ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

আমি বলি প্রেম, তুমি বলো বন্ধুত্ব

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৫
আমি বলি প্রেম, তুমি বলো বন্ধুত্ব

ঢাকা: ফোনটা বাজতেই ঘুম ভেঙে গেলো নিলয়ের। ঘুম জড়ানো গলায় হ্যালো বললো সে।

ওপাশ থেকে মোহনা ধমকে উঠলো, কি রে এখনো ঘুমাচ্ছিস! আজকে পরীক্ষা খেয়াল আছে তোর, উঠে পড়!

ধড়মড় করে উঠে পড়লো নিলয়। বললো, ঠিক আছে, তুই লাইব্রেরিতে থাক, আমি এক্ষুণি আসছি।

লাইব্রেরিতে বসে পড়ার মাঝে কখন যে গল্প জুড়ে দিল দু’জনে, খেয়ালই নেই! পরীক্ষা শেষে একসঙ্গে বাড়ি ফেরা, গ্রুপ স্টাডি, চকলেট-কুকি ভাগাভাগি, সকালের সূর্য আর সন্ধ্যার তারা, সবকিছুতেই যেন বন্ধটিকে পাশে চাই। বন্ধু ছাড়া হাজার মানুষের ভিড়েও যেন নিজেকে মনে হয় একলা নক্ষত্র।

দেখা তো হয় রোজই। তবে দেখা-অদেখার মাঝের সামান্য দূরত্বটা যেন সাগর সমান মনে হয় নিলয় আর মোহনার। সম্পর্কের শুরু তো হয়েছিল বন্ধুত্ব দিয়েই। কিন্তু দিন যতই যাচ্ছে ততই বাড়ছে সম্পর্কের দৃঢ়তা, অহেতুক দুশ্চিন্তা আর পাশে থাকার আকুতি। ঘুমন্ত শহরে জেগে থাকা দু’টো প্রাণীর মাঝে এ নিঃস্বার্থ সম্পর্ক আসলে কী! বন্ধুত্ব না প্রেম।

এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়ায় হাজারো নিলয় আর মোহনা। অনেকেই ভোগেন দ্বিধায়। যদি নিভৃত ভালোবাসা প্রকাশ করতে গিয়ে মমতার সম্পর্কটাই ভেঙে যায়, তবে কী হবে! আবার অনেকে বুঝে উঠতেই পারেন না এ অবাধ অনুভবের সত্যিকার অর্থ। আমাদের এ আয়োজন এমনই ভালোলাগার বাঁধনে আবদ্ধ হাজারো নিলয়-মোহনার জন্য।

সম্পর্কের এপার-ওপার

বন্ধুত্ব পৃথিবীর সুন্দরতম সম্পর্কের একটি। এতে রয়েছে মধুরতা, হাসি-আনন্দ, দু:খ-কষ্টের ভাগাভাগি আর ভালোবাসার খুনসুটি। এ মধুর সম্পর্কটি যেমন একদিনে তৈরি হয় না, তেমনি ভেঙে যেতে পারে ছোট কেনো ভুলে। তবে স্মৃতি রয়ে যায় হৃদয়ের মণিকোঠায়। বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসা ব্যাপারটি এখনকার সময়ে প্রচলিত স্বাভাবিক একটি ঘটনা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ার সময় সহপাঠীদের মধ্যে বন্ধুত্বের প্রগাঢ়তাই সূচনা করে সম্পূর্ণ নতুন একটি সম্পর্কের।

পাশে চাই তোকে

গ্রুপের মধ্যে ভালো বন্ধু সবাই। কিন্তু তার মাঝেও কেউ যেন কারও প্রতি একটু বেশিই খেয়াল রাখছে। একজনের চলাফেরা, খাওয়া-দাওয়া, পড়াশোনা আর নিরাপত্তা সবকিছু নিয়েই যেন একটু বেশি উদ্বিঘ্ন থাকেন অন্যজন। অনেক সময় অপর পাশ থেকেও একই রকম সাড়া পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে পরবর্তী ধাপে দু’জনে একসঙ্গে পা রাখেন। তবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। অনেক সময় ব্যাপারটা একতরফা হতে পারে। একজনের প্রতি অতিরিক্ত খেয়াল অপরজনের বিরক্তি ও অস্বস্তির কারণ হতে পারে। হয়তো একজন শুধু বন্ধুর চোখেই দেখছেন, যেখানে অপরজন বন্ধুত্বকে ভালোবাসায় রূপ দিতে চাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে সরাসরি কথা বলে ব্যাপারটা পরিষ্কার করে নেওয়া ভালো। যদি দেখা যায়, কাছের কোনো বন্ধু আপনার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছেন এবং আপনি তাকে বন্ধুর দৃষ্টিতেই দেখতে চান; তাহলে তাকে বুঝিয়ে বলুন, বন্ধুত্বই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পর্ক যার কোনো শেষ নেই। আজীবন আপনি তার বন্ধু হয়েই থাকতে চান। তিনি তো আপনার বন্ধুই। দেখবেন, ঠিক বুঝে যাবেন।

একই চলার পথ

জীবনে চলার পথে বন্ধুত্বের কোনো বিকল্প নেই। আর ভালোবাসা, সেতো জনম জনমের বন্ধন। সুখী হয়ে বাঁচতে হলে ভালোবাসার মানুষের পাশে থাকা ভীষণ প্রয়োজন। আর বন্ধু ও ভালোবাসার মানুষ যদি হয় একই ব্যক্তি, তাহলে তো কথাই নেই! এ স্বর্গতুল্য সম্পর্কটিকে সতেজ রাখতে হৃদয়ে রোপন করুন পাঁচটি গন্ধরাজ- বিশ্বাস, সম্মান, ধৈর্য্য, অনুভূতি আর গভীর মূল্যবোধ। দেখবেন, আপনার হৃদয়ে জন্ম নেওয়া এ পাঁচটি গন্ধরাজ একদিন প্রস্ফুটিত হয়ে গন্ধে গন্ধে মাতিয়ে তুলবে চারপাশ। আপনাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে ভালোবাসার স্রোতে।

যা মনে রাখবেন

দু’জনকেই পারস্পরিক বিশ্বাস ও স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, এ বিশ্বাস যেন কখনো বিষ না হয়ে দাঁড়ায়।   একে অন্যের পছন্দ-অপছন্দ ও ধ্যান-ধারণার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে ও সম্মান দিতে হবে। পারস্পরিক সহনশীলতা ও মূল্যবোধ সম্পর্ককে আরও সহজ করে তোলে। সবচেয়ে বড় দিক হলো, একে অন্যের প্রতি যত্নশীল হতে হবে।

তাই বন্ধুরা, নিজের ভালোবাসাকে মধুর করার প্রতিজ্ঞা করুন আজ থেকেই। ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

বাংলাদেশ সময়: ০২২২ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।