ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

কানাডিয়ান আবাসিক স্কুলের নির্মম ১০ সত্য

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০১৬
কানাডিয়ান আবাসিক স্কুলের নির্মম ১০ সত্য

১৯৭১ সালে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে সরকারিভাবে বহুসংস্কৃতিকে গ্রহণ করে কানাডা। এর আগে আদিবাসি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কালচারাল জেনোসাইডের মাধ্যমে এক বিরাট কালো অধ্যায়ও তৈরি করেছিল দেশটি।

কানাডিয়ান সরকার ও খ্রিস্টান গির্জা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত রেসিডেনশিয়াল স্কুলগুলোর মূলমন্ত্রই ছিল যেন ‘শিশু অবস্থাতেই ইন্ডিয়ানদের হত্যা করো’। কানাডার সর্বশেষ রেসিডেনশিয়াল স্কুলটি বন্ধ হয় ১৯৮৬ সালে। তবে এসব আবাসিক স্কুল সিস্টেম ও স্কুলে পড়ুয়া ক্ষতিগ্রস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের সম্পর্কে খুব কম মানুষই জানেন। ঘুরে আসা যাক অতীতের কানাডিয়ান রেসিডেনসিয়াল স্কুল থেকে।

জোরপূর্বক একীভূতকরণ
রেসিডেনশিয়াল স্কুল সিস্টেম চালু হওয়ার পর চার থেকে ১৮ বছর বয়সী ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে উপস্থিত হওয়া বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের ইউরো-কানাডিয়ান সংস্কৃতি গ্রহণে বাধ্য করা হতো। একইসঙ্গে নিজের সংস্কৃতি ও ধর্ম চর্চার চরম বিপক্ষে ছিল আবাসিক স্কুলগুলো।

শিশুদের দেখতে যেন ইউরোপিয়ান-কানাডিয়ানদের মতো লাগে সেজন্য টক্সিক ক্যামিকেলযুক্ত পানিতে তাদের গোসল করানো হতো। যাতে গায়ের রঙ হালকা হয়। মেয়েদের লম্বা চুল কেটে দেওয়া হতো ও সবাইকে পাশ্চাত্য ঢঙে পোশাক পরানো হতো। শিশুদের খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করতে জোর করা হতো। উপরন্তু ক্লাসের সময় ছাড়াও অন্য সব ক্ষেত্রেই ব্যবহারে বাধ্য করা হতো ইংরেজি বা ফরাসি ভাষা। অনেক শিশুরাই এসব ভাষা বুঝতে পারত না।

পারিবারিক বিচ্ছেদ
যেহেতু সব আদিবাসি শিশুদেরই স্কুলে উপস্থিত হওয়া বাধ্যতামূলক ছিল তাই তাদের বাড়ি থেকে জোরপূর্বক নিয়ে আসা হতো। যদি ছাত্র-ছাত্রীদের বাবা-মা এতে আপত্তি করত তাহলে তাদের মারধর ও গ্রেফতার করা হতো। যদিও বা সৌভাগ্যবশত কোনো সহোদর ভাইবোনকে একই স্কুলে পাঠানো হতো, কিন্তু লিঙ্গভেদে তাদের আলাদা করে দেওয়া হতো।

বেশিরভাগ সময়ই ছেলে-মেয়েরা ১৮ বছর হওয়ার আগে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারত না। হলিডে বা প্রিয়জনের মৃত্যু হলেও না। ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের বাবা মাকে যে চিঠি লিখত তা হতে হতো ইংরেজি বা ফরাসি ভাষায়। যা তাদের বাবা-মা’র কাছে পুরোদস্তুর বিদেশি ভাষা। বাবা-মা’র পক্ষ থেকে কোনো চিঠি বা উপহার পাঠানো হলে তা স্কুলের ধর্মযাজক ও নানরা সরিয়ে ফেলত।

অনুন্নত জীবনযাত্রা
এসব স্কুলে ভর্তি হওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনমান ছিল ভয়াবহ। তারা দিনের বেশিরভাগ সময়ই রান্না ও পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যস্ত থাকত।

শিক্ষার্থীরা ভুগত অপুষ্টি, চিকিৎসাহীনতা ও শীতে পর্যাপ্ত উষ্ণতার অভাবে।

গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করা হতো
কখনো কখনো অপুষ্টিতে ভোগা ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর ফেডারেল গভর্নমেন্ট পুষ্টির পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা গবেষণা চালাত।

এসব ক্ষেত্রে কখনোই তাদের মা-বাবার সম্মতি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করত না তারা। পরীক্ষার প্রয়োজনে শিশুদের ক্ষুধার্ত রাখতেও দ্বিধাবোধ ছিল না। শিশুগুলো যেন ছিল গিনিপিগ!

নিষ্ঠুর শাস্তি
স্কুলে অকারণে নিষ্ঠুরভাবে শিশুদের মারধর করা হতো। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, শিশুরা যদি ইংরেজি বা ফরাসি ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় কথা বলত তাহলে তাদের জ্বিভে সুই দিয়ে ছিদ্র করে দেওয়া হতো।

এছাড়াও ইলেক্ট্রিক্যাল শক, হাত পুড়িয়ে দেওয়া, কারাবন্দি করে রাখা ইত্যাদি।

সেক্সুয়াল এবিউজ
আবাসিক স্কুলগুলোতে সেক্সুয়াল এবিউজ ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। ছেলে-মেয়ে সবাই স্কুলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্বারা পাশবিক নির্যাতনের স্বীকার হতো।

এসব ঘটনায় কোনো ছাত্রী যদি অন্ত্বঃসত্তা হয়ে পড়ত তাহলে তার গর্ভপাত করানো হতো। উপরন্তু ধর্ষকদের তাদের অপরাধের জন্য ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলা হতো।

শিক্ষার্থীদের আকস্মিক মৃত্যু
প্রথম পাঁচ বছরের মধ্যে আবাসিক স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের মৃত্যুর সংখ্যা ৩০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬০ শতাংশ হয়। এই শতকরা শুধু ডেথ রিপোর্ট থেকে বলা যায়।

সরকারের পক্ষ থেকে এক পর্যায়ে এসব শিশুর মৃত্যুর হারের হিসেব রাখা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে এই হারের পরিমাণ রির্পোটে টুকে রাখা হিসেবের চেয়ে অনেক বেশি।

শিক্ষার্থীদের দ্বারা অনিয়মিত প্রতিরোধ
কখনো কখনো কঠোর এসব নিয়ম আর তীব্র শর্ত প্রতিহত করার চেষ্টা করত ছাত্র-ছাত্রীরা।

স্কুলের নিয়ম ভাঙত তারা, যেমন খাবার চুরি ও পালিয়ে যাওয়া। ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুল জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনাও আছে।

পর্যাপ্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অভাব
আবাসিক স্কুলের অন্তর্ভুক্ত শিশুরা শিক্ষার্থী নয়, বলা যায় তারা ছিল শিশুশ্রমিক। শিশুরা দিনে মাত্র দুই থেকে তিনঘণ্টা ক্লাসে থাকত। বাকিটা সময় তাদের কাজ করে কাটত।

এমনও হতো যে, ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা মাত্র পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ছে।

প্রজন্মান্তরে পারিবারিক অপব্যবহার চক্র
স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের বয়স ১৮ অতিক্রম করলে চাইলে তারা পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারত। কিন্তু ফিরে গিয়েও যদি নিজ পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হতো ও আদিবাসি বা ইউরো-কানাডিয়ান সংস্কৃতির কোনোটাই ধারণ করতে না পারত, তখন তারা মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ত।

একাকিত্বে ভুগত। স্কুলজীবনের তিক্ততা, ব্যর্থতা, নির্যাতনে অবসাদগ্রস্ত এসব ছেলেমেয়েরা নিজের ব্যক্তিগত ও সাংসারিক জীবনেও কখনো স্বাভাবিক হতে পারত না।

তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০১৫
এসএমএন/টিকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।