ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

কাজ-আড্ডা-উল্লাসে বনভোজন

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০১৬
কাজ-আড্ডা-উল্লাসে বনভোজন ছবি: হারুণ/মুজিবুর/দীপু/রানা/শুভ্রনীল/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: কর্মীদের আর্জিতে সহসাই সাড়া দিলেন এডিটর ইন চিফ। ‘আয়োজন করে ফেলো।

তবে কাছাকাছি কোথাও যাওয়াই ভালো। ’ প্রস্তাব এলো সাভার, গাজীপুরের। প্রথম যাত্রায় চেষ্টার পর সব ঠিকঠাক না মেলায় পরবর্তীতে এলো ঢাকার কাছাকাছি গন্তব্য কুমিল্লার নাম। সেখানে আছেন সদা তৎপর স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ইমতিয়াজ আহমেদ জিতু। বললেন তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে। এ-ও বললেন, ও পারবে!
 
প্রথম কথাতেই জিতু ভাই অনেকটা দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে ভারমুক্ত করলেন। পরে কয়েক দফায় এডিটর ইন চিফ বসলেন পিকনিক কমিটির প্রাথমিক ছোট্ট টিম নিয়ে। স্পট পরিদর্শনে পাঠালেন আমাকে ও সিনিয়র নিউজরুম এডিটর কালাম আজাদ বেগকে। স্পট থেকে তাৎক্ষণিক পাঠানো ছবি, আমাদের বর্ণনায় আস্থা রেখে সিদ্ধান্ত দিলেন কুমিল্লা বার্ডেই যাচ্ছে বাংলানিউজ পরিবার। পিকনিক না বলে সত্যিকারের বনভোজন বলা যায়। চারদিকে শত প্রকারের গাছঘেরা টিলা আমাদের স্পট।
 
এবার আয়োজন সফল করার পালা। চিফ অব করেসপন্ডেন্টস (সিওসি) সেরাজুল ইসলাম সিরাজ কম সময়ের মধ্যে সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট মহিউদ্দিন মাহমুদ, শাজাহান মোল্লা, ডেপুটি চিফ অব ফটো করেসপন্ডেন্টস ডিএইচ বাদল, স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট জিএম মুজিবুরকে নিয়ে আয়োজনের বড় একটি অংশের কাজ নিমিষে করে দিলেন সহজ। দু’শোর বেশি মানুষের আয়োজন খুব সহজ নয়। তবে এডিটর ইন চিফের প্রতিমুহূর্তের পর‍ামর্শ, নিদের্শনা, সাহস ছিলো ছায়ার মতো। তাই খুব কঠিনও থাকেনি শেষতক।
 
রাজনৈতিক অস্থিরতায় গতবছর বনভোজনের আয়োজন করা যায়নি। তাই সব কর্মী মুখিয়ে ছিলেন সুন্দর একটি ফ্যামিলি ডে কাটানোর জন্য। তবু মেইল করার পরও ম্যানেজার কো-অর্ডিনেশন ও এইচআর সুলতানা জাহান শিমু নিউজরুম, রিপোর্টিং, ওয়েবরুম ঘুরে, ফোনে যোগাযোগ করে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করলেন বনভোজনে যেতে। আউটপুট এডিটর জাকারিয়া মন্ডল ভাইয়ের তৎপরতায় নিউজরুমের শেষ ব্যক্তিটিও শেষ পর্যন্ত যেতে রাজি হলেন বার্ডে। ২২ সদস্যের একটি টিমও গঠন করা হলো। ভাগ করে দেওয়া হলো দায়িত্ব।
 
জিতু ভাই খাবার-দাবারের সব আয়োজন করছেন। এডিটর ইন চিফ কলাপাতায় শুধু সাদা ভাত, ডাল আর মাংস খেতে চেয়েছিলেন ঘাসে বসে। কিন্তু জিতু ভাইয়ের ‘সারপ্রাইজ’ ছিলো। সে গল্পে পরে আসছি।
 
বনভোজনের আগের দিন একটি অগ্রবর্তী দল পাঠানো হলো স্পটে। দলে আমিসহ সিনিয়র নিউজরুম এডিটর হুসাইন আজাদ, মাহবুব আলম ও নিউজরুম এডিটর সৈয়দ ইফতেখার আলম। ততক্ষণে ঢাকায় শিমু আপা, আজাদ বেগ ভাই ব্যস্ত গিফট কেনা, র‌্যাফেল ড্র’র মোড়ক লাগানো প্রভৃতি কাজে। হেড অব নিউজ মাহমুদ মেনন, আউটপুট এডিটর জাকারিয়া মন্ডল, এসএম সালাহউদ্দিন, অশোকেশ রায়, সিওসি সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, কান্ট্রি এডিটর শিমুল সুলতানা, ওয়েব ইন চার্জ অমিয় দত্ত ভৌমিক মিলে পরিকল্পনা করে নিলেন অফিসটাকে একদিনের জন্য কুমিল্লা বার্ডে তুলে নিয়ে যাওয়ার! তাদের পরিকল্পনা মতো আমরা অগ্রবর্তী দল গিয়ে পিকনিক স্পটেই কাপড়ে ঢেকে চেয়ার-টেবিল সাজিয়ে প্রস্তুত রাখলাম অফিসঘর। যেটাকে এডিটর ইন চিফ পরে নাম দিলেন ‘ঢেঁকিঘর’। সত্যিই তো! আনন্দে সময় কাটাতে গিয়েও কাজ। নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা সুপারভাইজারদের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে কাজ করলেন। এডিটর ইন চিফ মাঝে-মধ্যেই দিয়ে যাচ্ছিলেন প্রেরণা। কাজ কখনোই আলাদা হয়ে যায়নি, হয়ে উঠেছিলো আনন্দের অনুষঙ্গ।
 
শিয়াল ডাকা ঠাণ্ডা রাতে তৈরি হয় বনভোজনের আনু্ষ্ঠানিকতার মঞ্চ। জিতু ভাইয়ের সঙ্গে আমরা ক’জন পুরোদিন ঘুরলাম চরকির মতো। চাল, আলুর বাজার থেকে পিঠা-চায়ের ব্যবস্থা- সব হয়ে গেলো মুহূর্তের মধ্যে। জিতু ভাইয়ের সঙ্গী আশিক, মহিউদ্দিন ভাইয়েরও যেন ‘প্রেসটিজ ইস্যু’ হয়ে গেলো এ বনভোজন। তাদের কথা একটাই, বাংলানিউজ পরিবার মানেই আমাদের অতিথি। কুমিল্লার মানুষ অতিথিপরায়ণ। আমরা কোনো ফাঁক রাখতে চাই না। প্রতি মুহূর্তে আমাদের খোঁজ নিচ্ছিলেন এডিটর ইন চিফ। আমরা যথাসম্ভব কাজের আপডেট জানাচ্ছিলাম টেলিগ্রাম, ফোনে। তার প্রতিটি উত্তর ছিলো এমন, ‘দারুণ’, ‘অনন্যসাধারণ’! এগুলো জিতুভাইসহ পুরো টিমের শক্তি যোগাচ্ছিলো পরবর্তী কাজটি ভালোভাবে শেষ করতে।
 
এরমধ্যে চা পানের ব্যবস্থার বিষয়টি নিশ্চিত হয় সবার শেষে। চায়ের ব্যবস্থা হয়েছে- এটা শুনে সবচেয়ে বেশি স্বস্তি প্রকাশ করেন শিমু আপু। যেন চা হয়েছে, আর কিছু না হলেও চলবে!
 
রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত দৌড়াদৌড়ি শেষে গোরস্থান আর শিয়ালের ডাকে কিছুটা ভীতু হয়ে পড়া (!) হুসাইন আজাদকে কটেজে রেখে আমি, মাহবুব আর ইফতেখার গেলাম মঞ্চ দেখতে, সঙ্গে যদি পাই ভূতের দেখা! যথারীতি ভূতের গল্প করতে করতেই পা বাড়ালাম নীলাচল টিলার দিকে। কিছুদূর এগোতেই ছুটে এলেন দু’জন নিরাপত্তারক্ষী। খুশি হলাম। বুঝলাম আমাদের মঞ্চ, চেয়ারের নিরাপত্তায় রাখা মানুষের‍া সজাগ আছেন।
 
১২টা বাজতেই ঘুম। তবে ঘুম নামেই। টেনশনে ঠিকমতো ঘুম হলো না কারও। ভোর ৪-৫টা থেকেই জাগা। এডিটর ইন চিফের কড়া নির্দেশ সাড়ে ৬টার পর এক মিনিটও কারও জন্য অপেক্ষা না করে বসুন্ধরা সিটি থেকে গাড়ি ছাড়বে। আমরা অপেক্ষায় সবাইকে বরণ করতে। রাতেই অগ্রবর্তী টিম সকালের কাজের দায়িত্ব ভাগ করে নিলো। সে অনুযায়ী শুরু হলো ফোন দেওয়া ও কাজ বুঝে নেওয়া। এরমধ্যে যখন শুনলাম গাড়ি সম্ভাব্য সময়ের এক ঘণ্টা আগেই পৌঁছে যাবে তখন বেড়ে গেলো টেনশন। কাজ তখনও বাকি। এরমধ্যে অবস্থা বুঝতে পেরে এডিটর ইন চিফ তো মজা করে বলেই দিলেন, ‘আমরা এখনো জ্যামে, যা ঘাপলা ‍আছে দ্রুত সারো। ’ অনেক চেষ্টা করলেও কিছু কাজের জন্য পরের ওপরই নির্ভর করতে হয়। তবু শেষ পর্যন্ত সব কাজ সম্পন্ন হলো বাংলানিউজ পরিবার বার্ডে পৌঁছানোর আগেই।
 
কনকনে শীতে ভোর ৫টায় উঠে সবাই পৌঁছালো সোয়া ৯টার পর। সবার আগে এলেন এডিটর ইন চিফ। সবাই এসেছেন পরিবার নিয়ে। তবে পরিবার, মানে স্ত্রী, সন্তান, স্বামীদের সাজুগুজু দেখে বোঝার উপায় থাকলো না যে এতো ভোরে উঠে রেডি হতে হয়েছে!
 
এবার আপ্যায়নের পালা। গরুর খাঁটি দুধের গরম চা ততক্ষণে রেডি। একপাশে চলছে গরম গরম পিঠা তৈরি। এ পর্ব ভালোই সামলালেন সিনিয়র এক্সিকিউটিভ রেফারেন্স হ্যাপি রাংসা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট উর্মি মাহবুব, নিউজরুম এডিটর (আইভিআর) রাধু মনি দে। নীলাচলের বড় বড় গাছঘেরা সবুজ পাহাড়ি সান্নিধ্যে মুহূর্তে সবাই যেনো হয়ে উঠলো চনমনে। ক্লান্তি গেলো দূর হয়ে। একটু গা গরম করেই ছুট ফুটবল মাঠে। এর আগে পিঠা খেতে খেতে পরিচয় পর্ব হয়ে গেলো  বাংলানিউজ পরিবারের সদস্যদের ‘স্বামী-স্ত্রীদের’। এই পর্ব মাতিয়ে রাখলেন শিমু আপু ও ল’ এডিটর এরশাদুল আলম প্রিন্স ভাই। তিনি বাংলানিউজ পরিবারের ‘দুলাভাই’ হিসেবে বেশ জনপ্রিয়।
 
এতোকিছুর মধ্যে বাংলানিউজ কিন্তু পুরোপুরি আপডেট। কর্মীরা সবাই তৎপর। আউটপুট এডিটর জাকারিয়া মন্ডল, এডিশনাল আউটপুট এডিটর রাইসুল ইসলাম, ওয়েব ইন চার্জ অমিয় দত্ত ভৌমিক, নিউজরুম এডিটর মনিরুজ্জামান ছিলেন সার্বক্ষণিক। তারা সামলাচ্ছিলেন ঢাকা থেকে বিএনপির জনসভার খবর দিতে থাকা সিনিয়র স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট মান্নান মারুফ ও আওয়ামী লীগের জনসভার খবর দিতে থাকা স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট শামীম খানকে। অন্যদিকে ফোনে ফোনেই ‘ঢাকা’কে ‘বার্ডে’ নিয়ে আসছিলেন সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট মফিজুল সাদিক। হেড অব নিউজ মাহমুদ মেননও অনেকটা সময় কাটিয়েছেন এডিটর ইন চিফের ‘ঢেঁকিঘরে’। এছাড়া সিনিয়র নিউজরুম এডিটর জনি সাহা, সোহেলুর রহমান, ওয়েব এডিটর সাইদুর রহমান সজীব, আফসানা রীপা নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করেছিলেন বলেই অন্যরা খেলাধুলা, ঘুরে বেড়ানো কিংবা সবার খাওয়ানোর কাজগুলো ভালোভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছেন। পরিবারে সবাই যেমন কমবেশি ছাড় দিয়ে কোনোকিছু বুঝতে না দিয়ে চলেন, বাংলানিউজ পরিবারও তাই। যিনি কাজ করছেন তার মুখে না ঘুরতে পারার আক্ষেপ শোনা যায়নি একবারও। এসবের মধ্যেও ব্রেকিং দিতে তৎপর ছিলেন সিনিয়র নিউজরুম এডিটর কালাম আজাদ বেগ।
 
এবার যাই খেলার মাঠে। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ভাব ধরে নীল ‍আর হলুদ জার্সি পরে মাঠে নামলো এডিটর একাদশ ও নিউজরুম একাদশ। খেলা পরিচালনায় মাঠে নেমে গেলেন স্বয়ং হেড অব নিউজ। সঙ্গে ইসলাম বিভাগের প্রধান মুফতি এনায়েতুল্লাহ, স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট সাজ্জাদ খান। তার টিমকে উৎসাহ দিতে কালো গ্লাস পরে মাঠে এলেন এডিটর ইন চিফ।
 
খেলা মাঠে গড়াতেই শুরু হলো উত্তেজনা। নিউজরুম একাদশ প্রথমে এডিটর একাদশকে চেপে ধরলেও প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে ‘আলোচিত’ এক গোলে এগিয়ে যায় এডিটর একাদশ। সেই মুহূর্তে নিউজরুম একাদশের কোচ হিসেবে হোসে মরিনহো’র ভাব ধরা সিনিয়র নিউজরুম এডিটর এম জে ফেরদৌস চলে গেলেন মাঠের বাইরে। তাতে কী! দ্বিতীয়ার্ধে আরও দুই গোল হজম করতে হলো তার দলকে। ৩-০ গোলে জিতে গেলো এডিটর একাদশ। তাতে হাত-পা নেড়ে বুনো উল্লাস করছিলেন ব্রাজিলিয়ান টিমের নাম নিয়ে মাঠে নামা এডিটর একাদশের ম্যারাডোনা আকারের ‘কোচ’ ডেপুটি চিফ অব করেসপন্ডেন্টস আসাদ জামান।

মাঠে স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট জিএম মুজিবুরের ওয়ান প্যাক ভুড়ি নিয়ে দৌড় ছিলো দর্শনীয়। বাইরে থেকে সবাই বলাবলি করছিলো, বল ফাটলে সমস্যা নেই, মুজিবুর ভাইয়ের ভুড়ি তো আছে! তবে, এই খেলায় নিউজরুম একাদশের হয়ে হেড অব মার্কেটিং সিরাজুল ইসলাম সুমন ও এডিটর একাদশের হয়ে স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট শাকিল আহমেদ যে পারফর্ম করলেন, অনেকে তাতে ‘মেসি-রোনালদো’র দিন শেষ হয়ে আসছে বলেও ‘ভবিষ্যদ্বাণী’ করলেন।

খেলা শেষে ফের নীলাচলে। এবার মেয়েদের পিলো পাসিং, বাচ্চাদের বল ছোড়া এবং সুই-সুতোয় সেলাই প্রতিযোগিতা সম্পন্ন হলো ‍আনন্দ হৈ-চৈ এর সঙ্গে। এর মধ্যে শুরু হয়ে গেলো খাওয়া দাওয়ার পর্ব। মেয়ে ও শিশুরা শুরু করলো আগে। গাছঘেরা মাঠে ত্রিপল পেতেই বসে পড়লো খেতে। খাওয়া শুরু হতেই সবাই বুঝতে শুরু করলো খাওয়া নিয়ে জিতু ভাইয়ের বাকি কেরামতি। অবশ্য এডিটর ইন চিফ জেনেছেন রাতেই। শুধু ডাল-ভাত খাওয়ার কথা বললেও জিতু ভাইয়ের আয়োজনে একে একে বের হলো, ডাল, টমেটোর চাটনি, আলু ভর্তা, বেগুন ভাজি, মাংস, সালাদ আর সবশেষ আয়োজন কুমিল্লার এতিহ্যবাহী খাবার রসমালাই। এতো মানুষের রসমালাইয়ের অয়োজন সত্যি কঠিন ছিলো।

সব কিছুর মধ্যে ছবি তোলা কিন্তু বন্ধ ছিলো না। চিফ অব ফটো করেসপন্ডেন্ট কাশেম হারুণ, স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট জি এম মুজিবুর, দীপু মালাকার, আনোয়ার হোসেন রানা কাজটি চালিয়ে গেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। আর শখের ফটোগ্রাফার নিউজরুম এডিটর শুভ্রনীল সাগর তো ছবি তুলে বেড়ালেন সারাক্ষণ, প্রশংসাও পেলেন অনেকের কাছে। দিনশেষে তার নিজের ছবির কিন্তু টিকি মেলেনি। তবে তার ক্যামেরা কেনা সার্থক বটে!
 
খাওয়া চলতে চলতেই অনুষ্ঠিত হয় বনভোজনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দুটি খেলা গাছে চড়া ও মোরগ লড়াই। গাছে চড়ায় সময় মাত্র আট সেকেন্ড থাকলেও চ্যাম্পিয়ন চট্টগ্রাম অফিসের অফিস অ্যাটেনডেন্ট রুবেল মুহূর্তে উঠে গিয়েছিলো প্রায় গাছের চূড়ায়! তার খ্যাতি হয়ে গেলো ‘লেজ ছাড়া বানর’। আর মোরগ লড়াইয়ের চ্যাম্পিয়ন অফিস অ্যাটেনডেন্ট আশরাফুল আলম তো অন্যের গায়ে গুঁতা মেরে নিজের কাঁধে রক্তই জমাট বেঁধে ফেললেন! মোরগ লড়াইয়ে তার জেতাটা আগে থেকেই কনফার্ম হয়ে ছিল। এ কারণে যে, গত আসরেও কেউ তার কাছে পাত্তা পায়নি। সম্ভবত তার আগের আসরেও না!
 
ততক্ষণে খাওয়ানোয় ব্যস্ত সময় কাটালেন সিওসি সিরাজ ভাই, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ইসমাইল হোসেন, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর শামীম হোসেন, মাহবুব আলম, নিউজরুম এডিটর ইফতেখার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ফররুখ বাবু, শেখ জাহাঙ্গীররা। অফিসের পাইলট খ্যাত গাড়িচালক ফারুক ভাই, অ্যাটেন্ডেন্ট সাগর, মাহবুব, জনিদেরও দেখা গেল খাবার-দাবারের আপ্যায়ন ব্যস্ততায়। জিতু ভাই, আশিক ভাই ও আমি ছিলাম সার্বক্ষণিক। উর্মি, হ্যাপি দি ও রাধু মনিও ছিলেন তৎপর।

যারা খেতে বাকি ছিলেন তাদের ডেকে সবাইকে অব‍াক করে এডিটর ইন চিফ বসে পড়লেন কলাপাতায় খেতে। জিতু ভাইয়ের ‘সামান্য আয়োজন’ খেলেন তৃপ্তিভরে। তার খাবার গ্রহণের পর শুরু আরেক আকর্ষণীয় খেলা রশি টানাটানি। রিপোর্টার্স ভার্সেস নিউজরুমের এ খেলায় প্রথম টানেই ছিঁড়লো জাহাজ বাঁধা দড়ি। বোঝা গেলো বাংলানিউজের কর্মীদের কাজের মতো গায়ে-পায়ে শক্তিও কম নয়!
 
ও হ্যাঁ, এই খেলা, খাবার-দাবার, চা গ্রহণের ফাঁকে ফাঁকেই চলছিল আবৃত্তি, সংগীত পরিবেশন, কৌতুক। সিনিয়র নিউজরুম এডিটর বেনু সূত্রধর তো দরাজ গলায় বাউল গান গেয়ে হাজার টাকা পুরস্কারও পেয়ে গেলেন। গানে গানে কম মাতালেন না স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট শাকিল, নিউজরুম এডিটর সজিব তৌহিদ, ওয়েব এডিটর রফিকুল ইসলাম সোহাগরাও। আরও আকর্ষণীয় ছিল বাংলানিউজের আইভিআর সার্ভিসের জন্য অনেক কর্মীর রেকর্ড করা খবর পরিবেশন। সাউন্ড সিস্টেমে একেকজনের রেকর্ড যখন বাজছিল, তখন অন্যরা হাসছিলেন হো হো করে, আর পরিবেশনকারী বেচারা-বেচারীর অবস্থা বলাই বাহুল্য! তবে এ টিম টেলিভিশনে খবর প্রচারের প্রতিযোগিতায় নামলে যে এক পা-ও পেছাতে হবে না সেই ‘সিরিয়াস’ মন্তব্যও করলেন কেউ কেউ।

শেষে শুরু হলো পুরস্কার বিতরণী। একইসঙ্গে আকর্ষণীয় রসমালাই পর্ব। সুশৃঙ্খলভাবে সবার সহযোগিতায় পুরস্কার বিতরণী-রসমালাই পর্বও শেষ হলো। বাকি রইলো কেবল কাঙ্ক্ষিত র‌্যাফেল ড্র পর্ব। শেষের দিক দিয়ে লটারিতে প্রথম যে নামটি উঠলো সেটি চট্টগ্রামের ব্যুরো এডিটর তপন চক্রবর্তীর। আর শেষ মানে প্রথম পুরস্কারটি পেলেন আউটপুট এডিটর এসএম সালাহউদ্দিন। পুরস্কারটি নিশ্চয় সবাই জানেন, একটি টু-ডোর ফ্রিজ।

তবে, এর চেয়েও আকর্ষণীয় পুরস্কার ঢাকা টু কুয়ালালামপুর দু’টি করে, ঢাকা টু ব্যাংকক দু’টি করে, ঢাকা টু কলকাতা দু’টি করে, ঢাকা ‍টু কক্সবাজার দু’টি করে এবং ঢাকা টু সিলেট দু’টি করে উড়োজাহাজের টিকিট পেয়েছেন যথাক্রমে ওয়েব এডিটর রফিকুল ইসলাম উজ্জল, হ্যাপি রাংসা, কনসালট্যান্ট এডিটর জুয়েল মাজহার, ওয়েব এডিটর জিকো ডি রোজারিও ও মাহাবুব আলম।

সবশেষ আকর্ষণ ছিলো কমন গিফট। কর্মীদের সবার জন্য ছিলো একটি করে কমন গিফট। গিফট বিতরণ শেষে এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন ঘোষণা দিলেন, গিফটের প্যাকেটের যেকোনো একটির ভেতরে তার স্বাক্ষর রয়েছে। এটি যার প্যাকেটের মধ্যে পাওয়া যাবে তিনি পাবেন পাঁচ হাজার টাকা। আর এটি তাকে মেইল করতে হবে স্মার্টফোনে ছবি তুলে, অবশ্যই রাত ১০টার মধ্যে। এটা যে কর্মীকে আরও স্মার্ট বানাতে এডিটর ইন চিফের পদক্ষেপ তা বুঝতে বাকি রইলো না কারও। পরদিন অফিসে এসে জানা গেলো পুরস্কারটি গেছে অফিস অ্যাটেনডেন্ট মোরগ লড়াই বিজয়ী ‘বড় কপালে’র আশরাফ ভাইয়ের ঝুলিতে। আর নিউজরুমে যেতে যেতে আশরাফ ভাই বলে গেলেন, গাছে উঠে পুরস্কার পাইনি তো কী হইছে? শেষ পুরস্কার ঠিকই পাঁচ হাজার টাকা জিতিছি।
 
ফিরে আসার আগে জিতু ভাইকে আরেকবার ধন্যবাদ জানাতে ভুললেন না এডিটর ইন চিফ। বার্ড প্রশাসনের কর্তা মিজানুর রহমান, আব্দুল মান্নানের কাছেও কৃতজ্ঞতা। একতাই বল, কাজ করার শক্তি, সাফল্যের সিঁড়ি- গোটা বনভোজের মতো একটি আয়োজন সেটাই প্রমাণ করে। এটিই বাংলানিউজের মতো ২৪ ঘণ্টার সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের সারা বছরের কাজ করার শক্তি, এগিয়ে যাওয়ার উদ্দীপনা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৫
এএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।