ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

হাওরের রাখাল বালকেরা...

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৬
হাওরের রাখাল বালকেরা... ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কিশোরগঞ্জ: ‘রাখাল ছেলে! রাখাল ছেলে!
বারেক ফিরে চাও, বাঁকা গাঁয়ের পথটি বেয়ে কোথায় চলে যাও?
ওই যে দেখ নীল-নোয়ান সবুজ ঘেরা গাঁ,
কলার পাতা দোলায় চামর শিশির ধোয়ায় পা,
সেথায় আছে ছোট কুটির সোনার পাতায় ছাওয়া,
সাঁঝ-আকাশের ছড়িয়ে-পড়া আবীর রঙে নাওয়া...

পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের রাখালী কবিতার দৃশ্য চোখে পড়ে কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার হাওর জনপদে। বিস্তৃর্ণ সবুজে গালিচা আদিগন্ত এখানে।

মাঠের পাড়ে ওই যে দূরের গ্রাম সেখানে বৃক্ষরাজিতে সমৃদ্ধ হাওর। মাটির আলপথ গেছে যেন সুদূর সুনীল আকাশের দূর দিগন্তে।

এখানে পাখিরা ওড়ে নির্ভয়ে, জলের ভেতর মাছেদের ডুব সাঁতার খেলা চলে নিত্য। সকালের নরম রোদে রাখাল বালকেরা আসে সবুজ মাঠের দেশে। দিনভর গরু-ছাগলের সঙ্গ ধরে, সবুজ কচি ঘাসে বাড়ে গৃহপালিত এসব প্রাণ। হাওর এমনই নয়ণাভিরাম শীত গ্রীষ্ম আর বর্ষায় এখানকার মায়া মুগ্ধ সাজ। হাওর আসলেই প্রিয় প্রাণ ও প্রকৃতির পল্লী কবি জসীম উদ্দিনের শোভন প্রচ্ছদ।

সরেজমিনে হাওর ঘুরে দেখা যায়, কিশোরগঞ্জ জেলার (অষ্টগ্রাম-ইটনা-মিঠামইন-নিকলী) ৪ উপজেলা হাওর বেষ্টিত। হাওর উপজেলাগুলোতে শুকনা মৌসুমে বিভিন্ন গ্রামের ১২-১৪ বছরের রাখাল বালকেরা গরু-মহিষ নিয়ে হাওরের মাঠে অবাধে বিচরণ করছে এবং ঘাস খাওয়াচ্ছে।

শীতের কুয়াশা কিংবা গ্রীষ্মের তাপদাহ তাদের কাবু করতে পারে না। কেউ নিজের গরু অথবা মহাজনের গরু নিয়ে মাঠে অবাধে বিচরণ করছে। আবার সেই বালকেরা সঙ্গে বহন করে আনা দুপুরের খাবার হাওরের মাঠেই খেয়ে নিচ্ছে। গরু বা মহিষদের ঘাস খাওয়াতে খাওয়াতে নিমগ্ন রাখাল বালক দু-এক লাইন বিভিন্ন ভারতীয় বা বাংলা সিনেমার গান গাইছে।

হাওরে রাখাল বালকের এটা প্রাত্যহিক সুখের জীবনধারা। দিনভর সবুজ ঘাসের মাঠে রাখালের এমন আনা-গোনা বিস্তৃর্ণ মাঠে আনে শোভন রূপ। এখানে জীবন চলে রাখালের উদয় অস্ত। রাখাল বালকের জীবন-জীবিকা যেন ঘাসের মাঠে। পরিবারের অভাব অনটনের মাঝে রাখাল বালকের এমন লড়াই চলে নিরন্তর। দারিদ্রের কষাঘাতে ওরা শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে পড়ে। তাই ওদের নামতে হয় অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে।
রাখাল বালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেসব বালকেরা কেউ প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডি পার হতে পারিনি। অভাবের তাড়নায় তাদের অন্যের বাড়ির গরু ও নিজেদের বাড়ির গরু বা মহিষ খাওয়াতে মাঠে যেতে হচ্ছে। আবার এসব বালকেরা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে ঘণ্টা দু’য়েকের জন্য একজনকে গরু-মহিষদের দেখে রাখার জন্য নিয়োগ দিয়ে বস্তা ও কাস্তি নিয়ে ছুটে যায় ঘাস কাটতে। কয়েকজন ঘাসের বস্তা এনে নিজেদের মধ্যে ঘাস বন্টন করে নয়।

ইটনা উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের সহিলা গ্রাম আনোয়ার মিয়া (১৩) বলেন, লেহাপড়া ভালা লাগে না, গরু রাখতেই ভালা লাগে।

নিকলী উপজেলার ছাতিরচর ইউনিয়নের ছাতিরচর গ্রামের লিটন মিয়া (১২) নামে এক রাখাল বালক বাংলানিউজকে বলেন, লেহাপড়া করমু কেমনে, বাবা-মা মাইনচের (অন্যের) খেতে কাম করে। আমিও মাজনের (মালিক) গরু রাখি ও খাওয়াই।

নিকলী আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিল আফরোজা মুন্নী বাংলানিউজকে বলেন, হাওর এলাকার অনেক ছাত্র-ছাত্রী ৩য় বা ৪র্থ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে। ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়া করতে ইচ্ছে থাকলেও সংসারের অভাবের কারণে তাদের আর লেখাপড়া হয়ে উঠে না।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৬
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।