ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

বাদাম যেন বালুর নিচে লুকানো সোনা

রফিকুল আলম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৫ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৬
বাদাম যেন বালুর নিচে লুকানো সোনা

ধুনট (বগুড়া): ধূধূ বালুচর। চিক চিক কণার বুকে লতানো সবুজ গাছ।

গাছের মুঠি ধরে টান দিলেই উঠে আসে থোকা থোকা বাদাম। যার রং সোনালি। যেন বালুর নিচে লুকানো মুঠো ভরা সোনা।

অক্লান্ত পরিশ্রমে ফলানো এ ফসল। এবার বালুচরে এ ফসলের বাম্পার ফলন হয়েছে। আর হাসি ছড়িয়ে পড়েছে কৃষকের মুখে।

এক সময় বালুর আস্তরণ পড়া চরের জমিগুলো প্রায় অনাবাদি পড়ে থাকতো। বালু মাটিতে তেমন কোনো ফসলের চাষ হয় না। তাই সেদিকে নজরও ছিল না কারো। কিন্তু সেই জমিতেই এখন ফলছে বাদাম। কয়েক বছর ধরে বগুড়ার ধুনট উপজেলায় যমুনা নদীর চরাঞ্চলের জমিতে পুরোদমে চলছে এ বাদামের চাষ।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৪০ বছর আগে যমুনা নদীর ভাঙনে ১৪টি গ্রামের বসতভিটা ও আবাদি জমি বিলীন হয়ে যায়। ফলে পথে বসে হাজার হাজার সমৃদ্ধ কৃষক। ২০ বছর পর যমুনার বুকে জাগতে শুরু করে নতুন নতুন চর। জেগে ওঠা এ চর প্রথম দিকে কৃষকদের কোন কাজেই আসতো না। কিন্তু ৭-৮ বছর আগে কয়েক জন চাষি চরের জমিতে স্বল্প পরিসরে চিনা বাদামের আবাদ শুরু করেন।

বৈশাখি চরের রুবেল মিয়া জানান, নতুন জেগে ওঠা চরের উপরিভাগে অধিক পরিমাণ বালু থাকায় সেসব জমিতে অন্য কোনো ফসল হয় না। এ কারণে কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসে সেসব জমিতে বাদাম রোপণ করা হয়। কাঁচা বাদাম কেনার পর তার ছাল ছড়িয়ে ভেতরের কোয়া (বীজ) রোপণ করা হয়।

তবে এজন্য জমিতে বাড়তি কোনো খরচের প্রয়োজন পড়ে না। শুধু জমিতে লাঙল দিয়ে লাইন টেনে তার ভেতর এক ফুট দুরত্বে বাদামের বীজ ফেলে বালুমাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। এরপর আর কোনো কাজ নেই। আপনাতেই চারা গজিয়ে সেখানে বাদাম ফলে।

প্রতি বিঘা জমিতে বাদাম চাষে তার খরচ হয় সর্বোচ্চ দেড় হাজার টাকা। আর সেখানে ফলন পাওয়া যায় ৮ থেকে ১০ মণ।

নিউসারিয়াকান্দি চরের বাদাম চাষি মতিউর রহমান বলেন, ফ্যালে থোয়া ব্যালা মাটিত বাদাম আবাদ করে যা ট্যাহা পাওয়া যাচ্চে তাই কম কিসে? মাটি ফ্যালে থুলে তো কুনু ট্যাহাই পাওয়া গেলোনা হিনি। এক মণ বাদাম বেচে দুই হাজার ট্যাহা পাওয়া মন্দ না।

বৈশাখি চরের আজিজল হক বলেন, গেলবার ৭০০ থ্যাকে ৮০০ ট্যাহা মণ বাদাম বেচা হচে। ইবার সেটি দুই হাজার ট্যাহা মণ। ফলনও ভালো হচে, দামও বেশি। হামরা এতে বেজাই খুশি।

সরেজমিন দেখা যায়, বৈশাখি, রাধানগর, নিউসারিয়াকান্দি, বতুয়ার ভিটা ও পুকুরিয়া চরাঞ্চলে প্রায় তিন হাজার হেক্টর বালুর আস্তরন পড়া জমিতে কোন ফসল হয় না। এসব জমি বাদাম চাষের আওতায় আনা গেলে চরের হতদরিদ্র কৃষকদের মুখে হাসি ফুটানো সম্ভব। এ কাজে স্থানীয় কৃষি বিভাগকেই প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে। আর এমনটাই প্রত্যাশা নদী ভাঙন কবলিত কৃষকদের।

ধুনট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, যমুনা নদীর চরে এ বছর বাদামের আবাদ ও উৎপাদন ভাল হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাদামের দানাও পরিপুষ্ট হয়েছে। এছাড়া বাদাম গাছে তেমন কোন রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ ছিল না। ফলে কৃষকরা বাদামের বাম্পার ফলন পেয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৩১ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৬
আরএ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।