বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক ঘুরে: পশুপাখি ও জীবজন্তুকে রক্ষার্থে ২০১০ সালের মার্চ মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক’ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। সাফারি পার্কের নামকরণ বঙ্গবন্ধুর নামে করা হলেও জাতির পিতার কোনো ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়নি।
অথচ প্রকল্পের ডিপিপি’তে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) স্পষ্টভাবে ফোয়ারাসহ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ও বিভিন্ন প্রকারের ম্যুরাল স্থাপন করার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল।
সাফারি পার্ক ঘুরে দেখা গেছে, এখনও প্রকল্প পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। সাফারি পার্কের এক ফরেস্টার বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হতে সময় লাগবে আরো সাত বছর। এছাড়া বাড়াতে হবে প্রকল্পের ব্যয়ও। ’
২০১০ সালের মার্চে ৬৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকার প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল। শেষ হওয়ার কথা ছিল ডিসেম্বর ২০১২ সালে। এরই মধ্যে প্রকল্পের ব্যয় কয়েক দফা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২৫ কোটি ৫৮ লাখে। সময়ও বেড়ে দাঁড়িয়েছে জুন ২০১৭ সাল নাগাদ।
প্রকল্পের ডিপিপিতে উল্লেথ ছিল, অন্য অনেক বন্যপ্রাণির মতো নেকড় বাঘ, চিতাবাঘ, গন্ডার ও নীলগাই সংগ্রহ করা হবে। কিন্তু এখনও সাফারি পার্কে এই সব প্রাণি যুক্ত করা হয়নি।
পার্ক মিলনায়ন ও গন্ডার কর্নারের কাজ এখনও অর্ধেক বাকি। অন্যদিকে, সাদা সিংহের কর্নারটির পরিসর খুবই কম। এছাড়া বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে তোলা এই সাফারি পার্কে জনবলও প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম-- মাত্র ৪৭ জন!
এ ব্যাপারে সাফারি পার্ক সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বললে তারা অভিমত দেন, কম করে হলেও ২০০ জনবল ছাড়া পার্কের রক্ষণাবেক্ষণ মোটেই সম্ভব নয়। এছাড়া, সাফারি পার্কের ভেতরের সড়কগুলোও মানসম্পন্ন নয়। এ-কারণে দর্শনার্থীদের চলাচলে নানা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ অনেক নির্মাণকাজও বাকি আছে। পার্কের ভেতরে নেই ২০০ মিটার পার্ক অফিস, কর্মকর্তাদের জন্য ৪০০ বর্গ মিটার ডরমেটরি, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য ৮০০ বর্গ মিটার ভবন ও ১৫০ বর্গ মিটার স্টুডেন্ট ডরমেটরি।
অন্যদিকে এক কিলোমিটার দীর্ঘ রোপওয়েও তৈরি করা হয়নি।
এই বিষয়ে প্রকল্পের পরিচালক ড. তপন কুমার দে বাংলানিউজকে বলেন, ‘এটা ঠিক যে, প্রকল্পের কিছু কাজ করা এখনও বাকি রয়েছে। এ-কারণে একনেক প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বাড়ানো হয়েছে। আশা করছি, বর্ধিত সময়ে প্রকল্পের বাকি কাজ শেষ করতে পারবো। ’
তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের আওতায় ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। জমির দামও অনেক চড়া। তাই প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বাড়াতে হয়েছে। তবে আশা করি, এবার প্রকল্পের বাকি কাজ শেষ করতে পারবো। ’
নানা কারণে তৃতীয় ধাপে প্রকল্প সংশোধন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। সংশোধিত প্রকল্পের প্রস্তাবিত কার্যক্রমের মধ্যে আছে, নতুন করে আরও ৪০ একর ভূমি অধিগ্রহণ, বর্ধিত ভূমিতে মাস্টার বাউন্ডারি দেয়া ও তৃণভোজী প্রাণিদের বেষ্টনী সম্প্রসারণ করা।
পার্কের মধ্যে একটি মসজিদ. অভ্যন্তরীণ অ্যাপ্রোচ রোড সম্প্রসারণ ও একটি স্যুভেনীর শপও নির্মাণ করা হবে।
ইমু গার্ডেন, সর্প পার্ক, ৫০ হেক্টর জমিতে বাঁশবাগান ও ৪০ হেক্টর জমিতে কলাবাগান তৈরি করা হবে। পার্কিং এলাকা সম্প্রসারণ, মদন টাক পাখির ঘর, ফুট বাথ ও অতিরিক্ত সময়ের জন্য বন্যপ্রাণির খাদ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হবে।
এছাড়া, প্রকল্পের আওতায় একটি জিপ, দুটি সাফারি মিনিবাস, সিসি ক্যামেরা, ফায়ার এক্সটিংগুইশার ও অ্যানিমেল স্ট্রেচার কেনা হবে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, বংশ বৃদ্ধি ও আবাসস্থলের সমস্ত ব্যবস্থা সাফারি পার্কে বিদ্যমান। সেই লক্ষকে সামনে রেখে দেশি পর্যটকদের জন্য ইকো ট্যুরিজম, চিত্তবিনোদন, গবেষণা ও শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের গুরুত্ব অনেক।
প্রকল্পটির কাজ শতভাগ ও সঠিকভাবে সম্পন্ন হলে এই পার্কটি দেশে ও বিদেশে সমাদৃত হবে।
এই বিষয়ে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের কর্মকর্তা কৃষ্ণকমল মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, পার্কের কাজ শতভাগ শেষ করতে পারলে এটি এশিয়া মহাদেশের মধ্যে নাম্বার ওয়ান পার্ক হবে। আমার বিশ্বাস, শুধু এশিয়া নয় সমস্ত পৃথিবী থেকে দর্শনার্থীদের আগমন ঘটবে এই পার্কে। সেই দিন আর বেশি দূরে নয়। ’
** রেস্তোরাঁয় খেতে বসে কাচের ওপাশে দেখুন বাঘ-সিংহ
** মা হতে যাচ্ছে সিংহী, ডিম পেড়েছে উটপাখি ও ইমু
** বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক: ঢাকার পাশেই বিনোদন স্বর্গ!
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৫ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০১৫
সম্পাদনা: জেএম