ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

হাজার বছরের পাণ্ডুলিপি থেকে কার্যকরী অ্যান্টিবায়োটিক!

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৫
হাজার বছরের পাণ্ডুলিপি থেকে কার্যকরী অ্যান্টিবায়োটিক!

ঢাকা: হাজার বছর আগে লিখিত পাণ্ডুলিপি (খসড়া গ্রন্থ) থেকে বর্তমান সময়ের দ্রুত সংক্রমিত রোগের কার্যকরী অ্যান্টিবায়োটিকের সন্ধান পেয়েছেন গবেষকরা।

দশম শতকে লিখিত এই পাণ্ডুলিপিটি বর্তমানে লন্ডনের ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত রয়েছে।



জানা গেছে, ওই পাণ্ডুলিপিতে ওষুধের প্রস্তুত প্র্রণালী লিখিত রয়েছে। ওই তালিকা থেকে প্রস্তুত ওষুধ চোখে সংক্রমণ ঘটায় এমন রোগের অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।

পঞ্চম থেকে দশম শতক পর্যন্ত ব্রিটিশ নাগরিকদের সময়কালকে বলা হয়, অ্যাঙ্গলো-স্যাক্সন পিরিয়ড। এ সময়কালে ব্রিটেনে পাণ্ডুলিপিটি রচিত হয়।

সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, ব্রিটেনের দ্য ইউনির্ভাসিটি অব নটিংহামের সহযোগিতায় গবেষকরা সম্প্রতি পাণ্ডুলিপি থেকে বিকল্প ও অনেক বেশি কার্যকরী ওষুধ তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারেন।

গবেষকরা জানাচ্ছেন, বর্তমান সময়ের চোখের ছোঁয়াচে রোগ (সংক্রমণ) এমআরএসএস সারানো সম্ভব হয়েছে দশম শতকে লিখিত এই পাণ্ডুলিপির ওষুধ তৈরির প্রণালী থেকে। এই পাণ্ডুলিপিতে লিপিবদ্ধ তালিকা থেকে তরল অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করা হয় এবং চোখে সংক্রমণ ঘটে এমন রোগের অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে এই ওষুধ তৈরি করা হয়।

অ্যাঙ্গলো-স্যাক্সন বিশেষজ্ঞ-চিকিৎসক ডা. ক্রিসটিনা লী দ্য স্কুল অব ইংলিশের একজন বিশেষজ্ঞ। তিনি ইউনিভার্সিটি’স সেন্টার ফর বায়োমলিক্যুলার সায়েন্সের অনুজীববিদের সহযোগিতায় পাণ্ডুলিপি থেকে ওষুধ তৈরির তালিকা তৈরি করেন।

সেই তালিকা অনুযায়ী ওষুধ তৈরি এবং তা পরীক্ষা করে দেখা যায়, এটি চোখে সংক্রমিত রোগের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে খুবই ভালো কাজ দিচ্ছে।

এ বিষয়ে লী বলেন, ওই তালিকায় রসুন বা পিঁয়াজ জাতীয় গাছ, মদ, গরুর পিত্তরস পিতলের পাত্রে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করার কথা লিখিত আছে। নয়দিন ধরে কাপড় দিয়ে এই মিশ্রণ ব্যবহার করার কথা উল্লেখ আছে তালিকায়।

অনুজীববিদ ফ্রেয়া হ্যারিসন বলেন, আমরা ফর্মূলা মেনে হুবহু ওষুধটা তৈরি করেছি। শুধু তাই-ই নয়, উল্লিখিত মাত্রানুযায়ী, উপাদানগুলো মেশানোও হয়।

ওষুধ পুরোপুরি তৈরির পর তা পরীক্ষা করার দরকার পড়ে। এটি সংক্রমিত রোগ এমআরএসএ (মেথিসিলিন-রেসিস্ট্যান্ট স্টাফিলোক্কাস অওরিয়াস)-এ পরীক্ষা করা হয়। সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক এ রোগে তেমন একটা কার্যকর নয়।

তিনি বলেন, তৈরি ওষুধের কার্যকারিতা গবেষণাগারে পরীক্ষা করলাম। আমরা আশ্চর্য হলাম। এটি অ্যান্টি-স্টাফিলোক্কাল অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে খুবই কার্যকরী প্রমাণ পাওয়া গেল।

এরপর আমরা কয়েক বিলিয়ন আক্রান্ত কোষের ওপর এই তরল ওষুধটি প্রয়োগ করলাম। দেখা গেল, মাত্র কয়েক হাজার কোষ জীবিত আছে। বাকি সব আক্রান্ত কোষ মারা গেছে। এই ওষুধটির কার্যকারিতার ব্যাপকতা দেখে আমরা সবাই অবাকই হলাম।

এরপর এই গবেষক দলের ডাক পড়লো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে তারা গবেষণাগারে এ ওষুধের পরীক্ষা করেন। এর ফলাফল দেখে মার্কিনি সোসিও মাইক্রোবায়োলজির গবেষক ও সহযোগী অধ্যাপক স্টিভ ডিগেল বিস্মিত হয়ে যান।

তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, পাণ্ডুলিপির তালিকা থেকে তৈরি ওষুধের কার্যকারিতা দেখে আমরা ভীষণ বিস্মিত হয়েছি যে, যেখানে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা কম, সেখানে এর কার্যকারিতা অনেক বেশি।

এরপর তিনটি ব্যাচে এই পরীক্ষা চালানো হয়। এতে দেখা যায়, এমআরএসএ ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংসে এই তরল ওষুধটি ৯০ শতাংশ কার্যকর।

এ পরীক্ষার পর গবেষকরা জানাচ্ছেন, হাজার বছর আগেও বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি ছিল, যা রোগ সারাতে অনেক বেশি কার্যকর। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই বিশেষ পদ্ধতি হারিয়ে গেছে। এই সব জ্ঞান যদি পুনরাবিষ্কার করা যায়, তাহলে চিকিৎসা বিদ্যা অনেক বেশি সমৃদ্ধশালী হতে পারে।



বাংলাদেশ সময়:  ১৬৪২ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৫
এবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।