ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

১২০০ টাকায় কস্তুরি পান ঢাকায়!

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০১৬
১২০০ টাকায় কস্তুরি পান ঢাকায়! ছবি: দীপু মালাকার-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

একটি পানের দাম ১২০০ টাকা। মাসে বিক্রি হয় অন্তত চার খানা।

প্রতি সপ্তায় একবার ক্রেতা আসেন। পান খান। চলে যান। বছর কয়েক ধরে নিয়মিতই আসেন। মাঝে মধ্যে বাদ যায়। সেটা ধর্তব্যের নয়।

কিন্তু এই মুরসালিনের পানের দোকানে তিনি আসেন। কথা হচ্ছিলো রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পের সামনে মুরসালিন বৌ সাচি মিষ্টি পানের দোকানে বসে। পানের পসার সাজিয়েছেন দোকানি আবদুল খালিদ। এই দোকানে একটি পানের দাম ১২০০ টাকাও রয়েছে। সেই পানে পড়ে প্রায় দেড়শত পদ। যারমধ্যে মৃগনাভী কস্তুরিও রয়েছে। তবে সবচেয়ে কমদামি পানের প্রতিটি ১৫টাকা। দোকানের নাম মুরসালিন বৌ সাচি মিষ্টি পান। স্লোগান: ‘আহা কি স্বাদ ভুলা যায় না’। অধিকাংশ পানই আসে মহেশখালী থেকে। ফলে এর আরেকটি নাম মুরসালিন মহেশখালী সাচি মিষ্টি পান।

পানের দোকান মানে বড় কোনও আয়োজন নয় স্রেফ একটি বক্স। সেই বক্সে থরে থরে সাজানো পান সাজানোর নানা উপকরণ।

পান খাইতে সুপারি লাগে... আরও লাগে চুন। জর্দা বুঝি পানের গুন। এর বাইরে খয়ের মুখ লাল করে। পান আর পানের উপকরণ নিয়ে সাধারনের জ্ঞান এটুকুই। কিন্তু মুরসালিন বৌ সাচি মিষ্টি পানের দোকানে শত উপকরণ। খেজুর, খোরমা, চেরি ফল, হালুয়া, মেওয়া, আচার, চমনবাহার, মিস্রি, মিকচার মসলা, নারকেল, বাদাম, মধু, গোলাপজল, পানপরাগ এমন আরও অনেক নাম। তারই মধ্যে একটি দেখা গেলো মৃগনাভী কস্তুরি।

একটি পানে কত পদ থাকে? সে প্রশ্নে দোকানি আবু খালিদের উত্তর: দামের ওপর পানের মান। যে যেমনটা খেতে চায় তেমনটাই বিক্রি হয়। মৃগনাভী কস্তুরি দিয়ে সবচেয়ে দামি পানটি তৈরি হয়। এর বাইরে আরও অন্তত পঞ্চাশ পদ মিশ্রিত হয় সেই পানে। এর নাম কস্তুরি সাচি মিষ্টি পান। সাধারণ দর ২৬০ টাকা। সাধারণ বিক্রির এটাই সবচেয়ে বেশি দামের পান। তবে সব আইটেম মিলিয়ে একটি পানে ১৪২ পদের ব্যবহার করে মৃগনাভী কস্তুরি দিয়ে যে পান বিক্রি হয় তার ক্রেতা কম। এর প্রতিটি পানের দাম পড়ে ১২০০ টাকা। একজন নিয়মিত ক্রেতা রয়েছেন যিনি সপ্তাহে একদিন মুরসালিন বৌ সাচি মিষ্টি পানের দোকানে আসেন আর কস্তুরিসহ সব উপকরণ দিয়ে পান খান।

দোকানের মালিক আবদুল খালিদ। দিনে কয়েক হাজার টাকার বেচাকেনা হয় এই ছোট্ট বক্স দোকানে। তবে এতে তার পুঁজিও রয়েছে লাখ টাকার বেশি।

পানের তালিকায় দেখা গেলো ২৮ ধরনের পান বিক্রি হয়। ধরন পাল্টায় পানের উপকরণে সেসব আসে ভারত-পাকিস্তান থেকেও। ‘ইন্ডিয়ান মসলা দিয়ে মিষ্টি পান বিক্রি হয়’ বলে বিজ্ঞাপনও রয়েছে দোকানের গায়ে। তবে এখানকার প্রধান পান মহেশখালীর সাঁচি মিষ্টি পান। এছাড়া কলকাতা, পাকিস্তানি, রাজশাহীর পান রয়েছে।

পানের ঐতিহ্য রয়েছে এমন স্থানের মতো করেও পান বানানোর চেষ্টা করেন দোকানি। এখানে শাহী পান, বানারস, দিল্লি সাচি মিষ্টি পান, শাহজাহান সাচি মিষ্টি পান, বোম্বাই সাচি মিষ্টি পান, কাশ্মিরি সাচি মিষ্টি পান। এগুলো স্থানভিত্তিক। এর বাইরেও রয়েছে মনকাড়া বিভিন্ন নাম। যার অন্যতম বৌ সাচি মিষ্টি পান- দাম ৫০ টাকা। এই পানটিই একটু বেশি চলে। এছাড়াও জামাই বাবু সাচি মিষ্টি পান, কি যাদু করেছে, দিলখুশ, চমনবাহার, লায়লা-মজনু, জামাই-বউ ইত্যাদি। দিনে এক হাজারেরও বেশি পান বিক্রি হয় এই দোকানে।

ব্যবসা কেমন সে নিয়ে বিস্তারিত বলতে নারাজ আবদুল খালিদ। তবে জানালেন, সবসময় ব্যবসা তিনি খোঁজেন না। কেউ যদি একটা দামি মসলা দিয়ে পান খেতে চায়, কিন্তু যদি টাকা না থাকে, তখন তাকে নিরাশ করেন না। বললেন, অনেক সময় রিক্সাওয়ালারা আসে, একটা পান খাওয়াবেন, অত টাকা নাই। আমি তাদের পান দেই। পান খাইয়ে মানুষ যখন আনন্দ পায় তখনই আমার ভালো লাগে, বলেন আবদুল খালিদ।


বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১৬
এমএমকে/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।