ঢাকা: রাজধানীর কল্যাণপুরের গুটিকয় পথশিশু দেশের জন্য কী কল্যাণই বয়ে আনতে পারবে? পথশিশু বলে ওদের বরং দেশের বোঝাই ভাবা হয়!
কিন্তু দেশ স্বাধীনের ৪৫ বছরে এসে বিজয়ের দিনে বুধবার রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় একটি ভ্যানে কয়েকটি পথশিশুর যে বিজয় উদযাপন দেখা গেলো তাতে বলে দেওয়া যায়, এই চেতনা ওদেরও সত্যিকারের দেশপ্রেমিক নাগরিক করে গড়ে তুলবে। ওদের মধ্য দিয়েও টিকে থাকবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ‘জয়বাংলা’ স্লোগান।
কল্যাণপুর থেকে বুধবার খুব সকালে ওরা যাত্রা শুরু করে। উদ্দেশ্য ঢাকা শহর প্রদক্ষিণ। ওরা শাকিল, বিপ্লব, সোহেল, ইউনুস ও অন্যান্য। একটি ভ্যানে চেপেছে সাত-আটজন। বয়স ৮ থেকে ১২’র মধ্যে। ভ্যান যে চালাচ্ছে সেও একই বয়সের। রাজধানী ফাঁকা। সড়কে গাড়ির চাপ নেই। এখন এই সড়কে ওরাই রাজা।
সবাই তারা কল্যাণপুরের বাসিন্দা। স্কুলে যায় কেউ কেউ। তবে পথই তাদের মূল ঠিকানা।
আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিলো। তারা সেজেছে মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধজয়ী মুক্তিযোদ্ধা।
এই শীতেও সবারই উদোম গা। গায়ে কাঁদামাখা। চলছে একটি ভ্যানে করে।
দলটি বাংলানিউজের ক্যামেরায় ধরা পড়ে বুধবার সকাল ১০টার দিকে ফার্মগেট এলাকায়।
দুই জনের হাতে রাইফেল। কলার কাঁদির ডাটা দিয়ে তৈরি। নিচে শুয়ে আছে দুইজন। লাল রঙ মেখে রক্তাক্ত শরীর। ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। বিজয়ের দিনে শহীদকে সাথে নিতে ভোলেনি শাকিল-বিপ্লবরা। আর মুখে কালো রং দিয়ে দাঁড়ি বানিয়ে একজনকে রাজাকারও সাজিয়েছে। যখন তখন তার দিকে বন্দুক তাক করছে। আর কেউ আবার মিছেমিছি গলাচেপেও ধরছে।
মুখে তাদের স্লোগান বাংলাদেশ.. বাংলাদেশ। জয় বাংলা.. জয় বাংলা।
ওরা জানালো প্রস্তুতি দুই দিনের। আগে থেকেই একটি ভ্যান যোগাড় করেছে। কাদা কোথায় পাওয়া যাবে তাও নির্দিষ্ট করা ছিলো। বিজয়ের দিনে প্রতুষ্যে তারা উদোম গা হয়ে কাদা মাখে। রঙ মাঝে। মাথায় বেঁধে নেয় বিজয়ের পতাকা ও ব্যান্ড।
এরপর বেরিয়ে পড়ে রাজপথে। রাজপথ ছাড়ি নাই, জয় বাংলা স্লোগান বার বার শোনা যায় তাদের মুখে।
এমন চেতনা যে জাতির কিশোরের মনে গেঁথে সে জাতি হারেনি, হারবে না কোনও দিন।
বাংলাদেশ সময় ১১৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৫
এমএমকে