাঠাগার। তৃতীয় তলায় ব্রহ্মপুত্রের সৌন্দর্য স্নানে চিত্রকরদের ছবি অংকন প্লেস।
তিনি বলেন, বর্তমানে দ্বিতীয় তলায় সাহিত্য আড্ডার আয়োজন করা হচ্ছে। এতে ময়মনসিংহ শহর ও এর আশপাশের সাহিত্য আগ্রহীরা অংশ নিচ্ছেন। রুদ্ধদ্বার আলোচনা হচ্ছে। আর নিচে রয়েছে ব্রহ্মপুত্রের মনোরম সৌন্দর্য। দেখতে দেখতে পুলকিত নয়নে গরম কফিতে চুমুক শিহরণ জাগায়।
প্রশ্ন ছিল, রেস্টুরেন্টের নাম ‘হিমু আড্ডা’ কেন? উত্তরে এস এম তাকের হায়দার বলেন, আমার এই উদ্যোগটা সাহিত্যকে ঘিরে। কলকাতার কফি হাউস যেমন বিখ্যাতদের আড্ডাখানা; ঠিক তেমনি আমার এখানেও এলাকার কিশোর-কিশোরী, তরুণ, যুবাদের সাহিত্য মনস্ক করতে চাই। যেন তারা বড় কিছু হতে পারে। আর তার চেয়েও বড় কথা বর্তমান সমাজ বিপথে যাচ্ছে। নেশা, বিভিন্ন বদ অভ্যাস থেকে তাদের সৃজনশীলতায় মনোনিবেশ ঘটানো এমন একটি প্রতিষ্ঠান হতে চায় ‘হিমু আড্ডা’।
তিনি বলেন, এছাড়া আমার এই প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে এলাকার ২৪ জন তরুণের পার্টটাইম ও ফুলটাইম কর্মসংস্থানে সুযোগ হয়েছে। এতে আমি অন্তত অবদান রাখতে পেরেছি।
তিনি বলেন, শুধু কফিই নয়, চাইনিজ ফুডের সব ধরনের মেনুসহ ভারতীয় খাবার, দেশি বিভিন্ন পদের ভর্তা, শুঁটকি খাদ্য হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকা ও রাজশাহী থেকে আনা মোট ৫ জন বাবুর্চি এখানে কাজ করছেন।
নিজের ব্যক্তি জীবন সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রচণ্ড সাহিত্যপ্রেমী হলেও আমি টেকনোলজির মানুষ। ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতকোত্তর। বর্তমানে আমি ময়মনসিংহে মোবাইল অপারেটর বাংলালিংকের এরিয়া ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করছি। আমরা ৪ ভাই ১ বোন। বাবা আবদুর রহিম, তিনি ভূমি সহকারী কর্মকর্তা।
এস এম তাকের হায়দারের কাছে সব শেষ প্রশ্ন, যে ধরনের উদ্যোগ তিনি ব্যক্তিগতভাবে নিয়েছেন সেখানে সরকারি কোনো উদ্যোগ আসে না কেন?
তার জবাব, আমি নিজেই নদীর পাড়ে লেক করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসনের জন্য তা হয়নি। বিখ্যাত এ নদ পাড়ে বেসরকারি উদ্যোগ সরকার খুব একটা মেনে নেয়নি। তবে সরকার নিজেই কিছু একটা করতে পারে বলে মত দেন তিনি।
আর যদি এমনটা করা হয়, তবে ময়মনসিংহবাসী তো বটেই, সারাদেশ থেকে পর্যটক টানা যাবে এই মনোরম সৌন্দর্যের নদ পাড়ে। পাশে জয়নুল সংগ্রহশালা। বিখ্যাত চিত্রশিল্পী শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের উল্লেখযোগ্য চিত্রকর্মগুলো সংরক্ষিত আছে এখানে। শহরের উত্তর প্রান্তে পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে এটি অবস্থিত। তার পাশেই ব্রহ্মপুত্র পাড়ে বিনোদন কেন্দ্র অর্থাৎ খানিক বসার জায়গা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, আলোক সজ্জার ব্যবস্থা করা হলে এটি স্থানটি হতে পারে দেশের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্রগুলোর একটি।
স্থানীয়রা বলছেন, বিষয়টি সরকার খানিকটা গুরুত্ব দিলেই হয়। আর এখন এ নিয়ে গুরুত্ব কতখানি পরিলক্ষিত হয়, তাই দেখার বিষয়।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৫