চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলের প্রতিটি বাগানসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের চা বাগানের রূপ এখন এমন। সম্মিলিত সবুজের অপূর্ব জেগে ওঠা!
কিছুদিন আগে এই চা গাছের মাথা ছাঁটাই (প্রুনিং) করা হয়েছিল।
হঠাৎ বৃষ্টির দখলে পড়ে একসময় স্বস্তি ফিরে পায় চা গাছগুলো। সেই বৃষ্টির ফোঁটায় ফোঁটায় উর্বর হয় প্রকৃতি। সেই উর্বরতার দিগন্তবিস্তৃত উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে হাসতে থাকে দু’টি পাতা একটি কুঁড়ির দল।
চা বাগানের পথ ধরে এগোলোই এখন চোখে পড়ে ঘনসবুজের ছড়াছড়ি। পাহাড়ি টিলার ধূসর মাটির বুক থেকে সেই সবুজেরা যেন আজ সদলবলে প্রস্ফুটিত।
বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) সকাল সাড়ে ৭টায় ভাড়াউড়া চা বাগানে গিয়ে দেখা গেলো সেই কুঁড়িদের গায়ে জমেছে শিশিরকণা। শিশিরের জলজ পরশে ঘনসবুজ পাতাগুলো গভীর সৌন্দর্যে রাঙা হয়ে আছে। সকালের সূর্যালোক তার কিরণটুকু নিয়ে এসে ভাগ বসিয়েছে তাতে।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র অবজারভার মো. হারুনুর রশীদ বাংলানিউজকে বলেন, ৬ মার্চ থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত শ্রীমঙ্গলে ৭৭ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
চা বাগানে এখন সবুজ জেগে উঠেছে। যা দৃষ্টি ও হৃদয়কে দারুণভাবে মুগ্ধ করে বলে জানান শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের এই আবওয়াবিদ।
ওই চা বাগানের ১ নম্বর সেকশনের প্রহরী টুনু বলেন, প্রায় দু’মাস আগে কাটা হয়েছে গাছগুলো। কয়েকদিন আগের বৃষ্টি পেয়ে এখন ওরা কুঁড়ি ছাড়তে শুরু করেছে।
যে চা গাছের কুঁড়িগুলো অন্যগুলোর থেকে বেশি বড় হয়ে গেছে সেগুলোকে ইতোমধ্যে তোলা হয়ে গেছে বলে জানান ওই প্রহরী।
ফুলছড়া চা বাগানের শ্রমিক পূর্ণিমা বাকতির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল – চা বাগানের নতুন কুঁড়িগুলো তোলার অনুভূতি কেমন? তিনি জানান, এটা আমাদের কাছে নতুন কিছু নয়। সব একই রকম লাগে। তবে বৃষ্টির পরে যে কুঁড়িগুলো বের হয় তা চকচকে সবুজ থাকে।
ইস্পাহানি কোম্পানির চা বাগান ‘জেরিন টি এস্টেট’ এর ম্যানেজার সেলিম রেজা বাংলানিউজকে বলেন, নতুন কুঁড়ির জন্য আমরা আকাঙ্ক্ষায় থাকি। আমরা যারা চা বাগানে কাজ করি তারা এমন আশা নিয়ে অপেক্ষায় থাকি যে কখন কুঁড়ি গজাবে, তখন গাছ সবুজ হবে।
বসন্ত এলে চারপাশের সবুজ প্রকৃতি দেখে হৃদয়ে যেভাবে দারুণ অনুভূতি হয়, ঠিক তেমনি বৃষ্টির পর চা গাছে নতুন কুঁড়িতে ভরে উঠতে দেখলে আমাদেরও হৃদয়ও গভীর আনন্দিত হয়ে উঠে। এই নতুন কুঁড়িই তো আমাদের চা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখবে।
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) সূত্র জানায়, আগাম বৃষ্টিপাত চায়ের জন্য অত্যন্ত উপকারী। চা-শিল্পের ১৬২ বছরের ইতিহাসে গত চা উৎপাদন মৌসুমে দেশে সর্বোচ্চ ৮৫.০৫ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন করে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৫৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৭
বিবিবি/এএ