পুকুর পাড়ে রাস্তার পাশেই সুপারি গাছ। খড়কুটোর একটা আঁটিও পড়ে আছে।
পেছনের দু'পায়ের ওপর ভর দিয়ে আকাশ পানে যেন তাকিয়ে আছে সোনা ব্যাঙ। ঠিক যেন সাক্ষাৎ লঙ জাম্পের অ্যাথথলেট। যে কিনা লাঠি পেরোতে শরীরকে টেনে অনেক লম্বা করে দিলো। এখন একটু সইয়ে নিচ্ছে চারপাশ।
সোনালী চামড়ার ওপর থেকেই যেন অনুমান করা যায়, শরীরের ভেতরের হৃদস্পন্দন কতো দ্রুত ওঠা নামা করছে। সোনালী চামড়ার ওপর কালো ডোরা।
এটা সোনা ব্যাঙের লাফ। যাকে গ্রাম দেশে বাউয়া ব্যাঙ বলেও ডাকা হয়।
মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে আসে 'সোনা ব্যাঙ’। পাশে দাঁড়ানো সহকর্মী জিজ্ঞাসা করেন, কি বললেন ভাই? তাকে উত্তর না দিয়ে এগিয়ে যাই একালে ব্যাঙের দুষ্প্রাপ্য এই প্রজাতির ছবি মোবাইলে ধারণের তাগিদে। বাণিজ্যিকভাবে সোনা ব্যাঙ মানুষ হাতবদল শুরু করলে দ্রুত চোখের সামনে থেকে বিদায় নিতে থাকে এই উভচর প্রাণীটি। বিশেষ করে এই ব্যাঙের পা উন্নত দেশে সুস্বাদু খাবার হিসেবেই বিবেচনা করা হয়।
মানুষজাতির অস্তিত্ব টের পেয়ে দুই লাফেই পুকুর পাড়ে নেমে গেলো সোনা ব্যাঙ। দেখে মনে হলো, এই প্রাণিটি সবসময়ই শ্বাসকষ্টে ভুগছে। গালের দুই ধারে ফুলকার দ্রুত ওঠানামা স্পষ্ট। হার্টবিট বেড়ে গেছে যেনো।
সোনা ব্যাঙটির পিঠের মেরুদণ্ড অনেক স্পষ্ট। আর শরীরের অতি উজ্জ্বল সোনালী হলুদ রঙ বলে দিচ্ছে, এখন ব্যাঙের প্রজনন মৌসুম চলছে। ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর ডাকে পুরুষ ব্যাঙকে ডাকছে নারী ব্যাঙ। ডিম ছাড়ার সময় আসবে কয়েকদিনের মধ্যেই। এরপরই পুকুরের ধার ঘেঁষে দলভেদে মনের আনন্দে খেলা করবে ব্যাঙাচির দল।
নাসিরপুরের সোনা ব্যাঙটি পুকুরের ধারে কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করে। চোখের মনি দেখা গেলে হয়তো বোঝা যেতো, কোন দিকে তাকাচ্ছে বা কি ভাবছে। কিন্তু বেশি সময় নিলো না। পানির ওপর বাতাসে দু’পা ভাসিয়ে শরীর টানটান করে মিলে গেলো পুকুরে। যেনো মাইকেল ফেলপস পুলে মিলিয়ে গেলেন ৬ ফুটের শরীরটাকে ১০ ফুট বানিয়ে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৭
এমএন/জেডএম