ঢাকা: সবসময়ই গ্রিক পুরাণের দেবতারা মানুষের আগ্রহের বিষয়। দেব-দেবীদের মায়াবী অবয়ব ও রোমাঞ্চকর গল্প সবাইকে বিমোহিত করে।
কখনও কখনও কল্পকাহিনীও হয়ে ওঠে জীবন্ত। আর তা যদি হয় গ্রিক পুরাণের পাতা থেকে উঠে আসা, তবে তো কথাই নেই!
তাদের চমকপ্রদ গল্প নিয়েই এবার বিশেষ ধারাবাহিক আয়োজন। দ্বিতীয় পর্বে থাকছে জিউস ও আর্টেমিসের গল্পকথা!
জিউস
গ্রিক পুরাণে জিউস ছিলেন দেবতাদের রাজা ও দেবী হেরার পতিপরমেশ্বর। রোমানদের কাছে তিনি জুপিটার নামে পরিচিত। জিউস হলেন বজ্রপাত, বৃষ্টি, আকাশ, স্বর্গ ও সব দেবতাদেরও দেবতা। টাইটানদের বিরুদ্ধে বিপ্লবের মাধ্যমে তিনি সব দেবতার মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেন।
অলিম্পিয়ান এ দেবরাজ ছিলেন টাইটান ক্রোনাস ও রিয়ার সন্তান। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, টাইটান ও অলিম্পিয়ান দেবতাদের মধ্যে পার্থক্য কি! স্বর্গপিতা ইউরেনাস ও ধরণীমাতা গাইয়ার প্রথম বারো সন্তানই মূলত টাইটান। এদের মধ্যে ক্রোনাস একজন। টাইটান দেবদেবীরা গ্রিসের ওথরেস পর্বতে বাস করতেন। ক্রোনাস তার পিতাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। ফলে ধরণীমাতা গাইয়া ক্রোনাসকে অভিশাপ দেন, একদিন ক্রোনাসের সন্তানও তাকে ক্ষমতাচ্যুত করবে।
এদিকে মায়ের এ অভিশাপে ক্রোনাস খুবই আতঙ্কিত হয়ে পড়লেন। তাই স্ত্রী রিয়া সন্তান জন্ম দেওয়ার পরই তিনি জ্যান্ত খেয়ে ফেলতেন। কিন্তু ক্রোনাসের এ নিষ্ঠুর আচরণে রিয়া আর সামলাতে পারলেন না নিজেকে। এরপর তার কনিষ্ঠ ছেলের জন্মের পর তিনি একটি পাথরকে কাপড়ে জড়িয়ে ক্রোনাসের কাছে নিয়ে গেলেন। ক্রোনাস এক মুহূর্ত দেরি না করে নিজের সন্তান ভেবে পাথরটি খেয়ে ফেললেন। আর রিয়া তার আদরের সন্তানকে লুকিয়ে রাখলেন একটি গুহায়। এই ছোট ছেলেই হলেন দেবতা জিউস।
জিউসকে লালন-পালন করেছেন তার দাদিমা গাইয়া নিজেই। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর জিউস টাইটানদের যুদ্ধে হারান ও পিতাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। জিউস তার পিতার পাকস্থলি থেকে তার ভাইবোনদের উদ্ধার করেন। এরপর তিনি তার ভাইবোনদের নিয়ে অলিম্পিয়াস পাহাড়ে বসতি স্থাপন করেন। সেই থেকে তারা অলিম্পিয়ান দেব-দেবী হিসেবে পরিচিত। যদিও জিউস ছিলেন ভাইবোনদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট, তারপরও ভাইবোনেরা তাকে পিতা বলে ডাকত ও সম্মান করতো।
জিউস নামের অর্থ আলোকিত। জিউসের বেশ কয়েকটি প্রতীক রয়েছে। এর মধ্যে বজ্রপাত একটি। যেহেতু তিনি বজ্রপাতের দেবতা, তাই বজ্রপাত তার প্রতীক হবে এটাই স্বাভাবিক। জিউস বজ্রপাতকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতেন। এছাড়াও ঈগল, ষাঁড় এবং ওক গাছও তার প্রতীকরূপে ব্যবহৃত হয়।
আর্টেমিস
কুমারী দেবী আর্টেমিস। তিনি গ্রিকদের প্রকৃতি, জন্ম ও শিকারের দেবী। আর্টিমিসকে রাত ও বনের দেবীও বলা হয়। বনের এ দেবীর সর্বক্ষণের সঙ্গী হরিণ, ভাল্লুক ও শিকারি কুকুর।
আর্টিমিস ছিলেন জিউস ও লেটোর কন্যা এবং অ্যাপোলোর জমজ বোন। পুরাণ অনুযায়ী, তার জন্মের সময় তিনি নিজেই তার মাকে সহায়তা করেছিলেন।
আর এই জন্ম-মৃত্যুর চক্রটি তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন বলে মনে করেন তার অনুসারীরা।
নারীশক্তির নিদর্শন এ দেবী স্বাধীনতা, সাহসিকতা, আত্মবিশ্বাস ও শক্তির প্রতীক। কথিত রয়েছে, আর্টেমিসের বয়স যখন তিন, তখন বাবা জিউসের কাছে নিজের জন্য তীর ধনুক চেয়েছিলেন। জিউস তার আদরের কন্যাকে খুব সুন্দর তীর-ধনুক উপহার দেন। তার শৌর্যে বিমোহিত হয়েছিলেন স্বর্গের সব দেব-দেবীরা। তবে আর্টেমিস ছিলেন প্রতিহিংসাপরায়ণ ও আবেগপ্রবণ।
আর্টিমিসের বেশ কিছু মূর্তিতে তাকে একটি হরিণ ও চিতাবাঘ বা সিংহের সঙ্গে দেখা যায়। আর তার মূর্তির মূল সৌন্দর্য্য হলো তার বিশাল বড় দু’টি ডানা। আবার বেশকিছু মূর্তিতে আর্টেমিসকে দুইজোড়া হরিণের একটি রথে চড়তেও দেখা যায়।
আর্টেমিস রোমানদের কাছে ডায়ানা নামে পরিচিত। ডায়ানা রোমানদের চাঁদের দেবী। ডায়ানা কুমারী দেবী হলেও তিনি জন্ম নির্ধারণ করেন বলে নারীরা গর্ভধারণের জন্য তার উপাসনা করে থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৫
এসএস
** গ্রিক দেব-দেবীর উপাখ্যান-১