ভয় পেতে আপনার কেমন লাগে? প্রশ্নটা শুনতে একটু কেমন কেমন লাগলেও ভয় পেতে ভীতুদেরও খারাপ লাগে না যদি তা ভৌতিক সিনেমার মাধ্যমে পাওয়া যায়। ঘর অন্ধকার করে পপকর্ন মুখে পুরতে পুরতে ভূতের সিনেমা দেখাটা উত্তেজনারই বটে।
এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি গবেষণা হয়েছে, কেন আমরা ভয় পেতে ভালোবাসি অার বিজ্ঞানীরাই বা কেন কাজের ফাঁকে হরর মুভি দেখার পরামর্শ দিচ্ছেন। আবার বলা যায় ভয় পাওয়ার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে। চলুন, চট করে ভয় সম্পর্কে একটু জেনে নিই—
ভয়ঙ্কর সিনেমা আপনার জন্য ভালো
আপনার প্রিয় হরর মুভি আপনার জন্য কতটা ভালো তা কি জানেন? কারণ ভয়ঙ্কর সিনেমায় নানান প্রতিকূলতা পেরিয়ে টিকে থাকার চেষ্টাটাই বারংবারই ফিরে আসে। যা মস্তিষ্কে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ভয়ের অভিজ্ঞতা, ভয়ঙ্কর পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের দৃশ্য আপনার ভবিষ্যতের অবসাদগ্রস্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শুধু মানসিক দিক কেন, হরর মুভি শরীরে বিপাক ক্রিয়ার বৃদ্ধি ঘটায়। এছাড়াও ভয়ের মুভি দেখে শরীর থেকে কমতে পারে একশ’ ৮৪ কিলোক্যালরি। গবেষণায় দেখা গেছে হরর মুভি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, সাদা রক্তকণিকা তৈরি করে ও ইনফেকশন আরোগ্যলাভে সহায়তা করে।
যে কারণে চিৎকার ভয়ঙ্কর
তীব্র চিৎকার শুনলে রক্ত হিম হয়ে যায়। নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভিড পোপল একটি গবেষণায় ভিন্ন ভিন্ন মানুষের কণ্ঠস্বরের গুণাবলী বিশ্লেষণ করে দেখেন। ফলাফলে দেখা যায়, একজন ব্যক্তির সাধারণ কথাবার্তার তুলনায় চিৎকার অনেক বেশি ভিন্নমাত্রিক হয়। এই চিৎকার-মানদণ্ড ৩০ থেকে একশ’ ৫০ হার্জের মধ্যে ওঠানামা করে। পোপেল এর নাম দিয়েছেন রাফনেস বা কর্কশ।
গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ যখন চিৎকার শোনে তখন অ্যামিগডালা অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে, মস্তিষ্কে ভয় ও বিপদ সংকেত পৌঁছে যায়।
ভৌতিক মিউজিক শুনলে কেন ভয় লাগে
হরর মুভিগুলোকে আরো ভয়ঙ্কর করে তোলে ব্যবহৃত ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। ডানিয়েল ব্লুমস্টেইন এনিমেল ডিসট্রেস বিশেষজ্ঞ। তিনি জানান, বাচ্চা কাঠবিড়ালী তখনই চিৎকার করে যখন সে ধরা পড়ে। একটি গবেষণায় তিনি দেখেছেন ভৌতিক দৃশ্যে মিউজিক আরো বেশি ভৌতিক আবহ তৈরি করে। প্রাণীদের বিভিন্ন ডাকের মধ্যে বাচ্চা কাঠবিড়ালীর ডাক অনেক বেশি ভয়ঙ্কর।
তবে এই ভয়টাও কাজের। কারণ এটি আমাদের ভেতরের সচেতনতাকে সজাগ করে।
মৃত্যুভয়ে হজম দেরিতে হয়
মৃত্যুকে সবাই ভয় পায়। এ ভয় এড্রিনালিন সিস্টেমের ওপর প্রভাব ফেলে, হজম ক্রিয়া দেরিতে সম্পন্ন হয়, পেশিতে দ্রুত রক্তসঞ্চালন হয়, শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত হওয়াসহ আরো নানা রকম দৈহিক পরিবর্তন দেখা দেয়। এমনকি স্ট্রেসের মাত্রা হৃদপিণ্ডের ক্ষতি করতে পারে। শারীরিকভাবে সুস্থ ব্যক্তিরও সাধারণত মৃত্যুভয় থাকে।
আমরা কেন ভয় পেতে ভালোবাসি?
মানুষ যখন উত্তেজনায় ও অবসাদগ্রস্ত থাকে তখন এড্রিনালিন, ডোপামাইন ও এনডোরফিন হরমোন নিঃসৃত হয় যার ফলে আমরা কোনো পরিস্থিতিতে আনন্দ পাই বা পাই না। তাই যখন সিনেমায় বিমান থেকে পড়ে যাওয়া বা হত্যা সম্পর্কিত ঘটনা দেখানো হয় তখন আমরা সেটাতে আনন্দ পাই না। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক যখন বুঝতে পারে আসন্ন ঝুঁকি কমে আসছে তখন তাতে আমরা আনন্দ পাই।
ভূতে বিশ্বাস করার কারণ কী?
মস্তিষ্কে বিভিন্ন রকমের তথ্যের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা জমা থাকে। এর মধ্যে কিছুর ওপর আমরা প্রতিক্রিয়া করি। ধারাবাহিকভাবে ভৌতিক চরিত্রগুলো দেখার পর মস্তিষ্কে এমন কিছু চরিত্র সবসময়ই জমা থাকে যার পরিপ্রেক্ষিতে একজন মানুষ প্রতিক্রিয়া করে। বাস্তব সময়ে যখন ওই ধরনের কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয় তখন সে সেসব মুখ মনে করে ভয় পায়।
ফোবিয়া
প্রতিটি ফোবিয়ারই বাস্তব ভিত্তি আছে। অতীত অভিজ্ঞতাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও নির্দিষ্ট কোনো বিষয় সম্পর্কে দীর্ঘদিনের প্রাপ্ত নেতিবাচক তথ্যও ফোবিয়া তৈরি করে।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট
বাংলাদেশ সময়: ১২০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৫
এসএমএন/টিকে
ফিচার
আমরা কেন ভয় পেতে ভালোবাসি?
ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।