ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

সবুজ আবাসস্থলে চন্দনা টিয়ার লুকোচুরি

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৬
সবুজ আবাসস্থলে চন্দনা টিয়ার লুকোচুরি ছবি: আরিফ জাহান

শতবর্ষী মেহগনি গাছ। গাছের গোড়া থেকে সামান্য ওপরে সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে একটি সাইনবোর্ড। পাশেই রয়েছে একটি ফুলবাগান।

শাজাহানপুর (বগুড়া) ডেমাজানী থেকে ফিরে: শতবর্ষী মেহগনি গাছ। গাছের গোড়া থেকে সামান্য ওপরে সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে একটি সাইনবোর্ড।

পাশেই রয়েছে একটি ফুলবাগান।

সেখানে দাঁড়িয়ে আছে কদম গাছ। তার বুকেও অনুরূপ সাইনবোর্ড। এছাড়া বট, কড়ি, কাঁঠালসহ সেই মেহগনি ঘিরে রয়েছে আরও কিছু গাছপালা।

গাছের পাতায়-পাতায় শোভা পাচ্ছিলো গাঢ় সবুজ রঙ। চোখের দৃষ্টি সীমাকে ছাপিয়েও যেন তরতর করে ওপরে বয়ে উঠেছে শতবর্ষী মেহগনির ডালপালা। সেই ডালপালার সবুজ পাতার আড়ালে লুকোচুরিতে ব্যস্ত ছিলো বিপন্ন প্রায় চনন্দা টিয়া পাখি। যার বৈজ্ঞানিক নাম Alexadrine Parakeet।  
তখন সকাল ৮টার মত বাজে। শেষ পর্যন্ত বাংলানিউজের ক্যামেরায় ধরা দিলো কয়েকটি চনন্দা টিয়া। বহু কষ্টে চোখে পড়লো সবুজ আবাসস্থলে থাকা চন্দনা টিয়ার ‘ফুরুত-ফারুত’ করে উড়ে গিয়ে এডালে-ওডালে আশ্রয় নেওয়ার দৃশ্য। প্রায় ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পর সেই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করা সম্ভব হয়।

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলা সদর থেকে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক ধরে কয়েক কিলোমিটার দক্ষিণে গেলে আড়িয়া বাজার। সেখান থেকে পাকা সড়ক হয়ে পূর্বে সামান্য পথ পাড়ি দিলে ডেমাজানীতে পৌঁছা যায়।
 
এই সামান্য পথের মাঝখানে একটি সেতু পড়বে। সড়কের দু’পাশ দিয়ে চোখে পড়বে অসংখ্য গাছপালা ও আবাদি জমি। সবুজবেষ্টিত পরিবেশ যে কাউকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট করবে। চন্দনা টিয়ার আবাসস্থলখ্যাত শতবর্ষী এই মেহগনি গাছটি বৃটিশ শাসক বলিহার রাজার পুরনো পরিত্যক্ত কাচারিবাড়ী ডেমাজানী এলাকায় অবস্থিত। বিলুপ্তপ্রায় পাখি নিয়ে গবেষণার কাজ করেন বগুড়া সরকারি শাহ সুলতান কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এস এম ইকবাল। ওয়াইল্ড লাইফ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট সেভ টিম (ওয়েস্ট) পরিবেশবাদী সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক তিনি।  
 
২০১০ সালের কথা। বিরল প্রজাতির এ চন্দনা টিয়া প্রথমে তার নজরে পড়ে। এরপর তিনি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। অভয়ারণ্য সৃষ্টির লক্ষ্যে গাছে সাঁটিয়ে দেন সাইনবোর্ড। যেখানে লেখা- ‘চন্দনা টিয়া বাংলাদেশের মহাবিপন্ন প্রায় পাখি। এদের সংরক্ষণ করা আমাদের সবার দায়িত্ব। ’

এস এম ইকবাল বাংলানিউজকে জানান, বিরল প্রজাতির চনন্দা টিয়া সংরক্ষণ ও বংশ বৃদ্ধিতে সাধ্য মতো কাজ করে যাচ্ছেন। প্রজনন বৃদ্ধি করতে কাঠের গুড়ির তৈরি ৩০টি কৃত্রিম প্রজনন আবাসস্থল গাছে ঝুলিয়ে দিয়েছেন। স্থানীয়দের তার সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন। তারাও নিজ দায়িত্বে পাখিগুলো দেখভাল করছেন। স্থানীয় বাসিন্দা বৃদ্ধ আব্দুর রাজ্জাক, সাইকেল গ্যারেজ মালিক দিলীপ, শফিকুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে জানান, এই পাখি সম্পর্কে আমরা স্যারের কাছ থেকে জানতে পেরেছি। পাখির আবাসস্থল দেখতে স্যার প্রায়ই এ গ্রামে আসেন। স্যারের পরামর্শে গ্রামের লোকজন পাখিগুলো দেখাশোনা করে থাকেন।

লম্বা লেজওয়ালা পাখি চন্দনা টিয়া। দেখতে সবুজ। কাঁধে রয়েছে মেরুন পট্টি। ছেলে পাখি দেখতে মেয়ে পাখির চেয়ে আকারে বড়। গলার পেছনে ও ঘাড়ের পাশে লাল-গোলাপি বর্ণের বলয় রয়েছে। ডানার পালক ও ঢাকনির মধ্যে পরিষ্কার লাল পট্টি চোখে পড়বে। ইকবাল বাংলানিউজকে জানান, ধান, গম, ভুট্টা, পাকা মরিচ, খেজুর, বুনো ফল, কামরাঙা, ফুলের মিষ্টি রস, জামরুল, ফুলের কচি অংশ সাধারণত চনন্দা টিয়ার অন্যতম খাবার।

ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাস এদের প্রজনন মৌসুম। তখন একেক জোড়া দম্পতি ৩ থেকে ৪টি করে ডিম দেয়। উনিশ/বিশ দিন পর সেই ডিম থেকে ছানা জন্ম নেয় বলেও জানান পরিবেশবাদী সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক এস এম ইকবাল।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৬
এমবিএইচ/টিআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।