নাটোরের মরাবিল থেকে: ষাটোর্ধ্ব আব্দুল জলিল প্রামাণিক; সঙ্গে ছেলে জনি প্রামাণিক। দুজনের হাতেই মাছ ধরার পলো।
মাছ ধরতে নেমে মাছের মতোই ঝাঁক বেঁধে নিজেরাই গোটা বিল দাপিয়ে বেড়ান। দুরুন্ত কিশোর, মাঝ বয়সী কিংবা বৃদ্ধ; দল বেঁধে মাছ ধরতে বিলের ঠাণ্ডা পানিতে গা ডুবিয়েছেন সবাই। তবে সিংহভাগ মানুষের মন ভরেনি। কেননা পলো বা জালে ধরা পড়েনি আশানুরূপ মাছ। তবে মিটেছে শখ। তাই মাছে মন না ভরলেও অন্তত শখ মেটাতে পারায় খুশি হয়েই বাড়ি ফেরেন তারা।
শনিবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মাছ ধরার এই মহোৎসব চলে।
নাটোর উপজেলা সদরের ৩ নম্বর দিঘীপতিয়া ইউনিয়নে ইসলাবাড়ি বিলটির অবস্থান। এককালে বিলটিতে পানি থৈ থৈ করলেও সময়ের ব্যবধানে সেই জৌলুস হারিয়ে গেছে। প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্ট নানাবিধ সমস্যার কারণে বিলটি তার যৌবন হারিয়ে ফেলেছে। এ কারণে বিলটি ‘মরাবিল’ নামেই এখন সবার কাছে অধিক পরিচিত।
তবুও বংশ পরম্পরায় মাছ ধরার সেই উৎসব থেমে নেই। বাপ-দাদার আমল থেকে চলে আসা মাছধরা উৎসব পালনে প্রতি বছর এই সময়ে তারাও মাছ ধরতে নামেন। পূর্বের ধারাবাহিকতায় এবারও ইসলাবাড়িসহ আশপাশ ও দূর-দূরান্তের অন্তত ১৫ গ্রামের প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ মরাবিলে মাছ ধরার উৎসবে যোগ দেন।
সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, প্রথমে মাছ শিকারিরা বিভিন্ন গ্রাম থেকে ভটভটি, নানা যানবাহন ও পায়ে হেঁটে বিলের পাড়ে আসেন। এরপর তারা পলোসহ মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জামাদি নিয়ে প্রস্তুতি নেন। সবাই দল বেঁধে বিলের মধ্যে নামেন। এরপর শখ পূরণে শুরু হয় মাছ শিকার। যে যার মতো করে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে মাছ ধরার চেষ্টা করেন। শীত উপেক্ষা করে চলে তাদের মাছ ধরার উৎসব।
আব্দুল কুদ্দুস, আবুল কাসেম, শফিকুল ইসলাম, আলমগীর হোসেনসহ একাধিক ব্যক্তি বাংলানিউজকে জানান, ইসলাবাড়ি ছাড়াও হালসা, নাজিরপুর, করোটা, ডুলেডাঙা, হাতিনদহ, গোয়ালডাঙা, ডাঙাপাড়া, হাসিঘাটি, ধুলাডাঙা, চামারি, হোলায়গাড়ি, পুরুলিয়া, মহারাজপুর, চাপিলাসহ বিভিন্ন গ্রামের বিভিন্ন বয়সের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এই উৎসবে মেতে ওঠেন।
তারা জানান, আগের মতো এই বিলে আর দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় না। কালের আবর্তে মাছগুলো যেন হারিয়ে গেছে। পুকুরের চাষকৃত মাছই এখন একমাত্র ভরসা। কারণ বর্ষায় বাণিজ্যিকভাবে চাষকৃত পুকুর ডুবে যায়। এসব পুকুরের মাছ তখন বিলে এসে আশ্রয় নেয়। মাছ ধরার উৎসবে সেই মাছগুলোই সাধারণত পলো বা অন্যান্য জালে ধরা পড়ে।
আব্দুস সামাদ, রিপন, জসমত আলীসহ একাধিক ব্যক্তি বাংলানিউজকে জানান, রুই, মৃগেল, কাতলা, কার্প জাতীয় মাছ, হাঙড়ি, জাপানি ও কিছু সংখ্যক শোল মাছ ধরা পড়েছে। এরমধ্যে ৩-৪ কেজি ওজনের হাঙড়ি ও জাপানি মাছ রয়েছে।
এসব ব্যক্তিরা জানান, বাপ-দাদার আমলে এই বিলে বড় আকারের শোল, বোয়াল, রুই, কাতলা ছাড়াও পুঁটি, গোলসা, ট্যাংরা, কই, মাগুর, শিং, পাবদা, বাঙ, পাতাশী, আঁইড়সহ নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু সেই আমলের অবসান ঘটায় এসব মাছের আর দেখা মেলে না। এখন চাষকৃত মাছের ওপর ভরসা করেই তারা প্রত্যেক বছরের এই সময় মাছ ধরার উৎসবে মেতে ওঠেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৫
এমবিএইচ/এমজেএফ/