ইঁদুরের ওপর আমরা কমবেশি সবাই বিরক্ত। আর বিরক্ত হবো নাই বা কেন? ছোট্ট এ প্রাণীটির যন্ত্রণায় বাড়ির কোনো কিছুই যে ভালো রাখার জো নেই।
ইঁদুরকে শায়েস্তা করতে অনেকে বাড়িতে বিড়ালও পুষছেন। একমাত্র বিড়ালই পারে দুষ্টু এই প্রাণীটিকে কব্জা করতে। প্রাণীটি আকারে ছোট কিন্তু তার দুষ্টুমির তালিকা অনেক বড়।
তবে কখনও কী ভেবে দেখেছেন যে এক আঙুল সমান এই প্রাণীটি যদি আকারে আর একটু বড় হতো তাহলে কি হতো! উত্তরটা সোজা। নিশ্চই দুষ্টুমি করে রাতের ঘুম হারাম করে দিত আর কি! তবে এটা কি জানেন যে এক সময় ইঁদুর সত্যিই আকারে অনেক বড় ছিল?
চোখ কপালে উঠলেও এটাই সত্যি। এখন থেকে প্রায় তিন মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে বিশালাকৃতির ইঁদুরের বাস ছিল। ওজনও ছিল প্রায় এক টন! চার পায়ে দিব্যি খাঁড়া হয়ে যেত তারা। আর ছিল বাঘের মতোই শক্তিশালী। পাঁচ ফুট লম্বা জোসেফোআর্টিগাসা নামের এই ইদুঁর দেখতে ছিল অনেকটা শূকর ও বিভারের মতো।
জোসেফোআর্টিগাসাদের বসবাস ছিল দক্ষিণ আমেরিকায়। সেসময়ও তাদের শত্রু ছিল বিড়াল ও মাংসভোজী পাখিরা।
কানাডার টরেন্টোর ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড. ফিলিপ কক্স জানান, জোসেফোআর্টিগাসা তাদের ধারালো দাঁত কামড়ের তুলনায় মূলত মাটিতে গর্ত খুঁড়তে ও শিকারের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতো।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সময়ে হাতিরা যেভাবে তাদের দাঁতের ব্যবহার করে। ঠিক সেভাবেই সেসময়ে জোসেফোআর্টিগাসারাও তাদের দাঁত ব্যবহার করতো।
উরুগুয়ের স্যান জোসেতে পাওয়া প্রাচীন খুলির ফসিল দেখে তিনি কম্পিউটারে জোসেফোআর্টিগাসা শ্রেণীর ইঁদুরের গঠনতান্ত্রিক মডেল তৈরি করেন। ফসিলটি পরবর্তীতে মন্টেভিডিও জাতীয় ইতিহাস জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হয়।
অত্র বিষয়টি এনাটমি জার্নালে প্রকাশিত হয়। একই সঙ্গে ইঁদুরটির দেহতত্ত্ব নিয়ে আনুমানিক ধারণা ও বিশ্লেষণও করা হয় পরবর্তীতে।
সংশ্লিষ্ট ধারণা অনুযায়ী, প্রাণীটি লম্বায় প্রায় দশ ফুট। কপাল থেকে নাকের অংশটা সুচালো আকৃতির। লেজ আকারে খুব ছোট। চোয়াল অপেক্ষাকৃত অনেক বড়। ছোটখাটো প্রাণী অনায়েসেই গিলে ফেলতে পারে এমন। আর রয়েছে চার ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা তীক্ষ্ণ ধাঁরালো দাঁত।
ইদুঁরটির সর্বপ্রথম খোঁজ মেলে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ বছর আগে। এর আগেও ২০০০ সালে ভেনেজুয়েলাতে আট মিলিয়ন বছরের পুরোনো বিশালাকৃতির ইদুঁরের ফসিল পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৫