ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

কুকরী-মুকরীতে গড়ে উঠছে পর্যটন কেন্দ্র

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৫
কুকরী-মুকরীতে গড়ে উঠছে পর্যটন কেন্দ্র ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চরফ্যাশনের কুকরী-মুকরী থেকে ফিরে: সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের গর্জন, নির্মল বাতাস, বাহারী ম্যানগ্র্যোভ বন, রাস্তার পাশে সারি সারি গাছ, নারকেল বাগান আর বালুর ধুম নিয়ে অপরূপ প্রাকৃতিক সাজে সাজানো এক জনপদ ভোলার চরফ্যাশনের কুকরী-মুকরী।

পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর প্রচীনতম এ জনপদটি নতুন করে আধুনিকতার ছোঁয়া পাচ্ছে।

বিভিন্ন প্রকল্প অনুমোদন হওয়ায় পর্যটনের পথে আরেক ধাপ এগিয়েছে এ জনপদ।

এরইমধ্যে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় দু’টি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, আধুনিক রেস্ট হাউজ ও পাখি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। এসব কার্যক্রম জুন মাসের মধ্যে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।

এছাড়াও বনের জীব-বৈচিত্র্যকে বাঁচিয়ে রাখতে বাহারী প্রজাতির বৃক্ষ-তরুলতা রোপণের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।

সূত্র বলছে, বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেঁষা জনপদ কুকরী-মুকরীতে ৭০’এর ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে বন বিভাগ বৃক্ষরোপণ করে। সেটি কুকরীর এক সবুজ বিপ্লব। সেই থেকে এ জনপদে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বৃক্ষের সবুজ দেয়াল হিসেবেই রক্ষা করে আসছে। বর্তমানে ১৩ হাজার ৯৪৬ একর জমি নিয়ে গড়ে উঠেছে প্রকৃতির সবুজ বেস্টনি।

এখানেই রয়েছে কাকড়া, বাইন, কেওয়া ও গেওয়াসহ নানা প্রজাতির বৃক্ষ। এসব গাছের সংখ্যা দুই কোটি ৫০ লাখেরও বেশি। এখানে রয়েছে সাড়ে সাত হাজার হরিণসহ বেশ কিছু বানর, ভাল্লুক, বন মোরগসহ বিভিন্ন ধরনের বৈচিত্র্যময় প্রাণী ও উদ্ভিদ। হরিণের পান করার জন্য মিঠা পানির সংকট দূর করতে একটি পুকুর তৈরি করা হয়েছে এখানে, আরো বেশ কিছু পুকুর তৈরির কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে।

বিভাগীয় বন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কুকরী-মুকরীকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে প্রায় নয় কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে আধুনিক রেস্ট হাউজ ও ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পাখি পর্যটন কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে। তিনতলা বিশিষ্ট রেস্ট হাউজে ২০টি আবাসিক রুম থাকবে।

এছাড়াও প্রশিক্ষণ, সভা, সেমিনার ও ওয়ার্কসপ কক্ষ থাকবে। থাকবে নিজস্ব জেনারেটর ও বিদ্যুৎ এবং সুপেয় পানির ব্যবস্থা। দেশী-বিদেশি পর্যটকদের সুবিধার্থে এসব কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। পাখি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে ঘুরতে আসা মানুষদের বসার স্থান হিসেবে ব্রেঞ্চ ও ছাতা দেওয়া হবে। এরইমধ্যে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। বিশেষজ্ঞ দল সয়েল পরীক্ষা করে গেছেন। এখন চলছে ডিজাইন ও প্লান প্রক্রিয়ার কাজ।

এসব তথ্য নিশ্চিত করে ভোলার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, চলতি বছরেই দু’টি প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। এতে কুকরী-মুকরী পর্যটকদের কাছে আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে, পাশাপাশি ভোগান্তিরও অবসান হবে।

তিনি বলেন, এরইমধ্যে এটি মানবসৃষ্ট বনে রুপান্তিত হয়েছে। বনে আরো কিছু সংখ্যক প্রাণী নিয়ে আসার প্রক্রিয়া চলছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সুন্দরবনের মতই কুকরী-মুকরী পূর্ণতা পাবে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সাগরের বুক চিরে জেগে উঠেছে বড় বড় বিচ্ছন্ন সবুজের দ্বীপ। সেখানে লাখ লাখ গাছের সমারোহ। শীত মৌসুমে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত হয়ে ওঠে এসব অঞ্চলের চারপাশ। কুকরীর বালুর ধুম ও নারিকেল বাগান মুগ্ধ করে ভ্রমণ পিপাসু মানুষকে। ছোট ছোট খালের দু’পাড় দিয়ে বৃক্ষের সমারোহ। নৌকায় ঘুরে প্রাণ জুড়িয়ে যায় বিনোদন প্রিয় মানুষের। এখানে বসেই সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। কুকরীতে বিদ্যুৎ না থাকলেও রাতে কুকরী যেন সৌর বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠে।

স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেলো, খুব শিগগিরই দুই মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন একটি সৌর বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বেসরকারি একটি সংস্থা। সেটি চালু হলেই কুকরীর দুই কিলোমিটার এলাকার বিদ্যুৎ ভোগান্তির অবসান হবে।
 
কুকরী-মুকরী রেঞ্জ কর্মকর্তা সাজেদুল আলম বলেন, চর পাতিলা, পশ্চিম চর দিঘল, চর দিঘল, চর আলীম, চর জমিনসহ বেশ কিছু চর থাকলেও আরও নতুন দু’টি চর জেগে উঠছে কুকরী-মুকরীতে। সেখানেও বৃক্ষ রোপণের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। মানুষকে মুগ্ধ করার পথে এগুচ্ছে কুকরী-মুকরী।

ঘুরতে আসা মাকসুদ, রাশেদ ও খোকন জানান, এর আগে অনেকবার কুকরী-মুকরীর নাম শুনেছি, কিন্তু কখনও আসা হয়নি। এখন কুকরীতে এসে এর সৌন্দর্য দেখে প্রাণ জুড়িয়ে গেলো। এখন তো এখানে থেকে যেতে ইচ্ছে করছে। এখানে আরো কিছু সুযোগ সুবিধা বাড়িয়ে দিলে অনেক ভালো হবে।

স্থানীয় বাসিন্দা ইব্রাহিম, কালাম ও জাফর বলেন, দেশের অন্য স্থানে যেতে ঝক্কি ঝামেলা বেশি থাকলেও কুকরীতে আসার তেমন কোনো ঝামেলা নেই।

অনায়াসেই নৌপথে এখানে আসা যায়। এতে খরচও খুবই কম। কিন্তু মানুষের থাকা-খাওয়ার সু-ব্যবস্থা না থাকায় ঘুরে দেখার পর ফিরে যেতে হয়।

শাহে আলম, সাগর ও জুয়েল বলেন, শীত মৌসুমে কুকরীতে অন্তত ৫০/৭০টি পিকনিক দল ঘুরতে আসে। তারা পিকনিক করে চলে যায়। এখানকার সৌন্দর্য দেখে অনেকেই মুদ্ধ।

কুকরী-মুকরী ইউনিয়ন পরিষদ(ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন বলেন, দেশের মধ্যে কুকরী-মুকরী একটি পরিচিত নাম। এখানে দেশ বিদেশ থেকে মানুষ ঘুরতে আসে। কিন্তু আধুনিক সুবিধার অভাবে তারা প্রকৃতির পুরোপুরি তৃপ্তি গ্রহণ করতে পারছেন না। এখানে আধুনিক হোটেলসহ থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা হলে আরো বেশি মানুষ ভীড় জমাতো।

সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, পর্যটন কেন্দ্র কুকরী-মুকরীতে যেন আরো কিছু প্রকল্প দেওয়া হয়। এতে একদিকে যেমন এলাকার উন্নয়ন হবে অন্যদিকে দেশের সুনাম বয়ে আনবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।