হঠাৎ গাছ থেকে একটা গোলাপ ছিড়ে প্রিয়তমার হাতে তুলে দিল প্রেমিক। চোখে তার কবিতার ভাষা, ‘সেদিন তুমি একটি গোলাপ চেয়েছিলে/তোমাকে একটি লাল গোলাপ দিয়ে বলেছিলাম, “ভালোবাসি”/ তুমি জিজ্ঞেস করেছিলে, “গোলাপ এত লাল হয়?” আমি বলেছিলাম, “এটি গোলাপ নয়, ব্লোটিং পেপারে শুষে রক্ত এনেছি আমি”।
প্রেমিকের এমন আহ্বানে সাড়া দিয়ে মৃদু হাসিতে গোলাপ গ্রহণ করলো প্রেমিকা। গোলাপ দিয়ে যেন পূর্ণতা পেল তাদের ভালোবাসা।
রোমান্টিক এ দৃশ্য সাভারের বেরুলিয়ার সাদুল্লাপুরের মো. শাহজাহানের গোলাপ বাগানের। এই বাগানে গোলাপের মোহনীয়তা দেখতে ছুটে আসেন প্রেমিক-প্রেমিকারা।
১৪ ফেব্রুয়ারি ‘বিশ্ব ভালোবাসা’ দিবস উপলক্ষে ওই বাগানে ভিড় করছেন প্রেমিক যুগলরা। গোলাপ বাগানে শাড়ি-পাঞ্জাবি পরে প্রিয়জনের হাত ধরে এসেছেন তারা। প্রেমিকেরা এ সুযোগটাও লুফে নিচ্ছেন প্রেমিকার কাছে প্রেম নিবেদনের জন্য।
আলাপ হলো গোলাপ বাগানে আসা এক যুগলের কাছে। প্রেমিকের নাম অরণ্য। বললেন, ‘গোলাপ বাগানের কথা অনেক শুনেছি। ওকে (প্রেমিকা) নিয়ে দেখতে আসার ইচ্ছে ছিলো। তাই আসা। এখানে আসার আরেকটি কারণ হলো গাছ থেকে ১শ লাল গোলাপ ওর হাতে তুলে দেওয়া। ’
অরণ্যের প্রেয়সী লাজে যেন নুইয়ে পড়েন। বললেন, ‘থাক এত বেশি বেশি বলতে হবে না’। চোখে পড়লো আরেক জুটিকে। সবে ঘর বেঁধেছেন তারা। ফুলের রানী গোলাপের দেশে এসে মনের রানীকে এক মুঠো ভালোবাসা উপহার দেওয়ার আনন্দ মিস করতে চান না তারাও।
ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে এমন অসংখ্য যুগলের মেলা দেখেন ফুলচাষী আবুল হোসেন। বললেন, ‘প্রতিদিনই কেউ না কেউ আসতাছে। সামনে ভালোবাসার দিন। মাঠ থাইকা গোলাপ তুইলা মনের মানুষরে দেওনের লাইগা। তয় আইজ কাল দু’দিন বেশি মানুষ আইবো। ’
‘এমনও দিন হয় ভালোবাসার মানুষের লাইগা ৫শ গোলাপও কিইন্না লইয়া যায়গা কেউ কেই’ যোগ করলেন আবুল।
এদিকে ঘরনী মিলাকে খুশি করতে ফুলের রিং কিনতে ব্যস্ত স্বামী রাসেল। ফুলচাষী আবুল হোসেনকে প্রশ্ন করছিলেন তিনি, ‘ফুলের রিং বানিয়ে দিতে কত নেবেন?’ ফুলচাষী একদাম হাঁকলেন ৪শ টাকা। ভালোবাসা নাকি দাম দিয়ে কেনা যায় না। প্রিয়জনের আবদার মেটাতে ৪শ টাকায় রাজী হয়ে গেলেন রাসেল।
বাংলানিউজকে তিনি জানালেন, ‘বিয়ের পর প্রথম ভালোবাসা দিবস পেলাম। কযেকদিন ধরে মিলা বলছিলো গোলাপ বাগানে আসবে। ওর আবদার রাখতেই এলাম। গোলাপের এ সৌন্দর্য সত্যিই অসাধারণ। ’
প্রিয়জনের সঙ্গে এসে লাল গোলাপের এই রূপ দেখে ভীষণ ভালো লাগছে মিলার। জানালেন, ‘ওর এত ব্যস্ততার মধ্যেও প্রথম ভালোবাসা দিবসে এতো বড় উপহার পাবো ভাবিনি। খুব ভালো লাগছে এখানে এসে। ’
শুধু এই বাগানেই নয়, চারপাশের বাগানগুলোতেও চোখে পড়লো এমন দৃশ্য। একে তো গ্রামের সবুজ মায়া, তার সঙ্গে গোলাপের মহিমা—সব মিলিয়ে বিরুলিয়া যেন রূপকথার রাজ্য। গোলাপ বাগানের এমন সব দৃশ্য দেখেই হয়তো কবি লিখেছেন- “তুমি আমার বনলতা সেন, আমার শেষের কবিতা/ হৃদয়ের ক্যানভাসে আঁক/মোনালিসা,তোমার ছবিটা!/ আজিকার যুগে এ সবকিছুই, পাগলের প্রলাপ/ ভালোবাসিতে পারি বন্ধু, আনো যদি লাল গোলাপ”।
বাংলাদেশ সময়: ১০২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৭
জেডএফ/আরআর/এইচএ/