ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

বদলাচ্ছে পত্রিকা পড়ার ধরন

সজিব তৌহিদ, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৬
বদলাচ্ছে পত্রিকা পড়ার ধরন ছবি: রাফিউল ইসলাম

ঢাকা: সকালে ঘুম থেকে আড়মোড়া ভেঙে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ছাপা পত্রিকা পড়ার দিন কি শেষ হয়ে যাচ্ছে? প্রযুক্তির উন্নয়নে কি ফিকে হয়ে যাচ্ছে বহুবছরের এ সংস্কৃতি?  না, ফিকে হচ্ছে না। পত্রিকা পড়ার সংস্কৃতি ঠিকই আছে, বরং ধরন পাল্টে গিয়ে যোগ হয়েছে নতুনমাত্রা।



ইদানিং স্মার্টফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ ও কম্পিউটারসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসে ঝটপট চলে পত্রিকা পড়ার কাজ। অনলাইনে এটি এখন অনেক বেশি সহজ ও সাশ্রয়ী।

চলতি পথে, যানবাহনে বা কাজের ফাঁকে টুক করে স্মার্টফোনের মাধ্যমে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের খবর জানা এখন অতি সাধারণ বিষয়। অন্তত বর্তমান তরুণ প্রজন্মের দিকে দৃষ্টি দিলে সেটিই দেখা যায়। আর এটি সম্ভব হয়েছে বিগত কয়েক বছরে দেশে তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ খাতে উল্লেখযোগ্য সমৃদ্ধির কারণে।

বড়রাও অবশ্য কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনলাইনে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করছেন। ফলে প্রতি মুহূর্তে অনলাইন পত্রিকাগুলোর ‘ভিজিটর’ (পাঠক) বাড়ছে।

এছাড়া মাসচুক্তি ৩শ টাকায় একটি ছাপা পত্রিকা পড়ার চেয়ে, প্রায় সমপরিমাণ টাকায় এক গিগাবাইট কিংবা তার চেয়ে বেশি ইন্টারনেট প্যাকেজ নিয়ে দেশি-বিদেশি শত শত পত্রিকা পড়ার সুযোগ, সঙ্গে ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন অনলাইন সেবা নেওয়ার সুবিধা কেউ হাতছাড়া করবেন কেন!

রাজধানীর নর্থ সাউথ ও ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী রাসেল, রাফিউল, উদয়, আশরাফ, শাওন ও নিফাত- সবারই প্রায় একই মত, তাদের ব্যাচেলর ফ্ল্যাটে ছাপা পত্রিকা নেওয়া হয় না। দেশ-বিদেশের প্রয়োজনীয় সংবাদ তারা অনলাইন পত্রিকায় তাৎক্ষণিকভাবে পড়ে ফেলেন। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ছাপা পত্রিকা পড়া এখন সেকেলে মনে হয়।

বিশ্ব হাতের মুঠোয় বন্দি। ফেসবুকে সক্রিয় থাকলে ছাপা পত্রিকার পুরনো খবর পড়ার দরকার হয় না বলেও মনে করেন তারা।

কুমিল্লায় কর্মরত পল্লীবিদ্যু‍ৎ সমিতির সহকারী হিসাবরক্ষক মেহেরুল আমিন বলেন, বর্তমান প্রজন্ম খুব অস্থির। অস্থির চিত্তে দ্রুততার সঙ্গে তারা সব জানতে চায়। এজন্য অনলাইনের বিকল্প নেই।

রাজধানীর মহাখালীর রহিম-আফরোজ করপোরেট প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়ে প্রশাসন ও মানবসম্পদ বিভাগে কর্মরত খালেদা নাসরিন রিজা, ঢাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডে কর্মরত ঊর্ধ্বতন হিসাব সহকারী সুপর্ণা দত্ত, হবিগঞ্জে কর্মরত আরএফএল গ্রুপের ট্রেইনি এক্সিকিউটিভ উজ্জ্বল মুশফেকদের মতামত সারমর্ম করলে দাঁড়ায়, ব্যস্ততার কারণে ছাপা পত্রিকা তেমন পড়ার সুযোগ হয় না। টেলিভিশনে খবর দেখারও সুযোগ কম। সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোনই খবর জানার উত্তম মাধ্যম।

দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠা কিছু অনলাইনে পত্রিকার মনগড়া খবরে তারা প্রায়ই বিভ্রান্ত ও অস্বস্তিকর পরিস্থিতে পড়েন বলেও জানান তারা।

রংপুর কারমাইকেল কলেজের বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সুস্মিতা রায় বলেন, আমাদের কলেজ হোস্টেলে বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিক নেওয়া হয়। সেসব পড়ি, সেই সঙ্গে মোবাইল ফোনেও নিউজ পড়া হয়।

ঢাকা ইডেন কলেজের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী দিলরুবা সরকার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নিজেকে আপডেট রাখেন বলে জানান তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গভর্ন্যান্স স্টাডিজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী নাহিদ আলম জানান, সারা বিশ্বজুড়ে প্রিন্ট মিডিয়ার ধস নেমেছে। বাংলাদেশেও তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে অনেক পত্রিকার সার্কুলেশন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারাই এ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকবে, যারা যুগের চাহিদা অনুযায়ী পত্রিকার অনলাইন ভার্সন চালু রাখতে পারবে।

‘টেলিভিশনেই বেশি খবর দেখি, মাঝে-মধ্যে পত্রিকা কিনি। অনলাইনে কীভাবে ঢোকে এখনও ভালো করে শিখে উঠতে পারিনি’, বলেন চাকরি থেকে অবসর নেওয়া রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর স্থায়ী বাসিন্দা আবু রায়হান খাশনবীস।

মাস্টার্স শেষ করেছেন এমন চাকরিপ্রত্যাশী শাহ আলম, মমিনুল ইসলাম ও আসাদুজ্জামানরা একজোট হয়ে জানান, অনলাইন-অফলাইন সব মিলিয়ে প্রস্তুতি চলছে। এক্ষেত্রে অনলাইনভিত্তিক কিছু সাইট, পেজ, গ্রুপ প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা ঢাকার আমেরিকান দূতাবাসের তথ্য কর্মকর্তা ফারজানা ইলা বলেন, বাসায় পত্রিকা রাখা হয়। কিন্তু আমার পড়া হয় না। অফিসে কাজের ফাঁকেই কম্পিউটার কিংবা মোবাইল ফোনে পত্রিকা দেখার কাজটি সেরে নিই।

ফেসবুকে অনেকে নিউজের লিঙ্ক শেয়ার করে, তা থেকেই টুকটাক পত্রিকা পড়া হয় বলে জানায় ঢাকার ফয়জুর রহমান আইডিয়াল ইনস্টিটিউটের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আতিক ইয়াসির রিসাদ।

দেশের সর্বত্র ইন্টারনেট ব্যবস্থা সহজলভ্য হওয়ায় প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছাপা পত্রিকার চেয়ে অনলাইনে বেশি মানুষকে পত্রিকা পড়তে দেখা যায়। এভাবেই পত্রিকা পড়ার সংস্কৃতির ধরন বদলাচ্ছে। ভবিষ্যতে সেটি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, সেটি ভাবার দায়িত্ব না হয় বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখকদেরই ওপরই থাক।

বাংলাদেশ সময়: ০০৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৬
টিআই/এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।