ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

কেএফসির ভর্তা-ভাতে বেজায় সুনাম!

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০১৬
কেএফসির ভর্তা-ভাতে বেজায় সুনাম! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

জাহাঙ্গীরনগর ঘুরে: ভর্তা-ভাতের বেজায় সুনাম। তবে নামটি বিশ্বজোড়া- কেএফসি-তে।



চমকাতেই হবে! কেএফসিতে ভর্তা-ভাত!

কেনো নয়! কাদের ফুড সেন্টারে (কেএফসি) আপনি ভর্তা-ভাত তো পাবেনই। পাবেন মাছ-ভাতও। মুরগির সালুনেও খেতে পারবেন ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত দিয়ে। আর পাবেন ফ্রায়েড চিকেন। এরপরতো নাম নিয়ে আর আপত্তি থাকার কথা নয়!
আসলে নেইও। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই কেএফসির জুড়ি নেই। পছন্দ সবার। সবাই খায়। কাদের ফুড সেন্টারের কাদেরের মত, কব্জি চুবিয়েই খায় সবাই।
 
কেনো খায়? সে প্রশ্নে পাতলা শ্মশ্রুতে শখের হাত বুলিয়ে কাদের বললেন, ‘তৃপ্তি পায় তাই খায়। ’
 
প্রকৃতির রূপ-রসে ভরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় আরও প্রায় ডজনখানেক দোকান-পাটের মাঝখানে কাদের ফুড সেন্টারের (কেএফসি) একটা জ্বলজ্বলে সাইনবোর্ড।  
সকাল সাড়ে ১১টার দিকে পৌঁছে দেখা গেলো দুপুরের খাবার পরিবেশনের জন্য দোকান প্রস্তুত করা হচ্ছে। সামনেই থরে থরে সাজানো ভর্তার পাত্রগুলো। ওগুলোই বড় আকর্ষণ। ইলিশ ভর্তা, শুটকি ভর্তা, আলু ভর্তা, সিম-বরবটি ভর্তা, মরিচ ভর্তা, ডাল ভর্তা, কালিজিরা ভর্তা, সর্ষে ভর্তা। এমন অন্তত ১২ পদ।
 
ভেতরের টেবিলে পাঁচ পদের রান্না তৈরি হয়ে এসেছে। ডিম-ডাল-ভাজি ইত্যাদি। ভেতরে হেঁসেলখানায় ব্যস্ত রেনু বেগম। তার সঙ্গেও রয়েছেন জনাপাঁচেক কর্মী। রান্না হচ্ছে হরেক পদের মাছ, মাংস।  

এই রেনু বেগম কাদেরের স্ত্রী। তারা স্বামী-স্ত্রী মিলেই গত ১৫ বছর ধরে চালাচ্ছেন এই হোটেল।  
স্ত্রীর প্রতি কাদেরের কৃতজ্ঞতা আছে। সুনামের ভাগ দিতেও কার্পণ্য নেই।
 
জানালেন, যে খাবারের এতো সুনাম তার প্রধান রাঁধুনী রেনু বেগমই। কাদের নিজেও একজন পাক্কা পাঁচক। ফলে দু’জনের হাতের যশে গোটা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই যেনো মৌ মৌ করে কেএফসির রান্নার গন্ধ।  

তেমনটা জানালেন ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরাও। সবারই পছন্দ কাদের ফুড সেন্টারের খাবার।    
 
দুই সারিতে গোটা বিশেক টেবিল। কাদের বললেন, সকালের নাস্তার পর্ব চলে বেলা ১১টা অবধি। এরপর দুপুরের খাবারের প্রস্তুতি। ১২টার দিকেই ছেলে-মেয়েরা খেতে আসতে শুরু করে। চলে বিকেল চারটা পর্যন্ত। আর বিকেলে থাকবে নাস্তার আয়োজন।  
বিকেলে আসল রূপ পায় কেএফসি। সেখানে ফ্রায়েড চিকেনও পাওয়া যায়। কাদের হেসে বললেন, ওইরকমতো আর হয় না। তবে আমরাও ‘ফ্রাই চিকেন’ বানাই। সবাই মজা করে খায়।
 
কেএফসির খাবারের সুনাম যত, দাম তত বেশি না। কাদের জানালেন, ছাত্র-ছাত্রীরা প্রধান ক্রেতা। দাম বেশি রাখলে চলে না। গোড়ার দিকে সবচেয়ে ভালো খাবার হিসেবে ছাত্র-ছাত্রীরাই নির্ধারণ করে দিয়েছিলো কেএফসিতে দাম পাঁচ টাকা বেশি হবে। কিন্তু কিছুদিন পর কাদের নিজেই দাম অন্য দোকানগুলোর সমান করে নেন।
 
বললেন, ‘ব্যবসার একটা হিসাব আছে। এক জায়গায় বেশি দাম রাখলে চলে না। ’ 

কেএফসির নামটি কিন্তু কেএফসি ছিলো না। প্রথমে এর নাম ছিলো মদিনা হোটেল। সেভাবেই চলছিলো এক দুই বছর। তখনই রান্নার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের প্রিয় হয়ে ওঠে কাদের ও রেনুর রান্না। তারা দলে দলে সেই ছোট্ট ছাপড়া ছনের হোটেলে খেতে আসতো। তারই কোনো একটা দিনে ইংরেজি বিভাগের একদল ছাত্র-ছাত্রী এসে নামটা পাল্টে দেওয়ার কথা বললো। নাম হবে কাদের ফুড সেন্টার, সংক্ষেপে কেএফসি।  
প্রথমে মুখে মুখে চালু। এক পর্যায়ে সে নামটাই এত ছড়ালো যে, কাদের নিজেও পাল্টে দিলেন এর সাইনবোর্ড।
 
সেই থেকে কেএফসি সুনামের সঙ্গে চলছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ব্র্যান্ড নেম এখন বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই ক্যাম্পাসে ঘুরতে গেলে কেএফসির খোঁজ করেন।
 
ফেসবুকেও কেএফসির নামে পেজ খোলা হয়েছে। সেখান থেকেও অনেকে জানতে পারেন।
 
কেন্টাকি ফ্রায়েড চিকেনের বাংলাদেশি ফ্রাঞ্চাইজিদের জন্য দুঃসংবাদ বটে!
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০১৬
এমএমকে/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।