ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

থমকে আছে রামাবতি রহস্য

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০১৭
থমকে আছে রামাবতি রহস্য রামাবতি নগরের খোঁজে। ছবি: তৌহিদ ইসলাম

নওগাঁ: জগদ্দল মহাবিহারে  তিন বছর ধরে খনন কাজ বন্ধ থাকায় বাংলার প্রাচীন রাজধানী  রামাবতি নগরের রহস্য উন্মোচন আটকে আছে। নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার প্রাচীন এ স্থানে সর্বশেষ খনন কাজ হয় ২০১৩ সালে। তারপর আর খনন না হওয়ায় স্থানটির প্রাচীন সব নিদর্শন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা।

কেননা কবি সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিতমে উল্লেখিত রামাবতি নগরের সঙ্গে অনেক মিল পাওয়া গেছে এই জগদ্দলের।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৩ সালে বিহারে উৎখনন চালায় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ।

এটিই সবশেষ খনন। সেসময় বিহারে পাওয়া যায় বুদ্ধমূর্তিসহ প্রাচীন বাংলার অসংখ্য নিদর্শন। প্রাপ্ত নিদর্শন পর্যবেক্ষণ করে জগদ্দলকে রামাবতি নগর হিসেবে ধারণার কথা জানান গবেষকরা।

তারা বলেন, কয়েক দফা উৎখননের পর বিহারটিকে ঘিরে প্রাচীন বাংলার রাজধানী ‘রামাবতি নগরের’ ধারণাটি স্পষ্ট হয়ে এসেছে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ১৯৯৬ সালে জগদ্দল বিহারের প্রথম উৎখনন কাজ শুরু করা হয়। মাঝে কিছু দিন বন্ধ থাকে। ২০১২ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে আবারো শুরু করা হয় খনন কাজ। সবশেষ তৃতীয় পর্যায়ের উৎখনন চালানো হয় ২০১৩ সালে। চলে ২০১৪ সালের  জানুয়ারি পর্যন্ত। খননের পর জগদ্দল মহাবিহার।  ছবি: তৌহিদ ইসলাম

তৃতীয় পর্যায়ের উৎখননে তৎকালীন দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পাহাড়পুর জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মাহাবুব আলম জানান, এ পর্যন্ত উৎখননকালে মোট ৪০টি ভিক্ষু কক্ষের মধ্যে আবিষ্কার হয়েছে ৩৮টি কক্ষ। উদ্ধার করা হযেছে বিহারের ফাউন্ডেশনের গভীরতা, ফ্লোর লেভেল, ভিত্তি ও পাথর দিয়ে নির্মিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা। কক্ষগুলোর দেওয়ালের পাশে পাওয়া গেছে গ্রানাইট পাথরের তৈরি লম্বাকৃতির ১০টি স্তম্ভ। স্তম্ভগুলো ভবনের ভিত্তির চওড়া পাথরের সঙ্গে আটকানোর চিহ্ন রয়েছে। প্রতিটি কক্ষেই পাওয়া গেছে বুদ্ধমূর্তি রাখার স্থান (কুলিঙ্গ)।

তিনি জানান, বিহারের মেঝে থেকে উপরিভাগ বিভিন্ন স্তরে ২৪ থেকে ২৫ ফুট উঁচু ছিলো।

এখানে যে একটি বিশাল জনপদ ছিলো, তা কয়েকটি স্থান অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। জগদ্দলের পূর্বে নিকেশ্বর বা নিকাই শহর ও পশ্চিমে জগৎনগর নামে বিশাল জনপদ ছিলো। জগদ্দলে মোক্ষাকর, দানশীল, শুভাকর ও বিভূতিচন্দ্র নামে চারজন বৌদ্ধ পণ্ডিত থাকতেন। তিব্বতীয় ভাষায় বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ অনুবাদ করা হতো সে সময়। খননের পর জগদ্দলে পাওয়া কষ্টিপাথরের শিলালিপি।  ছবি: তৌহিদ ইসলাম

এখানে আরো উদ্ধার হয়েছে ব্রোঞ্জ ও কালো পাথরের তৈরি বুদ্ধমূর্তি। শিলালিপি, দশদিকপাল মূর্তি সম্বলিত পাত্র, কালো পাথরের তৈরি মূর্তির ভগ্নাংশ, পোড়া মাটির ফলক, অলংকার, লোহার পেরেক, লোহার ছোট মার্বেল, মাটির তৈরি পাত্রসহ অসংখ্য নিদর্শন। ওই এলাকায় আবিষ্কার হয়েছে একাধিক শানবাঁধানো ঘাট সমৃদ্ধ পুকুর, দিঘি। পাওয়া গেছে পরাক্রমশীল অভিজাত মানুষের বসবাসের চিহ্ন।

বিহারটি আকৃতিতে পদ্মফুলের পাপড়ির মতো বলে বিশেষজ্ঞরা এটিকে  জগদ্দল পদ্ম বৌদ্ধবিহার বলেও আখ্যায়িত করেছেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মিজানুর রহমান জানান, জগদ্দলে উৎখননে-অনুসন্ধানে যেসব তথ্য ও নিদর্শন পাওয়া গেছে তাতে রামাবতি নগরের ধারণা অনেকটা নিশ্চিতই হওয়া গেছে। তবে পূর্ণাঙ্গভাবে নিশ্চিত হতে গেলে বিহারটির পূর্ণাঙ্গ খনন, সংস্কার ও গবেষণা দরকার। খননের পর জগদ্দলে পাওয়া মূর্তি।  ছবি: তৌহিদ ইসলাম

তিনি আরো জানান, ইতিহাসে জগদ্দল নামে বেশ কয়েকটি স্থান পাওয়া যায়। তাই রামাবতি নগর নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। তবে নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার জগদ্দলের সঙ্গে রামাবতির যে মিল পাওয়া যায়, তাতে পূর্ণাঙ্গ খনন ও অনুসন্ধান চালানো হলে সেই বিতর্কের অবসান ঘটবে।

উৎখনন শুরুর পর দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত থাকায় বিহারের নিদর্শন হারিয়ে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ধামইরহাট এলাকার আঞ্চলিক ইতিহাসবিদ প্রফেসর শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে বিহারটি সংরক্ষণ করা দরকার। যথাযথভাবে সংসরক্ষণের অভাবে এরই মধ্যে এই বিহারের বহু মূল্যবান নিদর্শন হারিয়ে গেছে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক (বগুড়া) নাহিদ সুলতানা জানান, জগদ্দল বিহারের উৎখননের বিষয়টি নিয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর আন্তরিক। সেখানকার নিদর্শন যাতে চুরি হয়ে না যায় সে জন্য একজন পাহারাদারও নিয়োজিত রাখা হয়েছে।

শিগগিরই আবারো জগদ্দলে উৎখনন শুরু করা হবে বলেও ‍জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০১৭
জেডএম/

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।