ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

আগের জৌলুশ নেই শ্যামবাজারের

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৬
আগের জৌলুশ নেই শ্যামবাজারের ছবি: দিপু মালাকার/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: পাইকারি বাজার মানেই শ্যামবাজার। ঢাকার অন্যতম পুরাতন বাজার।

ব্রিটিশ আমল থেকে ঢাকাবাসীর বিভিন্ন পণ্যের যোগান দিয়ে আসছে বাজারটি। তবে বর্তমানে এর জৌলুশ আগের মতো আর নেই। এক সময় পাইকারদের ভিড় ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁক-ডাকে মুখরিত থাকা বাজারে এখন অনেকটাই নীরবতা।

কারওয়ানবাজার, যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর, টঙ্গী, বাইপাইল, মিরপুর, মহাখালীতে পাইকারি বাজার গড়ে ওঠার কারণে এই বাজারের অবস্থা আগের মতো নেই বলে জানালেন আড়তদাররা।

এক সময় শ্যামবাজারের পণ্যবাহী ট্রাকের জটলা রায়সাহেব বাজার ও ইংলিশ রোড ছাড়িয়ে যেতো। কিন্তু বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দিনগত গভীর রাতে গিয়ে দেখা গেলো কোনো জটলাই নেই।

স্মৃতি বাণিজ্যালয়ের মালিক নুরুল ইসলাম (৪৭)। প্রায় ২০ বছর ধরে শ্যামবাজারে ব্যবসা করছেন। তিনি বাংলানিউজকে জানালেন, ঢাকার মধ্যে অনেক পাইকারি বাজার গড়ে ওঠার কারণে শ্যামবাজার আগের মতো আর জমে না। ঢাকার অন্যান্য মোকামের পাইকাররা এখন শ্যামবাজারে না এসে পোর্ট ও কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি পণ্য কিনছে।

শ্যামবাজার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত। নেই কোনো সাপ্তাহিক বন্ধ। এ বাজারে সাধারণত রাতে ভিড় বেশি হয়। আগের থেকে আড়তের সংখ্যা বেড়েছে কিন্তু বাড়েনি বেচাকেনা।

সাধারণত প্রায় দৈনন্দিন খাদ্য তালিকার সব কাঁচা বাজার, ফলমূল ও তেল-মসলা পাওয়া যায় এখানে।

বর্তমানে ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে নাসিক পেঁয়াজ, চায়না থেকে রসুন ও আদা আমদানি হচ্ছে। দিনমজুররাও ট্রাকে আসা এসব পণ্য লোড-আনলোড করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। প্রতি বস্তা পণ্য ট্রাক থেকে নামালে চার টাকা মজুরি দেওয়া হয়। এতে করে গড়ে প্রতিরাতে চার থেকে পাঁচশ টাকা আয় করেন তারা।

আয়ুব আলী (৩৮)। প্রায় ১৩ বছর ধরে শ্যামবাজারে দিনমজুরের কাজ করেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, শাম (শ্যাম) বাজারের কারবার ঢাকার ম্যালা জায়গায় ছড়ায়া গ্যাছে। তাই জৌলুশ কম।

শ্যাম বাজারে নানা ধরনের পণ্য বিক্রির ভাগ আছে। যেমন– ১নং রোডে বুড়িগঙ্গা নদীর পাড় ঘেঁষে রয়েছে- আম, কাঁঠাল, লিচু ও অন্যান্য ফল। নদীর পাড়ের রাস্তার বিপরীত পাশে পাওয়া যায়- আলু, পেঁয়াজ, আদা, রসুন ইত্যাদি। মূল বাজারের মাঝামাঝি ও নদীর পাড় ঘেঁষে বিভিন্ন রকম শাকসবজির বাজার বসে।

তবে ঢাকা শহরের অন্যান্য পাইকারি বাজারের চেয়ে শ্যামবাজারে এখনও পণ্যের দাম কম। সরেজমিন দেখা গেছে, পাইকারিতে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ২৫ থেকে ২৬ টাকা, ভারতীয় রসুন ১৭ থেকে ১৮ টাকা, দেশি রসুন ৬৫ টাকা, চায়না রসুন ১৮০ টাকা, আদা ৪০ থেকে ৪২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মেসার্স রাজ ভাণ্ডার ট্রেডিংয়ের মালিক হাজী মো. মাজেদ বলেন, শ্যামবাজারের বিকল্প হিসেবে অনেক বাজার ঢাকা শহরের মধ্যে গড়ে উঠেছে। তবে পাইকারিতে আমাদের মতো কম দামে পণ্য দিতে পারবে না কোনো বাজার। আগে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, গাজীপুর, নরসিংদী ও মুন্সীগঞ্জের পাইকাররা এখান থেকে মাল নিয়ে যেতো। তবে ঘরে ঘরে মোকাম হওয়ার কারণে শ্যামবাজার আগের মতো আর জমজমাট নেই।

শ্যামবাজারকে ঘিরে গভীর রাতে চলে ক্ষুদ্র বেচাকেনাও। বরিশাল সদরের নতুন বাজারের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান (৬১)। ৪০ বছর কেটেছে তার শ্যামবাজারে। এর মধ্যে প্রায় ২০ বছর শ্যামবাজারের কাছে লালকুঠীর পাশে তেহারি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। সারারাত তেহারি বিক্রি করে দিনে বিশ্রাম নেন মান্নান।

শ্যামবাজার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এহন গাড়িগুড়ি (গাড়ি-ঘোড়া) কম আহে। আগে এলসি মাল শাম (শ্যাম) বাজারেই আইতো। এহন অনেক মুকাম (মোকাম)। জ্যামের কারণে আগে শাম বাজারের নাম শুনলে গাড়ি আইতো না। এহন কোনো জ্যাম নাই।

বাংলাদেশ সময়: ০০৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৬
এমআইএস/আরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।