ঢাকা: আবারও বছর ঘুরে দুয়ারে বাংলা নববর্ষ। একই সঙ্গে হালখাতা উৎসব।
বাংলা নতুন সনের প্রথমে সবার কাছে নতুন হিসাবখাতা পৌঁছে দিতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তাদের প্রায় দিন-নেই রাত-নেই অবস্থা!
পুরান ঢাকার শাঁখারি বাজার, জিন্দাবাজার ও বাবু বাজারে ঘুরে দেখা যায়, ছাপাখানারকর্মীরা টালিখাতা বাঁধাই নিয়ে ব্যস্ত। বৈশাখের শুরুতেই পুরান ঢাকার এ জায়গাগুলোতে টালিখাতা তৈরির ধুম পড়ে। স্থানভেদে দেশের অনেক জায়গায় টালিখাতা তৈরি হলেও, ঢাকাতেই টালিখাতা সবচেয়ে বেশি তৈরি হয় বলে জানান তারা।
বাবু বাজারের সাইদ হাসান আলী রোডে গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র। বাংলা নতুন সালকে ঘিরে টালিখাতা তৈরি ও বেচাকেনার হালচিত্র বিষয়ে জানতে চাইলে ইউসুফ প্রিন্টার্সের কর্ণধার উজ্জ্বল মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, বৈশাখ এলে হালখাতার জন্য টালিখাতার বেচাকেনা একটু বাড়ে।
তিনি বলেন, তবে গত কয়েক বছর ধরে টালিখাতার ব্যবহার যেন দিন দিন কমে আসছে। আগে যেমন ঢাকার বাইরে থেকেও টালিখাতা তৈরির প্রচুর অর্ডার আসতো, এখন আর তেমন আসে না। এখন ওই সব এলাকায় স্থানীয়ভাবে অনেক কারখানা গড়ে ওঠায় আমাদের পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের ব্যবসা তেমন চলে না।
‘ব্যবসা খারাপ-ভালো যাই হোক না কেন, ঐতিহ্যের আবহ থেকে আজও পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ীরা বৈশাখ এলে টালিখাতা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন’- বলেন তিনি।
টালিখাতা ছোট, বড়, মাঝারি কয়েক প্রকার হয়ে থাকে। টালিখাতার মলাটের ডিজাইন ও দিস্তা প্রতি হয় এর দাম। এক থেকে আট দিস্তা পর্যন্ত টালিখাতা হয়ে থাকে। পাইকারি বাজারে টালিখাতার দাম দিস্তা প্রতি ৫০ টাকা আর খুচরা বাজারে দাম পড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
তবে অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা লালসালু কাপড়ে বাঁধাই করা টালিখাতাগুলোই বেছে নেন।
মদিনা প্রিন্টার্সের সত্ত্বাধিকারী আফজাল হোসেন বলেন, আগে অনেকেই লালসালু কাপড়ে বাঁধাই টালিখাতা হালখাতার জন্য বেশি ব্যবহার করতো। বৈশাখের এক থেকে দুই মাস আগে ৫শ’ থেকে ৬শ’ পিস খাতা অর্ডার পেতাম। যার মধ্যে দুই ভাগই লালসালু কাপড়ের খাতার অর্ডার থাকতো আর একভাগ থাকতো বিভিন্ন রঙয়ের।
তিনি জানান, হালখাতা উৎসবের আমেজটা এখন অনেক কম বললেই চলে। কারণ অনেকে আজকাল বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে খাতার বদলে কম্পিউটার ব্যবহার করছেন। যার ফলে টালিখাতার চাহিদাও আর তেমন নেই। তেমনি আগের আবহ ধরে ক্রেতা-বিক্রেতা মধ্যে পাওনা চুকিয়ে মিষ্টি মুখের প্রচলনও কমেছে।
তবে আগের মতো হালখাতা উৎসবের তেমন জৌলুস না থাকলেও, পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের মাঝে এখনও হালখাতাকে ঘিরে ঐহিহ্যবাহী মিষ্টি মুখের আয়োজন হয়ে থাকে।
পুরান ঢাকার শাঁখারি বাজারের স্বর্ণের দোকান, শ্যামবাজারের মুদি দোকানগুলো, তাঁতি বাজার ও ইসলামপুরের কাপড়ের দোকানগুলোতে হালখাতার আয়োজন বেশি ঘটা করেই হয়ে থাকে। চৈত্র মাসের প্রথম দিকেই ব্যবসায়ীরা তাদের নিয়মিত ক্রেতাদের নিমন্ত্রণ পাঠানোর কাজ শুরু করে দেন।
এ নিয়ে তাঁতী বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী রূপক ঘোষ বাংলানিউজকে বলেন, টাকা-পয়সা বাকি রয়েছে এমন ক্রেতাদের ইতোমধ্যে হালখাতার নিমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে। আশা করি নতুন বছরের শুরুটা ভালো হিসাব দিয়েই শুরু করতে পারবো।
বাংলাদেশ সময়: ০১৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৫
এসএস/আইএ