ঢাকা: লিন অর্টন পশু হাসপাতালে কাজ করতেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই তিনি ছিলেন প্রাণীদের প্রতি বিশেষ দয়ালু।
অতি আদরের ছিলো সেখানকার প্রতিটি মাছ। বিশটি মাছের মধ্যে একটি মাছের নাম ছিল জর্জ। এটি একটি গোল্ডফিশ। লিন দশ বছর আগে জন্মদিনের উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন গোল্ডফিশটি। সেই থেকেই জর্জ লিনের পুকুরে বেড়ে উঠেছে।
পঞ্চাশ বছর বয়সী লিন বলেন, জর্জ হলো আমার সব মাছের মধ্যে একটি মাছ, যাকে আমি শনাক্ত করতে পারি।
লিনের সবগুলো মাছের নাম রেখেছে তার পনেরো বছর বয়সী ভাগ্নি বেকি।
লিন অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়ার হোপারস ক্রসিংয়ের বাসিন্দা। লিন জানান, কয়েক মাস আগে তিনি খেয়াল করেন জর্জ অন্য মাছের তুলনায় একটু অস্বাভাবিক আচরণ করছে। পরে দেখা গেলো জর্জের মাথার বাম পাশে একটু ফোলাভাব।
সঙ্গে সঙ্গেই পার্টনার পিপকে ব্যাপারটা জানান তিনি। পিপ ব্যাপারটা পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেয় জর্জের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখার।
কিন্তু কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই লিন দেখলেন যে জর্জের মাথায় সেই ফোলাভাবটি অস্বাভাবিক আকারে বেড়ে উঠেছে। এর আকার অনেকটা জলপাইয়ের মতো হয়ে গিয়েছিলো।
আতঙ্কগ্রস্ত লিন তার সহকর্মী ও পশু চিকিৎসক ত্রিস্তেনের কাছে নিয়ে যান জর্জকে। ত্রিস্তেন নিশ্চিত করেন যে এটা টিউমার।
ত্রিস্তেন লিনকে আশ্বাস দেন, জর্জের এই টিউমার সার্জারি করে বের করে ফেলা সম্ভব। এই সার্জারি ত্রিস্তেন নিজেই করবেন।
লিন বলেন, আমি একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কারণ অস্ত্রোপচার করতে হলে জর্জকে তো পানি থেকে তুলে আনতে হবে। এতোটা সময় পানি ছাড়া সে কীভাবে বাঁচবে?
তবে পশু চিকিৎসক লিনকে জানান, একটি সরু টিউব জর্জের মুখের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হবে, যা তার ফুলকার মধ্যে অক্সিজেন সরবরাহ করবে। ফলে তার জীবনঝুঁকি থাকবে না ও সহজেই সার্জারি করা সম্ভব হবে।
জর্জের এই সার্জারি করতে খরচ হয়েছে প্রায় দুইশো ডলার যার বাংলাদেশ মূল্য প্রায় সাড়ে পনের হাজার টাকা।
এ প্রসঙ্গে লিন বলেন, যদিও খরচটা তুলনামূলক একটু বেশি তবুও এর পরিবর্তে জর্জকে মৃত্যুর হাতে তুলে দেওয়া আমার জন্য মোটেও সহজ ছিলো না। আমরা একসঙ্গে অনেক দিন বাঁচতে চাই।
গত বছর সেপ্টেম্বরের ৪ তারিখ লিন জর্জকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। ত্রিস্তেন অতি যত্নে অস্ত্রোপচার করেন। ৪৫ মিনিটের সার্জারিতে বেরিয়ে আসে টিউমারটি। টিউমারটি অপসারণের পর সূক্ষ্ম সেলাই দেওয়া হয়। পরে জর্জকে অতি যত্নে বাড়ি ফিরিয়ে আনেন লিন।
লিন উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন, আমি জানতাম এটা কাজ করবে। এই ঘটনার পর আমার গোল্ডেন ফিস যেন রীতিমতো তারকাই হয়ে গেল সবার কাছে।
লিন আরও বলেন, জর্জকে ফের পুকুরে ফিরিয়ে দেওয়ার পর সে আবার সব বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতে লাগলো।
এতে শুধু লিনই নন, ডাক্তার ত্রিস্তেনও ভীষণ খুশি। ত্রিসনেতো লিনকে বলেই বসলেন, জর্জের আরও বিশ বছর তোমায় সঙ্গ দেওয়া উচিত!
বাংলাদেশ সময়: ০২৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৫
এএ