সন্তানের—স্কুলে টিফিন না খেয়ে বাসায় ফেরত নিয়ে আসা কিংবা বকা খাওয়ার ভয়ে টিফিন ফেলে দেওয়া নিয়ে শঙ্কায় ভোগেন অভিভাবকেরা। বিশেষ করে বাড়ন্ত এই বয়সে স্কুলে দীর্ঘ সময় কিছু না খেয়ে থাকলে সন্তানের স্বাভাবিক বৃদ্ধিরোধের কিংবা অসুখে ভোগার ভয় পান বাবা-মায়েরা।
কম বয়সী শিশুদের বর্ধন, স্কুলগামী ছেলেমেয়েদের দৈহিক বৃদ্ধির হার মন্থর হয়ে এলেও এ সময়ের শেষে পরবর্তীকালে দ্রুত বর্ধনের জন্য দেহের প্রতিটি গ্রন্থিতে প্রস্তুতি আরম্ভ হয়। স্কুলে শিশুরা খেলাধুলা ও সঙ্গী-সাথীদের সঙ্গে সময় কাটাতে এতই ব্যস্ত হয়ে পড়ে বলে এ বয়সের শিশুরা খাওয়ার প্রতি আগ্রহ কম দেখায় বা তাদের আগ্রহ কমে যায়। অনেক সময় তারা স্কুল টিফিন খেতেও ভুলে যায়। ক্লাসের সময় হয়ে যায় ফলে আর টিফিন খেতে পারে না। তাই মায়ের ভয়ে অনেক সময় স্কুল টিফিন ফেলে দেয়। তাই মায়েদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে শিশুকে এমন আকষর্ণীয় পুষ্টিকর টিফিন দেওয়া যেন দেখেই খেতে ইচ্ছে করে। খেয়াল রাখতে হবে এ সময়টি বর্ধনের চরম সময়। তাই শিশুকে না চটিয়ে বুঝিয়ে টিফিন খাওয়াতে হবে। আর টিফিন যেন উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের পাশাপাশি অবশ্যই ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান সমৃদ্ধও হয়।
বর্তমান অস্থিরতার যুগে অল্প বয়সের শিশুদের পড়ার চাপ, বেশি বন্ধুদের প্রভাবসহ নানা কারণে খাওয়ার প্রতি অরুচি দেখা দেয়। তাই মা বাবার উচিত এসব শিশুদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক কিছু জ্ঞান দান করা। যেন তারা বুঝতে পারে সময় মতো টিফিন না খেলে ক্ষতিটা আসলে তারই।
শিশু সঠিকভাবে যাতে স্কুল টিফিন গ্রহণ করে তার জন্য মা বাবাদেরও কিছু করণীয় আছে:
* অনেক শিশু একা একা খেতে লজ্জাবোধ করে। তাই কষ্ট হলেও শিশুকে অভ্যস্ত করা পর্যন্ত টিফিনের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। যাতে শিশু সংকোচ বোধ না করে সহপাঠীকে সঙ্গে নিয়ে খেতে পারে। এতে করে সন্তানের মধ্যে টিফিন খাওয়ার প্রতি আগ্রহ বেড়ে উঠবে।
* একই টিফিন প্রতিদিন না দিয়ে একেক দিন একেক রকম টিফিন দিন।
* মাঝে মাঝেই সন্তানের টিফিন বক্স, পানির বোতল বদলে দিন। বাজারের নতুন মডেলের আকষর্ণীয় কোনো টিফিন বক্স কিনে দিয়ে তাকে টিফিনের প্রতি আগ্রহী করে তুলুন।
* ওর টিফিন নিজে গুছিয়ে না দিয়ে ওকেই গুছিয়ে নিতে সাহায্য করুন। এতেও ও টিফিনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে।
* স্কুল শেষে সন্তান বাড়ি ফিরলে আগ্রহের সঙ্গে ওর স্কুলের গল্প শুনুন। ওর কোনো বন্ধুর আনা টিফিনের প্রতি বাড়তি আগ্রহ শুনলে পরদিন সেটাই ওর টিফিনে দিতে চেষ্টা করুন।
* শিশুকে আস্তে আস্তে বুঝিয়ে বলতে হবে তার সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য স্কুল টিফিন গ্রহণের গুরুত্ব।
* শিশুকে ছোট ছোট মেডিটেশনের টিপস শিক্ষা দিতে হবে। যাতে শিশু অস্থির না হয়ে সব কাজ স্থির হয়ে করতে পারে।
* শিশুকে বকাঝকা না করে আদর-ভালোবাসার মাধ্যমে স্কুল টিফিনের বিশেষত্ব তুলে ধরতে হবে।
* স্কুল টিফিন খেলে পরবর্তী ক্লাসগুলো সে সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারবে এ বিষয়ে বাচ্চাকে বুঝিয়ে বলুন।
* শিশুর সঙ্গে সব বিষয়ে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চেষ্টা করুন। তাহলে সে তার সব সমস্যা আপনার কাছে খুলে বলতে শুরু করবে। তখন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৬
টিকে/
** ছোটদের সাধারণ সহবত
ফিচার
বাচ্চা টিফিন খেতে না চাইলে
আতিফ আতাউর, ফিচার রাইটার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।