ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

মিনি রসগোল্লা!

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৬
মিনি রসগোল্লা! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

দাঁড়াইল বাজার (বগুড়া) থেকে ফিরে: রসগোল্লা। সারাদেশে একই রকম।

তবে ব্যতিক্রমধর্মী রসগোল্লা পাওয়া যায় উত্তরবঙ্গে। আকারে ছোট। স্বাদে অতুলনীয়, দামেও কম। দেশের যে কোন স্থানে আকারের মতোই অবশ্য অপরিবর্তিত রসগোল্লার দাম।

ময়মনসিংহের বাজারে প্রতি কেজি রসগোল্লার দাম ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। এক কেজিতে ধরে ১৫ কী ১৬ পিস। তবে উত্তরবঙ্গে সেই রসগোল্লাই এক কেজিতে পাওয়া যায় ৩০ পিস! দামও আবার কম। মাত্র ১২০ টাকা।

বগুড়া জেলা শহর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে দাঁড়াইল বাজার। স্থানীয় গাবতলী ইউনিয়নের এ বাজারেই বিক্রি হয় ওই রসগোল্লা। দেখতে যেন অনেকটাই ‘মিনি রসগোল্লা। ’ আকারে দেখতে ছোট হলেও রসগোল্লা, রসগোল্লাই।

এর আলাদা কোন নাম নেই। তবে যে দোকানে এটি বিক্রি হয় তার নামটি অন্যরকম। মন চায় মিষ্টান্ন ভান্ডার। ওই বাজারের রাস্তার পাশে খোলামেলা স্থানে একটি চালা ঘরে ওই দোকান। এ রসগোল্লা সুস্বাদু। রসালো মিষ্টি। নরম হওয়ায় মুখে দিলেই মিলিয়ে যায়।

প্রতিদিন সকাল ৮টায় বড় বড় কয়েকটি ডিশ চৌকির উপর রেখে দোকান সাজিয়ে বসেন জাহিদুল ইসলাম। বয়স পঞ্চাশের কোটায়। স্থানীয় আজিজুল হক কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স পাস করা জাহিদুল নিজেই এ মিনি রসগোল্লার কারিগর।

বাবা আব্দুস সাত্তারও ছিলেন ক্ষুদে ব্যবসায়ী। ঐতিহ্যের ধারায় প্রায় ২৩ বছর ধরে রসগোল্লা, জিলাপি, বগুড়ার বিখ্যাত দই, লাড্ডু, মুড়ির মোয়া ও নিমকির পসরা নিয়মিত সাজিয়ে বসেন জাহিদুল। তার হাতে তৈরি সাদা রসগোল্লা স্থানীয়ভাবে বিশেষ সুনামও কুড়িয়েছে।

রসনাতৃপ্ত ছাড়াও স্থানীয়রা আত্মীয়’র বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া, বিয়ে, আকিকা, উৎসব আয়োজন কিংবা ভুরিভোজে এ মিষ্টির চাহিদা রয়েছে। এমন অনেক ক্রেতাও আছেন যারা এ ছোট রসগোল্লার টানেই এ বাজারে আসেন, এমনটি জানান স্থানীয় চকধানাই গ্রামের এহসান।  

ঈদে বা অন্য কোন উ‍ৎসবে শেকড়ের টানে যারা গ্রামে আসেন, তারাও ভিঁড় করেন এ দু’চালা মিষ্টির দোকানে। সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার চাহিদা অনুযায়ী জাহিদুলকে মিষ্টি সরবরাহ করতে গলদঘর্ম হতে হয়। সারা বছরই ভাল চলে তার দোকান।

সম্প্রতি ওই বাজারে গিয়ে আলাপ হয় জাহিদুলের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রতিদিন তার দোকানে সাদা রসগোল্লা বিক্রি হয় ২৫ থেকে ৩০ কেজি। আর সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বেড়ে যায় বেচাবিক্রি। তখন বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৫০ কেজি’র মতো। যার বাজারমূল্য ৬ হাজার টাকা। আর এক কেজি একশ’ গ্রাম ওজনের দই বিক্রি হয় ৬৫ টাকা দরে।  

জাহিদুলের বাড়িতেই আছে মিষ্টি তৈরির কারখানা। তিনি ও তার পরিবারের বউ-ঝিরাই নিজের হাতে তৈরি করেন রসগোল্লা, চিনি ও গুড়ের জিলাপিসহ কত কিছু। এ বাজারে আরো দু’একটি দোকান থাকলেও মন চায় মিষ্টান্ন ভান্ডারের সুনাম স্থানীয়দের মুখে মুখে।

খাঁটি দুধে গুণগত মানের ছোট রসগোল্লা তৈরি করা হয় বলে জানান এ বিক্রেতা। এ মিষ্টি তৈরি করতে প্রয়োজন চিনি ও দুধ। দুধ থেকে ছানা তৈরি করে রসগোল্লা, বানানো হয়।

জাহিদুলের দোকানের কোন সাইনবোর্ড না থাকলেও মিষ্টির প্যাকেটে লেখা ‘মনচায় মিষ্টান্ন ভান্ডার। ’ কেন এ নাম, জানতে চাইলে জাহিদুল ইসলাম জানান, এ নামটি দিয়েছেন তার ছোট বোন নাসিমা। সেও ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন।

তার ছোট বোন এ নাম দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘এ রসগোল্লা যে একবার খাবে বার বার খেতে মন চাইবে। তাই দোকানের নাম দেয়া হয়েছে ‘মন চায় মিষ্টান্ন ভান্ডার। ’

স্থানীয় দাঁড়াইল বাজারে এ মিষ্টির দোকান করেই নিজের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন জাহিদুল। তার ছোট ভাইও ওই বাজারে মুদির দোকান করেন। এ ব্যবসা করেই সংসারে স্বচ্ছলতার পাশাপাশি বাজারে ৩০ লাখ টাকা মূল্যের ১০ শতাংশ জমি ও স্থানীয় চকধানাই গ্রামের বাড়িতে ৫ বিঘা ধানী জমি কিনেছেন। যার প্রতি বিঘা দাম দেড় থেকে দু’লাখ টাকা।

একটি মাত্র সন্তান জাহিদুলের। ছোট্ট এ সন্তানকে নিয়েই অনেক স্বপ্ন তার। নিজের মুখেই বলেন, ‘টাকার অভাবে দিনাতিপাত করেছি। এখন একমাত্র সন্তানকে পড়াশুনা করিয়ে মানুষ করতে চাই। রসগোল্লার কারিগর নয়, ওকে সরকারি চাকরির উপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

বাংলাদেশ সময়: ০০৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৬
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।