ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

জীর্ণ দশা রংপুর পাবলিক লাইব্রেরির, পাঠক শুধু পত্রিকার

মাহবুব আলম, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৬
জীর্ণ দশা রংপুর পাবলিক লাইব্রেরির, পাঠক শুধু পত্রিকার

রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি ঘুরে: ‘আমি যে-কোন দেশে গেলেই দুটি জিনিস দেখি, একটা কাঁচাবাজার, অন্যটা বইয়ের দোকান। আমার মনে হয় কাঁচাবাজার আর বইয়ের দোকান সম্ভবত সমাজের অবস্থার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট নির্দেশক।

যে-দেশে বইয়ের দোকান নাই সে-দেশে লেখাপড়া খুব হয় তা বিশ্বাস করি না। কাঁচাবাজার দেখলেই বোঝা যায় দেশের অবস্থা কেমন। বইয়ের দোকানে গিয়ে কী ধরনের বই পাওয়া যায়, কেমন বিক্রি হয়, তা দেখেই দেশের জ্ঞানচর্চার অবস্থা বোঝা যায়’।

কথাগুলো বলেছিলেন জাতীয় অধ্যাপক জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক।

এই জ্ঞান চর্চার জন্যই ১৮৩২ সালে কুণ্ডীর জমিদাররা রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেন। এক পর্যায়ে এর দায়িত্ব নিয়েছিলেন রাজমোহন রায় চৌধুরী আর পৃষ্টপোষকতা করেছিলেন তুষভাণ্ডারের রমণীমোহন রায় চৌধুরী ও কাকিনার মহিমারঞ্জন রায় চৌধুরী।

আরও পড়ুন- দু’মাসি ভাদ্রে বৃষ্টির খেলা । ।  স্বপ্নে পাওয়া সত্যপীরের গান । ।  বিলাসী মহেন্দ্রের সাক্ষী হাওয়াখানা

গ্রন্থাগারের ফাঁকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য বই। কোনোটা সমাজ-সংস্কৃতি বিষয়ক, তো কোনোটা সাড়া জাগানো প্রেমের উপন্যাস। শুধু নেই পাঠক!
প্রতিদিন বিকেলে কেবল স্থানীয় বয়ঃবৃদ্ধ ব্যক্তিরা খবরের কাগজ পড়তে আসেন। তবে নতুন প্রজন্মের কেউ আসেন না বললেই চলে।
দৈনিক পত্রিকা পড়ার জায়গাই হয়ে দাঁড়িয়েছে গ্রন্থাগারটি।

বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে লাইব্রেরিতে গিয়ে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেলো।

প্রাচীন এই গ্রন্থাগারের ভবনটি বিরাট জায়গার ও নির্মাণ করা হয়, সঙ্গে খেলার মাঠ। পাঠক খুঁজে পাওয়া না গেলেও মাঠে বসে আড্ডা দেওয়ার তরুণ-তরুণীদের সংখ্যা কম নয়।

এখানে রয়েছে বিপুল সংখ্যক বই, পাণ্ডুলিপি, পুঁথি, উৎকীর্ণলিপি ও প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ। আরও পড়ুন- গাঁয়ের বধূর মনের কথা মেয়েলী গীত । ।  ‘নিজ সংস্কৃতি নিয়ে হীনমণ্যতা বিলুপ্তির কারণ’ । ।  দাড়িয়াবান্ধা নেই, বিলুপ্ত বৌচি

স্থানীয় অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো- সেসবের খোঁজ জানেন না তারা।

রংপুর কারমাইকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আল আমিন। কোনোদিন গ্রন্থাগারে যাননি তিনি। বললেন, যা পড়ি মোবাইল থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করেই পড়ি। হঠাৎ কোনো রেফারেন্স বইয়ের প্রয়োজন হলে কলেজ লাইব্রেরিতে যাই, প্রয়োজনীয় অংশটুকু ফটোকপি করে নিই।

গ্রন্থাগারিক (চলতি দায়িত্বে) আজিজুল ইসলাম সানু বাংলানিউজকে জানান, ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে এবং ১৯০৩ সালে এক অগ্নিকাণ্ডে অনেক কিছুই নষ্ট হয়ে গেছে। তারপরও এই গ্রন্থাগারের সংগ্রহ নেহাত কম নয়।

তিনি বলেন, ১৯৯১ সালে পাশেই নতুন একটি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে সেখানেই মানুষজন বই পড়তে যান। তবে সে পাঠকের সংখ্যাও খুব বেশি নয়।

বললেন, প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ লাইব্রেরিটি খোলা থাকে। স্থানীয়-জাতীয় মিলিয়ে এখানে সাতটি দৈনিক পত্রিকা রাখা হয়।
‘বইগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখন শুধু পত্রিকা পড়তে আসেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ’।

রংপুরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বই থেকে জানা যায়, কুণ্ডীর সুরেন্দ্র চন্দ্র রায় চৌধুরী ও জেলার অন্যান্য জমিদারদের উদ্যোগে গ্রন্থাগার ভবনেই ১৯০৬-০৭ সালে স্থাপিত হয় রংপুর সাহিত্য পরিষদ।

বঙ্গভঙ্গ রদের পর ১৯১২ সালে এর পাশে অ্যাডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হল নির্মাণ করা হয়। এখানে রয়েছে শিল্পকলা একাডেমি, গণগ্রন্থাগারসহ বেশ ক’টি সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয়।

রংপুর লেখক সংসদের সহ-সভাপতি এএসএম হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, একটি জাতির মানসিকতার উন্নয়নে সহায়ক শক্তি গ্রন্থাগার। যে জাতি যত বেশি উন্নত সে জাতির কাছে গ্রন্থাগার ততো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

‘সৃজনশীল মানুষ গড়ে তুলতে হলে নতুন প্রজন্মকে বইয়ের প্রতি আকৃষ্ট করতেই হবে, এটা জরুরি’।

** দিঘীর নাম নীলসাগর

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৬
এমএ/এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।