ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

বাঁশিই বাঁচিয়ে রেখেছে আব্দুল মালেকের প্রেম, সংসার

রীনা আকতার তুলি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৭
বাঁশিই বাঁচিয়ে রেখেছে আব্দুল মালেকের প্রেম, সংসার বাঁশিওয়ালা আব্দুল মালেক/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বাঁশির সুরের মায়ায় ১৭ বছর আগে আব্দুল মালেকের সঙ্গী হয়েছিলেন সেলিনা আক্তার। সুখেই কেটেছে বছর কয়েক। তারপর ব্যবসায় লোকসান দিয়ে সহায় সম্বল হারিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে রাস্তায় দাঁড়াতে হয়েছে মালেককে। কিন্তু সঙ্গ ছাড়েননি সেলিনা। তাই স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়েই একদিন ময়মনসিংহ থেকে পাড়ি জমান রাজধানীতে। স্ত্রীর সঙ্গে আদর যত্নে রাখেন তার আড়বাঁশিটিও। এই আড়বাঁশিই আজ তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। বেঁচেছে সংসার।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেট এলকায় রাস্তায় দাঁড়িয়েই কথা হয় বাঁশিওয়ালা আব্দুল মালেকের সঙ্গে।

আব্দুল মালেক জানান, ময়মনসিংহের ধোবাউড়া থানার রঘুরামপুরে তার বাড়ি।

ধানের মিল চালিয়ে এক সময় বড় সংসারেও অনেক উপার্জন থাকতো।

‘‘কিন্তু কে জানতো ধানের কল নষ্ট হবে। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হবে। এভাবে চালাতে চালাতে সব শেষ হয়ে গেছে। তারপর স্ত্রী-সন্তানসহ ঢাকায় চলে আসি। এখন বাঁশি বাজিয়ে আর বিক্রি করেই চলে ৮জনের সংসার। ’’

বাঁশি বাজানো শেখার কথা জানতে চাইলে বেশ আবেগী হয়ে পড়েন আব্দুল মালেক। বলেন, ‘‘বাঁশি বাজানো নিজেই শিখেছি। ছোটবেলায় খুব শখ করে, চেষ্টা করে শিখে ফেলেছি। তবে বাঁশি বাজিয়ে তা বিক্রি করার জন্য শিখিনি। ’’
বাঁশিওয়ালা আব্দুল মালেক/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
তার খুব ভালোলাগা থেকে যেমন বাঁশি বাজানো শেখা, তেমনি স্ত্রী সেলিনা আক্তারও বাঁশি শুনতে খুব ভালোবাসেন।

আব্দুল মালেক জানান, তার বাঁশি শুনেই প্রেমে পড়েছিলেন সেলিনা। বাঁশির সুর সেলিনার ভালো লাগায় তার সঙ্গে ১৭ বছর আগে সখ্য গড়ে ওঠে। অবসরে এখন বাঁশি বাজিয়ে ও শুনে আগের সেই দিনগুলোর কথা মনে করেন দু’জনে।

সংসারের দু:খকষ্টের কথা তুলে ধরে আব্দুল মালেক বাংলানিউজকে বলেন, তিন মেয়ে এক ছেলে তাদের। দুই মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে তারা দুজন থাকেন ঢাকায়। বাবা-মা থাকেন ময়মনসিংহে। বাবা-মার সঙ্গেই থাকে বড় মেয়ে ১৭ বছরের ফারজানা।

‘‘দুই মেয়ে সাবনুর ও মালা, ছেলে শাহ আলম এবং স্ত্রী সেলিনা আক্তারকে নিয়ে থাকি রামপুরার একটি টিনশেড বাসায়। ভাড়া তিন হাজার ৮০০ টাকা। বাঁশি বিক্রির টাকা দিয়ে ভাড়িভাড়া ছাড়াও সব খরচ চলে। ’’

সারাদিন কত টাকার বাঁশি বিক্রি হয় জানতে চাইলে আব্দুল মালেক বলেন, ৫০০ টাকার বাঁশি প্রতিদিন বিক্রি হয়। তাতে যা লাভ হয় তাতে কোনো রকমে সংসার চলে। তবে কোনো কোনো দিন কমও হয়। তাতে অখুশি নন মালেক। বলেন, ‘‘বাঁশিই তো আমাকে আর আমার সংসার বাঁচিয়ে রেছে। দু’বেলা ভাত আর ঘরের মানুষের ভালোবাসার কমতি হয় না। ’’

তিন রকমের বাঁশি বিক্রি করেন আব্দুল মালেক। আড়বাঁশি, মোহনবাশি ও মুখবাঁশি। তবে আড়বাঁশি বাজিয়ে লোক জড়ো করেন। অথবা বাঁশি বাজাতে বাজাতেই পথ চলতে থাকেন। যার প্রয়োজন সে ডেকে তার কাছ থেকে বাশি কেনেন।

ফার্মগেটের রাস্তায় হানিফের চায়ের দোকানের কাছে বাঁশি বাজানোর সময় অনেকেই তার বাঁশি বাজানো শোনার জন্য ভিড় করে। কেউ কেউ কেনেও। এদের মধ্যে রাজবাড়ির সবুজ সরকার ৫০ টাকা দিয়ে একটি বাঁশি কেনেন। ফরিদপুরের বালিয়া কান্দি ডিগ্রি কলেজের বিজনেস স্টাডিজ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (বিএসএস) তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সবুজ সরকার অবসর পেলেই খোল বাজান। তবে বাঁশি বাজানো শেখার ইচ্ছে থেকে বাঁশি কেনেন আব্দুল মালেকের কাছ থেকে।

আব্দুল মালেক বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘এর মতো অনেক ছাত্রই বাঁশি কেনে। এরাই আমার ভালো ক্রেতা। ’’

বাংলাদেশ সময়:০৯১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৭
আরএটি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।