একজন কোমলমতি শিশুর হাতে যখন বই-খাতা থাকার কথা, তখন বেদে শিশুর হাতে তুলে দেওয়া হয় সাপের বাক্স। বেরিয়ে পড়তে হয় পরিবারের আহার জোটাতে।
দিনাজপুর সদর উপজেলার মোহনপুর আত্রাই নদী সংলগ্ন এলাকায় পলিথিন ও ছেঁড়া-ফাটা কাপড় দিয়ে তৈরি অস্থায়ী বেদে পল্লীর শিশুরাও এভাবেই সরে আছে শিক্ষার আলো থেকে।
এই পল্লীর শিশু আবির হোসেনের (৭) পিতা মাহতাব বাংলানিউজকে বলেন, সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা উপার্জন করতে গ্রামগঞ্জের পাড়া-মহল্লায় ঘুরে বেড়াই। সারাদিন শেষে ফিরতে ফিরতে প্রায়ই সন্ধ্যা। কোনো কোনো দিন আমাদের সাহায্যের জন্য তাকেও নিয়ে যাই। এখন থেকেই তাকে পেশাগত সব বিষয় জানতে হবে। নইলে বড় হয়ে কি করে খাবে?
মাহতাব বলতে থাকেন, আমাদের তো স্কুলের কথা চিন্তা করাই যায় না। সারা বছর এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেড়াই। কোথাও স্থায়ীভাবে বসবাস করিনা। তাই স্কুলে ভর্তি হয়ে লাভ কি? যেমন এখানে থাকবো ছয় মাস। এখানকার কোনো স্কুলে ভর্তি করলে ছয় মাস পর চলে যেতে হবে দেশের কোন কোনো প্রান্তে। তাছাড়া দারিদ্রের কারণে আমাদের শিশুদের পড়াশুনা করানোও সম্ভব হয় না।
বেদে পল্লীর সর্দার মো. রাজন মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, কোনো অভিভাবক চায় না তার সন্তান অশিক্ষিত থাকুক। কিন্তু আমাদের যে আয় তাতে সন্তানদের পডাশুনা চালানো কঠিন। আমাদের ১৫টি পরিবারে মোট ১৮ জন শিশু রয়েছে। এদের ১২ জনেরই বয়স ৭ বছর পেরিয়েছে। তারা কেউ স্কুলে যায় না। অক্ষরজ্ঞানও নেই তাদের। যাযাবর জীবনে একেক সময় একেক স্থানে অবস্থান নেওয়ায় শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ নেই এদের।
দিনাজপুর সরকারি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান মাহতাব উদ্দিন বাংলা নিউজকে বলেন, বেদে সম্প্রদায়ের মতো যাযাবররাও দেশের নাগরিক। শিক্ষা গ্রহণ একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার। যা বেদে শিশুদের রয়েছে। এই শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০১৭
জেডএম/