ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

বাংলাদেশের হারিয়ে যাওয়া প্রাণীরা -পর্ব ২

আতিফ আতাউর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৫
বাংলাদেশের হারিয়ে যাওয়া প্রাণীরা -পর্ব ২

ডিসকভারি চ্যানেলে ঢু মারলে কত শত প্রাণীরই তো দেখা মেলে। বাঘ, ভালুক, সিংহ, হায়েনা, শিম্পাঞ্জী থেকে শুরু করে ঘরিয়াল, কুমির, এমনকি হরহামেশা দেখা মেলে বনগরুরও।

ভিনদেশে বসত করা এসব প্রাণী দেখে আমার আপনার মনে হতেই পারে এগুলোর অনেকেই আমাদের দেশে নেই কেন? গণ্ডার, বনগরু, ঘরিয়াল আজ আমাদের দেশে নেই। কিন্তু যদি বলি এক সময় ছিল, তাহলে হয়ত চমকেই উঠতে হবে অনেককে।

চলুন জেনে নেই এমন কিছু প্রাণীর কথা, যেগুলো একসময় বাংলাদেশের বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াত। কালের বিবর্তনে আজ তারা বাংলাদেশ ভূ-খণ্ড থেকে বিলুপ্ত। অবাক করা তথ্য হচ্ছে পৃথিবীতে বর্তমানে টিকে থাকা প্রাণীকূল পৃথিবীর মোট প্রাণীদের মাত্র ৫%। বাকি ৯৫% প্রাণীই পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

কোনো প্রাণী বা প্রজাতির বিলুপ্ত বলতে সমগ্র পৃথিবী থেকে একটি জিনপুলের নিশ্চিহ্ন হওয়াকে বোঝায়। আর এমন একটি প্রজাতি-বিলুপ্তির সঙ্গে বাংলাদেশও জড়িত! প্রাণীটির নাম গোলাপি শির হাঁস, Rhodonessa caryophyllacea (latham)|

বাংলাদেশ থেকে আরো বিশটি প্রাণী প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেলেও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ অন্যান্য কিছু দেশে ওদের বংশধরেরা এখনো বেঁচে আছে। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে এমন আরো একশ’টি প্রজাতি বিলুপ্ত হওয়ার প্রহর গুনছে। বাংলাদেশে বিলুপ্ত হওয়া বন্যপ্রাণী সর্ম্পকে প্রথম আলোকপাত করেন Husain (19974)|

চলুন জেনে নেই বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হওয়া কয়েকটি প্রাণী সম্মন্ধে। প্রথম পর্বে নেকড়ে ও ডোরাকাটা হায়েনাসহ ৫ বিলুপ্ত প্রাণী সম্পর্কে জেনেছিলাম। এই পর্বে বামন শূকর ও নীলগাইসহ আরো ৬ বিলুপ্ত প্রাণী সম্পর্কে জানব।


পর্ব ১ পড়তে ক্লিক করুন


বান্টেং (THE BANTENG)
বান্টেংয়ের বৈজ্ঞানিক নাম Bos javanicus| এদের আঞ্চলিক নাম বান্টিং বা বনগরু। সুঠাম দেহের অধিকারী বান্টেংয়ের উচ্চতা সাড়ে ৫ ফুট। এরা হালকা পাতাঝরা বন ও চির সবুজ বনে ঢাকা ঘাস ও বাঁশের ফাঁকসমৃদ্ধ জায়গায় বাস করে। এরা বেশ শান্ত প্রাণী। বান্টেংয়ের দৃষ্টি, শ্রুতি ও ঘ্রাণশক্তি অনেক নিখুঁত।



বাংলাদেশে শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামেই বান্টেং পাওয়া যেত।


বুনো মোষ (THE WILD BUFFALO)
বুনো মোষের বৈজ্ঞানিক নাম Bubalus bubalis| কোনো কোনো অঞ্চলে এদের বনমহিষ বা বয়ার নামেও ডাকা হয়। উচ্চতা সাড়ে ৫ ফুটের মতো হয়। শরীরের ওজন ৯০০ কেজি। পোষা মোষের মতোই দেখতে বুনো মোষ। এদের দুই ধরনের শিং দেখা যায়। ধনুকের মতো বাকানো ও অর্ধচন্দ্রাকার। বুনো মোষের বসবাসের প্রিয় জায়গা জলাশয়ের পাশে লম্বা ঘাস ও নলখাগড়ায় পূর্ণ বন। এরা দিনের বেশিরভাগ সময় কাটায় জলে শুয়ে ও কাদায় গড়াগড়ি দিয়ে। গরু গোত্রের মধ্যে বুনো মোষই সবচেয়ে সাহসী ও ধ্বংসাত্মক। বাঘকেও অনেক সময় ভয় পায় না এরা।



পুরনো গেজেট অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রায় সবখানেই বুনো মোষের বিচরণ ছিল। সুন্দরবন, বাকেরগঞ্জ, বরিশাল ও বাগেরহাটে অনেক বুনো মোষের দেখা মিলত। বুনো মোষের প্রাচুর্যের জন্য সুন্দরবন সংলগ্ন কিছু এলাকার নামকরণ করা হয়েছে বয়ারগাতি, বয়ারডাঙ্গা, বয়ারশিঙ্গে ইত্যাদি। এছাড়া ময়মনসিংহ, জামালপুরেও এদের দেখা মিলত।


জলার হরিণ (THE SWAMP DEER)
এদের বৈজ্ঞানিক নাম Cervus duvauceli| অনেকে এদের বারশিঙ্গা বলে ডাকে। উচ্চতায় ৫৪ ইঞ্চি এবং ওজনে ১৭৫ কেজি থেকে ১৮০ কেজি বিশিষ্ট হয়। এরা দেখতে সাধারণ হরিণের মতোই। তবে এদের শিংয়ের গড়নে আলাদা বৈশিষ্ট বিদ্যমান। জলাভূমির আশেপাশে সবুজ ঘাসে পূর্ণ জায়গা এদের বিচরণের প্রিয় স্থান।



বাংলাদেশে রংপুর, দিনাজপুর, সুন্দরবন, নোয়াখালী, বাকেরগঞ্জ, সিলেট ও চট্টগ্রামে জলার হরিণের দেখা মিলত।


বামন শূকর (THE PYGMY HOG)
এদের বৈজ্ঞানিক নাম  Sus salvinus| স্থানীয় নাম ঠাণ্ডরি শূয়ার। উচ্চতা ১৮ থেকে ২০ ইঞ্চির মতো। ওজন ৩ থেকে ৫ কেজি। বামন শূকরের আকার একটি বড়সড় খরগোশের মতো এবং দেখতে সাধারণ শূকরের এক মাস বয়সী বাচ্চাদের মতো। শালবন ও উলুঘাস বনে বাস করে।



বাংলাদেশের সিলেটে বামন শূকরের দেখা পাওয়া যেত বলে মনে করেন প্রাণীবিজ্ঞানীরা।


কৃষনোসার (THE BLACKBUCK)
এদের বৈজ্ঞানিক নাম Antelope cervicapra| উচ্চতা ৩২ ইঞ্চি আর ওজন ৪০ কেজির মতো হয়। এরা অনেকটা হরিণের মতোই দেখতে। পুরুষ কৃষনোসার দেখতে অনেক সুন্দর। সবুজ ঘাসে ভরা উন্মুক্ত প্রান্তর এদের বিচরণের প্রিয় জায়গা। এদের দৌড়ও দেখার মতো। কয়েক কদম চলার পরপরই একেকবার লাফ দেয়। দৌড়ে গ্রে হাউন্ডকেও হার মানায় এরা।



চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটে দেখা যেত। রাজশাহী, দিনাজপুর, খুলনা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুরেও এদের দেখা মিলত বলে মত দিয়েছেন অনেক প্রাণী বিজ্ঞানী।

নীলগাই (THE BLUEBULL)
এদের বৈজ্ঞানিক নাম Bocephalus tragocamelus| উচ্চতা ৫২ থেকে ৫৬ ইঞ্চি। দেখতে অনেকটাই বিদঘুটে চেহারার ঘোড়ার মতো। ঘাড়ে শুয়োরের কুঁচির মতো গাঢ় লোম আছে। নীলগাই ছোট পাহাড় ও জঙ্গলে পূর্ণ মাঠে চরতে পছন্দ করে। মহুয়া গাছের রসালো ফুল এদের দারুণ পছন্দ। পানি পান ছাড়াই দীর্ঘসময় কাটিয়ে দিতে পারে এরা। গণ্ডারের মতো নীলগাইও এক জায়গায় মলত্যাগ করে।



বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে, যেমন দিনাজপুরে এক সময় নীলগাইয়ের দেখা মিলত। বর্তমানে ভারতের কিছু কিছু প্রদেশে নীলগাইয়ের দেখা মেলে।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৫
এএফএ/টিকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।