ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

যে প্রশ্নের উত্তর নেই!

সোলায়মান হাজারী ডালিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২০ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০১৫
যে প্রশ্নের উত্তর নেই! ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নাম: শাওন। বয়স: সাত।

বাড়ি: রামগতি, লক্ষ্মীপুর। বর্তমান ঠিকানা: স্টেশনপাড়া, ফেনী। পেশা: ভ্যানচালক।

সাত বছর বয়সী কোনো শিশুর এমন পরিচয় শুনলে উন্নত দেশের যেকোনো নাগরিক নিশ্চয়ই ভড়কে যাবেন। কারণ, যে বয়সে শিশুটির স্কুলে যাওয়ার কথা, সে বয়সে শাওন ভ্যানে প্যাডেল মারছে।

শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে দাঁড়িয়ে প্যাডেলে পা চালাতে দেখলে, অপুষ্টিতে ভোগা শিশুটির জন্য চোখ ছলছল করে উঠবে যে কারও। মনে পড়বে, এমন হাজারো শিশুশ্রমিক রয়েছে এদেশের আনাচে-কানাচে।

এক বোন আর তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট শাওনের স্বপ্ন ছিলো, সে পড়ালেখা করবে। কিন্তু জন্মের পর যে অভাব আর দারিদ্র্যের সঙ্গে পরিচয়, সেটিই একদিন তাকে ভ্যানচালক হতে বাধ্য করলো। জীবনে প্রতিষ্ঠার কথা আজ আর তার ভাবনায় না এলেও, কাউকে কাউকে কষ্টের কথা জানায় শাওন।

এক ঘণ্টার জন্য ওর ভ্যান ভাড়া নেওয়া হয়েছে ছবি তোলার জন্য। প্যাডেলে পা চালাতে চালাতে কিছুদূর গিয়ে আলাপ জুড়ে দেয় সে।

খেদের সঙ্গে বলে ওঠে, ‘কিয়ের এই জীবন! কিয়ের বাপ-মা! বিড়ি খামু না তো কী! আঙ্গো (আমাদের) এত কষ্ট কেউ দেখে, সরকার দেখে’!

কথা বলতে বলতে কিছুদূর যাওয়ার পর দেখা হয় ওর সমবয়সী আরেক ভ্যানচালক জসীমের সঙ্গে। পাশ দিয়ে যেতে যেতে জসিমকে চিৎকার দিয়ে বলে, ‘ওই জসিম্মা, আইজ্জা (আজ) কাননে (কাজ নে)। সুরিয়া ছবিডা দেখুম’।

শাওন সিনেমাটির পুরো নাম বলতে পারে না। একটু পর ওর বন্ধু জসিম তোতলায়। প্রশ্ন করি তাকে, কিছু বলবে?

নির্মল হাসিতে তার উত্তর, ‘সার (স্যার) আপনে তো খুব ভালা, আঙ্গো (আমাদের) ছবি তুইল্যেন (তুলছেন)?’

অবাক হলাম, বেশি কিছু নয়। কয়েকটি ছবি তোলাতেই তার কী উচ্ছ্বাস! আনন্দে বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছে। আমরা শহর থেকে অনেকটা দূরে চলে এসেছি। উদ্দেশ্য, শাওনের বাসায় যাবো। দিনটি ওর সঙ্গে কাটাবো।

ফেনী শহরের স্টেশনপাড়ার বস্তিতে শাওন তার বাবা-মা ও ভাইবোনের সঙ্গে থাকে। তার অন্য ভাইয়েরা হকার।

শাওনের বাবা ইসমাইল মিয়াকে প্রশ্ন করলাম, আপনার ছেলের তো এখনও সাত বছরই হয়নি, ওকে ভ্যান চালাতে দেন কেন?

ইসমাইল মিয়া আমার প্রশ্নে লজ্জিত হয়ে বললেন, ‘আমারে বইলা কী হইব বাজান! আমি তো বুড়া হইয়া গেছি। কাজকাম করতে পারি না। ছেলেরা যা আনে, তা খাই। না আনলেও কিছু কইতে পারি না। উপাস থাকতে অয়।   ইয়ান ১২শ’ টেয়া (টাকা) ভাড়া। কুনো মাসে দেয়া হয় কুনো মাসে বাজি (বাকি থেকে) যায়!

আমি আর প্রশ্ন করি না। নিজেই নিজের প্রশ্নের মুখোমুখি হই। শাওনের হাতে ১শ’ টাকা তুলে দিয়ে কোনো কথা না বলে ওর বাসা থেকে বের হয়ে হাঁটতে থাকি। আর রিকশায় উঠি না। কেবল হাঁটি। হাঁটতে হাঁটতে কত অক্ষম প্রশ্ন মনে আসে। মেলে না উত্তর!

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৬ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০১৫
আরএম/এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।