ঢাকা: শিশুটির নাম রাশেদ। কে তার এই নাম দিয়েছে, তাও জানে না সে।
আমরা সমাজের স্বচ্ছল ও ধনীরা যখন প্রতিবেলায় খাবার নষ্ট করছি, তখন রাশেদের মতো শিশুরা ডাস্টবিন থেকে খাবার সংগ্রহ থেকে ক্ষুধা নিবারণ করছে।
তিনবেলা খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করো কিভাবে জানতে চাইলে রাশেদের সহজ-সরল উত্তর, ‘ক্যান ময়লার মধ্যে অনেক খাওন থাকে। ওইগুলা খাইয়া নেই। ’
বিমানবন্দর স্টেশনেই বাস রাশেদের। পুরনো বোতল-কাগজ-লোহালক্কর বিক্রি করে দিনে ৪০ টাকা থেকে ৬০ টাকা আয় হয়। পুরো টাকাটাই জমায় রাশেদ। জমানো টাকা দিয়ে সে স্কুলে ভর্তি হবে বলে জানায়। বলে, ‘পত্তেক দিনই ভাঙারির দোকানে বতলসহ অনেক জিনিস বেচি। বেশিরভাগ দিনই ৩০/৪০ টাকা হয়। মাঝে মাঝে ৬০ টাকাও হয়। টাকা জমাইয়া সামনের বছর স্কুলে যামু। স্কুলের জামা কিনমু। বই কিনমু। সকালে কতো পোলাপাইনরে দেখি ব্যাগ লইয়া স্কুলে যাইতাছে। আমারো মন চায়। ’
বড় হয়ে কী হতো চাও জানতে চাইলে একটু লাজুক হেসে রাশেদ বলে, ‘ক্যান ভাঙারির দোকান দিমু। ময়লা কুড়ামু না, কিনমু। ’
রাশেদের বন্ধু তারেক। ভাগ্যের পরিহাসে তাকে টোকাই হতে হয়েছে। তারেকের বাড়ি কুমিল্লায়। ছোটবেলায় তার বাবা, মাকে ছেড়ে যায়। এরপর তার মায়ের বিয়ে হয় অন্য একজনের সঙ্গে। সৎ বাবার অত্যাচারে বাড়ি ছাড়ে তারেক। পালিয়ে ট্রেনে করে ঢাকায় চলে আসে সে। তারপর থেকেই বিমানবন্দর এলাকার আশপাশে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ ঘেঁটে বোতল-কাগজ-লোহালক্কর সংগ্রহ একমাত্র কাজ হয়ে গেছে তারেকের।
কখনো বিমানবন্দর স্টেশনে, কখনোবা কোনো ডাস্টবিনের পাশের ফুটপাতেই রাত কাটে তারেকের। ময়লার গন্ধে এখন আর সমস্যা হয় না তার। বলে, ‘আগে গন্ধ লাগত ময়লার। অহন লাগে না। সারা দিনইতো ময়লা টোকাই। গন্ধ আর লাগব ক্যামনে। ’
বড় হয়ে কী হতে চাও জানতে চাইলে তারেক বলে, ‘জানি না। কিছুতো একটা হমুই। ’
রাশেদ, তারেকদের মতো অসংখ্য শিশুর জীবন-জীবিকার নির্ভর করে ডাস্টবিন ঘেঁটে ধনীদের ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট সংগ্রহ করে। আমাদের কতো কাছে তাদের বাস। অথচ তাদের দিকে ফিরে তাকানোর যেন সময় নেই কারও।
বাংলাদেশ সময়: ০০১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৬
ইউএম/আরএম