আট বছর আগের এই স্বপ্নভঙ্গের কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেললো ১৬ বছরের কিশোর রাব্বি। বাড়ি কুমিল্লার লাকসামে।
ট্রেন হয়তো হাত-পা কেড়ে নিয়েছে রাব্বির, কিন্তু কেড়ে নিতে পারেনি তার মনোবল। যে অসীম মনোবলের জোরে তেজগাঁও কলেজের সামনের একটি পার্ককে ক্রিকেটীয় দুরন্তপনায় মেতে থাকতে দেখা গেলো তাকে।
হাত-পা নেই বলে ভিক্ষা করতে হয় রাব্বিকে। জানালো, ‘পঙ্গু’ বলে তাকে কেউ কাজ দেয় না। সেজন্যই ‘লজ্জার’ হলেও এ পথ বেছে নিয়েছে সে। কিন্তু এর পেছনেও আছে তার দায়িত্ববোধের গল্প। রাব্বির আরও এক ভাই এবং এক বোন আছে। ভাইটি ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ে। ৩ বছর আগে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান মা। আবার বিয়ে করে দায়িত্বটা ভুলে যান বাবা। তাই ছোট ভাই ও বোনকে মানুষ করতে ‘কিছু একটা’ করতে ঢাকায় ওঠে। কিন্তু কোনো কাজ পায় না, শেষমেষ বাধ্য হয় ভিক্ষেবৃত্তিতে নামতে।
হুইল চেয়ারে ঘুরে ঘুরে প্রতিদিন ভিক্ষা করে তার যা আসে তার বেশিরভাগই বাড়িতে পাঠাতে হয়, সেখানে বাবা আর সৎ মায়ের কাছে রেখে ভাই-বোনদের মানুষ করতে চাইছে রাব্বি।
স্বপ্ন ছিলো তারও। পড়শীদের বাড়িতে, দোকানে টেলিভিশনে ক্রিকেট খেলা দেখে তার মন চাইতো, সেও একদিন যদি এভাবে খেলতে পারতো, সবাই তাকে টিভিতে দেখতো। কিন্তু সে স্বপ্নে যে ভঙ্গ ধরালো ঘাতক ট্রেন। রাব্বি বলছিলো, “জীবনে স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে আমি নামজাদা ক্রিকেটার হবো। কিন্তু নিয়তি আমাকে রাস্তার ভিক্ষুক বানিয়ে দিলো। ”
স্বপ্ন হয়তো ভেঙেছে, কিন্তু ক্রিকেটের নেশা কাটাতে পারেনি ঘাতক ট্রেন। তাই তো সময়-সুযোগ হলেই এই পার্কে বন্ধুদের নিয়ে এসে ক্রিকেটীয় দুরন্তপনায় মাতে রাব্বি।
রাব্বি চায় এমন কোনো উপায়, যাতে তার ভিক্ষা করতে না হয়। কিন্তু কে বের করবে সে উপায়?
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৭
এইচএ/