ঢাকা: রাজধানীর মোহম্মদপুর এলাকার বছিলা রোড। ৬১৫/৫ নং হোল্ডিংয়ের প্রশস্ত গলি।
মাটির পাত্র হাতের তালুর আকারে ভেঙে (খোলাকুচি) দিয়ে কোর্ট কেটে সকালেই খেলতে নেমেছে পপি আক্তার (১০), সাথী আক্তার (১১), ফেরদৌস মিয়া (৯) ও মো. আব্দুর রহিম (১২)।
গ্রামীণ এ খেলাটি ‘কুত কুত খেলা’ হিসেবে পরিচিত। ১০ ফুট লম্বা ও ৬ ফুট চওড়া কোর্টে বর্গাকার ঘর থাকে ৭টি। মাথার উপর দিয়ে পেছন দিকে খোলাকুচি ছুড়ে মারতে হবে। ঘরের ভেতরে পড়লে বাঁচা (কোয়ালিফাইড), না পড়লে মরা (ডিসকোয়ালিফাইড)।
কোয়ালিফাই হলে খেলার সুযোগ পাওয়া যাবে। তখন এক পা শূন্যে রেখে আরেক পা দিয়ে ঠেলে খোলাকুচিটি শেষ ঘর পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে। আর মুখে ছড়া কাটতে হবে-কুত কুত তাইয়া/ বাবলা বাজাইয়া/ বাবলার সুরে/ মৌমাছি উড়ে...
এক নিঃশ্বাসে বলতে হবে। দম ফুরিয়ে গেলে খেলা ‘পচা’-মানে শেষ! আরেকজনকে খেলতে দিয়ে নিজেকে সরে যেতে হবে। আর যদি দম রেখে চাড়াটাকে শেষ ঘর পযর্ন্ত নেওয়া যায়, তাহলে বাকি তিন জন গেম খাবে!
হ্যাপি-সাথী-ফেরদৌস-রহিম যখন এই খেলায় মত্ত, তখন সকাল ৯টা। অন্যান্য দিন তারা এ সময় স্কুলে থাকে। কিন্তু শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় বাসার সামনে কোর্ট কেটে খেলায় মেতে উঠেছে।
খেলার সময় উচ্চারিত ছড়াগুলো দিয়ে ঠিক কী বোঝাতে চাচ্ছে ওরা জানতে চাইলে পপি আক্তার সহজ করেই বুঝিয়ে দেয়- এসব তারা খেলতে খেলতে শিখেছে। মানে জানে না। শুনে শুনে মুখস্ত করেছে। সাথী আক্তার শুনিয়ে দিলো আরেকটি, ‘মক্কা মদিনা/ চোখে দেখি না/ দুই চোখ অন্ধ/ ফুলের গন্ধ...
এর কোনো কিছুর মানেই ওদের জানা নেই। কেবল মনের আনন্দে মুখস্ত করেছে। আর এখন খেলায় জেতার জন্য এক দমে পড়ে যাচ্ছে!
তারা জানালো, শুক্রবার স্কুল বন্ধ থাকে। বাবা-মাও বাসায় থাকেন। তাই বাসার সামনে খেলার সুযোগ পায় তারা। শুধু কুত কুত নয়, বউ ছি, চোর পুলিশ, পাতা লুকানো, কপালে টিপসহ আরো অনেক খেলা তারা নিয়মিত খেলে।
এখান থেকে একটু দূরেই রায়ের বাজার কবরস্থান প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য নির্ধারিত স্থান। সেখানে আন-নূর ইসলামী নৈশ মাদ্রাসার ৬ জন ছাত্র ফুটবল খেলছিলো।
মাদ্রাসার হেফজ্ শাখার ছাত্র জুবায়ের আহমেদ (১০), শাহাদাত হোসেন (১১), ইয়াহিয়া (১০), নাজারা শাখার গোলাম রাব্বি (৯), মোকসেদুর রহমান (১০) ও সজিবুল ইসলাম (১১) দুই দলে ভাগ হয়ে শিশিরভেজা সকালে কাশবনে ঘেরা মাঠে ফুটবল খেলছে।
কড়া শাসন ও নিয়মে বাঁধা কওমি মাদ্রাসার এসব শিশু আর ১০টি সাধারণ শিশুর মতো চিত্ত বিনোদনের সুযোগ পায় না। বিনোদন বলতে ওরা খেলাধূলাকেই বোঝে। তাই প্রতিদিন বিকেলে (বাদ আসর) ১৫/২০ মিনিটের জন্য এই মাঠেই খেলার সুযোগ পায়।
তবে আজ শুক্রবার ছুটি দিন হওয়ায় সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ৯টা পযর্ন্ত খেলার অনুমতি পেয়েছে জুবায়ের, শাহাদাত, ইয়াহিয়া, রাব্বি, মোকসেদ ও সজিবরা। তাই মনের আনন্দে ঘাম ঝরিয়ে ফুটবল খেলায় মেতে উঠেছে ওরা।
শীত মৌসুমে এই মাঠেই ব্যাডমিন্টন খেলার সুযোগ পায় আন-নূর ইসলামিয়া নৈশ মাদ্রাসার ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। তবে বাস্তবায়নাধীন রায়েরবাজার কবরস্থান প্রকল্প কর্তৃপক্ষ এই মাঠে বড়দের খেলার অনুমতি দেয় না। মাঠ সংলগ্ন মাদ্রাসার ছাত্ররাই কেবল এখানে খেলার সুযোগ পায়।
পুরো বছিলা এলাকায় আর কোনো খেলার মাঠ দেখা যায়নি। কয়েকজন অভিভাবককে দেখা গেলো, বাচ্চাদের নিয়ে মূল সড়কে সাইকেল চালানো শেখাচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৬
এজেড/এটি