হঠাৎ করেই ফুলের দাম চারগুণ হওয়ার কারণ জানতে চাইলে রসিকতার ছলে তিনি জানালেন, ভালোবাসা আইছে না। তাই ৩ টাকার ভালোবাসা এখন ১৩ টাকায় বেচতাছি।
এই ফুল বিক্রেতা হেসে আরও বললেন, আরে, বসন্ত, ভালোবাসা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি তিনডাই তো সামনে। আর হেই দিনগুলির লাইগা আমরা অপেক্ষা করি। এসময় ফুল বেইচা সারা বছরের ক্ষতি পোষায়ে লই- যোগ করলেন তিনি।
কথা হচ্ছিল সাভারের বিরুলিয়ার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের এই ফুলচাষির সঙ্গে। আসছে ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে দু’দিন ধরে ব্যস্ততা বেড়ে গেছে তার। সকাল থেকেই লেগে গেছেন গোলাপ ফুল তুলতে। বাছাই করে আধফোঁটা সুন্দর গোলাপগুলো তুলছিলেন তিনি। বললেন, চারদিন আগে ৬ আটি (৩শ পিস গোলাপ) ফুল বিক্রি করছি ৫শ থাইকা ৭শ টাকায়। আর কাইলকা বিক্রি করছি ৩২শ টাকায়।
বছরের এসময় বেশি দামে ফুল কিনতে একটুও কার্পণ্য করেন না খুচরা ব্যবসায়ীরা। কারণ তারাও জানেন প্রিয়তমার হাতে ভালোবাসার গোলাপটি তুলে দিতে পকেটের দিকে তাকাবেন না কোনো প্রেমিকই। আর এই ভালোবাসায় যেন বিরুলিয়ার হাজারো গোলাপচাষির ভাগ্য খুলে দিয়েছে। সেখানকার গোলাপচাষিরা সচ্ছলতার মুখ দেখছেন।
সাদুল্লাপুরের সব থেকে বড় ফুল বাগানের মালিক শাহজাহান মিয়ার ছেলে আবুল হোসেন। তার বাগানে গিয়ে দেখা গেল একাধিক কর্মচারী গাছ থেকে গোলাপ তুলছেন। আর সবার মুখে স্বস্তির ছাপ। তারও যেন অপেক্ষায় আছেন ভালোবাসা দিবসের।
১৪ ও ২১ ফেব্রুয়ারিতে প্রায় ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করবেন আবুল হোসেন। তিনি বলেন, ফুল বেইচা সারা বছর ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা লাভ হয়। যার সিংহভাগই বিক্রি হয় ভালোবাসা দিবসে। সেজন্যই এ দিবসটির জন্য অপেক্ষায় থাকি।
আরেক ফুলচাষি আব্দুস সবুর জানান, আজকে আমরা ৩শ ফুল বেচতাছি ১২শ টাকায়। অথচ গেল বৃহস্পতিবার ৫শ টাকাতেও ৩শ ফুল নিতে চায়নি ব্যবসায়ীরা।
তিনি আরও বলেন, এমনও সময় আসে যে সময়ে ফুল ব্যবসায়ীগো কাছে লইয়া গেলে দাম না থাকায় ফালাইয়া রাইখা চইল্যা আহন লাগে। অনেক সময় ময়লা হইবো দেইখা দোকানের সামনে ফুল রাখতেই দেয় না ব্যবসায়ীরা। ওসময় পকেটের টাকা দিয়া বাড়িতে আহন লাগে। তাই সারা বছরের লাভ উইঠ্যা আসে এই ফেব্রুয়ারি মাসেই।
তবে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসেও ফুলের ভালো দাম পান বলে জানান এই ফুলচাষি।
সেখানে ফুল কিনতে এসেছেন ফুল ব্যবসায়ী সালাম মিয়া। তিনি বলেন, ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে গোলাপের দাম বেড়ে যায়। আমরাও কিনি। কারণ যে গোলাপ আমরা ১০ থেকে ১২ টাকায় কিনতে পারি, সে গোলাপ রাজধানীতে গিয়ে ৩০ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি করি। আমাদেরও লাভ থাকে। বছরের এই সময়টাই আমরা ব্যবসা করি।
তাহলে তো ফুলচাষিরা তাদের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই পাচ্ছেন। আমাদের এ ফুলগুলো কিনে নিয়ে যেতে হয় তার খরচ আছে, দোকান ভাড়া আছে। সব মিলিয়ে অনেক টাকায় চলে যায়। তাছাড়া সারা বছর আমাদের লাভ না হলেও দোকান ভাড়া দিতে হয়।
ভালোবাসা প্রকাশ করতে প্রিয়জনকে গোলাপ উপহার দেওয়া হয়। এ কারণেই বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি গোলাপের চাহিদা থাকে তুলনামূলক বেশি। যুগলের হাতে সুন্দর ফুলটি পৌঁছে দিতে গোলাপ গাছের পরিচর্যাও বাড়িয়ে দেন চাষিরা। তাই শুধু প্রেমিক-প্রেমিকাই নন, এ দিনের অপেক্ষায় প্রহর গুণতে থাকেন চাষিরাও।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৭
জেডএফ/আরআর/এসএইচ