ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

ফুটেছে বসন্তের ফুল

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৫
ফুটেছে বসন্তের ফুল

ঢাকা: ‘আহা আজি এ বসন্তে, কত ফুল ফোটে। কতো পাখি গায়।

আহা আজি এ বসন্তে। ’ রবীন্দ্রনাথের এ গানটি শুনলেই মনে পড়ে বসন্তের কথা। আর বসন্ত মানেই ফুলের সমারোহ। ফুল মানেই রঙের মিলন মেলা।

এইতো আর মাত্র দিন কয়েক বাদেই প্রকৃতি পাবে বসন্তের ছোঁয়া। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সবাই সাদরে বরণ করবে ঋতুরাজ বসন্তকে। সেই খুশিতে গাছের শাখে শাখে ফুটবে হরেক রকম ফুল।

বাঙালি এক কথায় বেশ ভাগ্যবানই বলতে গেলে। কারণ ছয় ঋতুর এ দেশে প্রতিটি ঋতুতেই ফোটে স্বতন্ত্র্য কিছু ফুল। এরা ঋতুর আগমনী বার্তা নিয়ে আসে। গোটা ঋতু জুড়ে আবেশ ছড়িয়ে ঋতুবদলের মধ্য দিয়ে ছুটি নেয় । শুরু হয় নতুন কোনো ফুলের দিন।

শীতের শেষ ও বসন্ত শুরুর মাঝামাঝি সময়ই প্রকৃতি নিজেকে পাল্টে নেওয়ার প্রস্তুতি নেয়। এসময় থেকেই গাছে ফুলের মুকুল দেখা দেয়। ধূসর কুয়াশা সরে গিয়ে বাগানজুড়ে খেলা করে সোনারোদ। আর ঋতুরাজের রাজসভায় আগমন ঘটে রঙিন সব ফুলের।

শিমুল

শিমুল বসন্তের ফুল। তবে প্রকৃতিতে এর আগমন ঘটে শীতের শেষ থেকেই। টকটকে লাল রঙের এ ফুলটি শুধু মানুষকেই নয়, আকৃষ্ট করে পাখিদেরও। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফুলটি আফ্রিকা, ভারতীয় উপমহাদেশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পূর্ব এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়াতেও জন্মে। ফাল্গুনে নিজ রূপের আভা ছড়ানোর পর চৈত্রের মাঝামাঝি সময়ে শিমুল গাছ তুলা ছড়ায়। গাছটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ৯৯ ফুট থেকে ১৩২ ফুট লম্বা হয়। মূলত জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে শিমুল গাছের সব পাতা ঝরে যায়। এর পরপরই গাছে আসে রক্তরঙা শিমুল। শিমুল ফুলের দৈর্ঘ্য ৩০ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার।

পলাশ

পলাশকে বলা হয় বনের আগুন। বলবে নাই বা কেন! নজরকাড়া এ ফুলটি গাছের শাখায় শাখায় ধরিয়ে দেয় কমলা রঙা আগুন। পলাশ ফুল বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতীয় উপমহাদেশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, নেপাল, শ্রীলংকা, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায়ও জন্মে। পলাশ ফুলের রঙ দিয়ে দোলযাত্রায় হোলি খেলা হয়। গাছটি লম্বায় প্রায় ৫০ ফুট। পলাশ গাছ খুব ধীর গতিতে বাড়ে। ২.৫ সেন্টিমিটার লম্বা ফুলের পুষ্পস্তবক প্রায় ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা হয়।

গাঁদা

বসন্তে গাঁদা ফুলের ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়। বসন্তের সাজসজ্জায় গাঁদাফুলের বেশ প্রাধান্য রয়েছে। গাঁদা ফুল হলুদ, সোনালি, কমলা, সাদা ও মেরুন রঙের হয়। তবে আমাদের দেশে শুধুমাত্র হলুদ ও কমলা রঙের গাঁদা ফুলেরই চাষ হয়। যশোর, ঝিনাইদহ, চট্টগ্রাম, সাভারসহ বেশ কয়েকটি জেলায় প্রচুর গাঁদাফুলের চাষ হয়।

ডালিয়া

বাগানে হরেক রঙের ডালিয়া পুরো বাড়ির চিত্রকেই পাল্টে দেয়। রঙিন এ ফুলেরা সগৌরবে জানান দেয় বসন্তের। আদি বাস গুয়েতেমাল‍ায় হলেও আমাদের দেশকে রঙে রঙে সাজিয়ে তুলতে ভোলেনি এরা। লাল, হলুদ, গোলাপি, বেগুনি, সাদা ও মিশ্র রঙের ডালিয়া ফুল রয়েছে। ডালিয়া মূলত নাতিশীতোষ্ণ আবওহাওয়ায় জন্মে। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা ও গরমে এরা ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে না।

চন্দ্রমল্লিকা

শীতের মাঝামাঝিতে ফোটে চন্দ্রমল্লিকা। ফুলটি বহির্বিশ্বেও ব্যাপক জনপ্রিয়। হরেক রঙের এ ফুলটি অন্দরসজ্জা ও রূপসজ্জায়ও রয়েছে প্রথম সারিতে। চন্দ্রমল্লিকার আদিজন্ম জাপানে। ফুলটির আরও একটি নাম ক্রিসেন্থিমাম। মূলত ক্রিসমাস অর্থাৎ বড়দিনের সময়ই চন্দ্রমল্লিকা ব্যাপকহারে পাওয়া যায় বলেই এ নাম।

মাধবীলতা

ফুলটি প্রায় সবারই চেনা। আর নাম তো রয়েছে গান, গদ্য আর কবিতায়। কিন্তু নাম আর ফুল, দু’টোকে এক করতে পারেননি অনেকেই। তবে আলাদা করে একে বসন্তের ফুল বলা বোধ হয় ঠিক হবে না। কারণ এটি সারাবছরই জন্মে। পাঁচ পাপড়ির এ ফুলটির রঙ সাদা ও গোলাপি হয়।

সন্ধ্যামালতী

নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে, এর সুবাস দিনে নয় ঠিক সন্ধ্যার পরই ছড়ায়। সারাদিন সৌরভ ছড়িয়ে সব ফুলেরা যখন রাতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে, তখনই নিজেকে সুরভিত করে সন্ধ্যামালতী।

বাংলাদেশ সময়: ০১০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।